ভয় দেখিয়ে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি, চিহ্নিত ১৬

চট্টগ্রামে পাইকারি বাজারে দ্বিগুণ থেকে প্রায় তিনগুণ দামে পেঁয়াজ বিক্রি না করলে ওই দোকানিদের আর পেঁয়াজ যোগান না দেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছিল একটি চক্র।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Nov 2019, 03:48 PM
Updated : 4 Nov 2019, 04:09 PM

সোমবার ও রোববার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে টানা অভিযানের পর এ খাতের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই চক্রের ১৬ জনকে চিহ্নিত করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

চক্রের চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের টেকনাফ বন্দর কেন্দ্রিক পেঁয়াজ আমদানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের কমিশন এজেন্ট এবং আড়তদাররা মিয়ানমার থেকে ৪২ টাকা দরে আনা পেঁয়াজ পাইকারী বাজারে ৯০  থেকে ১১০ টাকা দরে বিক্রি করতে বাধ্য করে আসছিল।  

ভ্রাম্যমাণ আদালতের নেতৃত্বে থাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী পরিচালক (ভূমি) মো. তৌহিদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কয়েক দফায় অভিযান পরিচালনার সময় খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা জানান টেকনাফ ভিত্তিক আমদানিকারক ও কমিশন এজেন্টদের কাছে তারা জিম্মি।

“বাড়তি দামে পেঁয়াজ বিক্রি না করলে পরবর্তী তাদের আর পেঁয়াজ দেওয়া হবে না এই ভয় দেখিয়ে বাজারে দাম অস্বাভাবিক বাড়ানো হয়।”

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য ও বিভিন্ন দোকানে থাকা চালানের কাগজ যাচাই করে ১৬ জনের সন্ধান মেলে বলে জানান তিনি।

খাতুনগঞ্জে আড়াইশ পেঁয়াজের আড়ত রয়েছে। তারা বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আমদানিকারকদের কাছ থেকে পেঁয়াজ কমিশন ভিত্তিতে কিনে এনে খাতুনগঞ্জে বিক্রি করে।

বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ার জন্য আমদানিকারকদের ইন্ধন নিয়ে এর আগে অভিযোগ তুলেছিলেন চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম।

গত ১ অক্টোবর খাতুনগঞ্জে অভিযান চলাকালে এবং ১৭ অক্টোবর জেলা প্রশাসকের সাথে বৈঠকেও খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা জানিয়েছিলেন টেকনাফ কেন্দ্রিক আমদানিকার ও কমিশন এজেন্টরা তাদের জিম্মি করে বেঁধে দেওয়া দামে পেঁয়াজ বিক্রিতে বাধ্য করছে।

পেঁয়াজের দাম বাজারে লাগামহীন হওয়ার পেছনের এই সিন্ডিকেটে টেকনাফের আমদানিকারক সজিব, মম, জহির ও সাদ্দাম, বিক্রেতা ফোরকান, গফুর, মিন্টু, খালেক ও টিপু, ব্রোকার শফি, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট কাদের এবং টেকনাফ কে কে পাড়ার জেসি হাউজ ভবনের মেসার্স আলীফ এন্টারপ্রাইজ রয়েছে বলে জানিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এছাড়াও চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আছে খাতুনগঞ্জের মেসার্স আজমীর ভাণ্ডার ও আল্লাহর দান স্টোর, রেয়াজ উদ্দিন বাজারের এ হোসেন ব্রাদার্স ও জে এস ট্রেডার্স এবং নুপুর মার্কেটের মেসার্স সৌরভ এন্টারপ্রাইজ।

এই সিন্ডিকেটে নাম আসা কক্সবাজারের ১১ আমদানিকারক, বিক্রেতা ও ব্রোকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তাদের নামের একটি তালিকা ইতোমধ্যে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে।

এদিন বাজার পরিদর্শনে এসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়য়ের উপ-সচিব সেলিম হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কক্সবাজার ও টেকনাফের তালিকাটি কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে। উনারা তালিকা যাচাই করে এর প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেবেন।”

তিনি বলেন, “চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সাথে আমাদের কথা হয়েছে। তাদের বলেছি, বাড়তি দামে বিক্রি করলেও এই টাকা তারা পাচ্ছেন না, সেটা নিয়ে যাচ্ছে কমিশন এজেন্ট ও অসাধু সিন্ডিকেট।”

পরিবহন খরচসহ কত দামে পেঁয়াজ বিক্রি করা যাবে তা নিয়ে একটি প্রস্তাব রাখা হয়েছে জানিয়ে সেলিম হোসেন বলেন, “তারা আলোচনা করে রাতের মধ্যে জানাবেন। তা না হলে কাল সকাল থেকে আবার অভিযান শুরু হবে।”

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “অভিযান শেষে মিয়ানমার থেকে আনা পেঁয়াজের আমদানি মূল্য কেজি প্রতি ৪২ টাকার সাথে পরিবহন খরচ, শ্রমিক খরচ, মুনাফা ও বিবিধ খরচ সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে খুচরা ও পাইকারি মূল্য নির্ধারণ করে দেন উপ-সচিব মহোদয়।”

সে অনুসারে পাইকারি পর্যায়ে মিয়ানমারের পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৫৫-৬০ টাকা দরে এবং খুচরা পর্যায়ে ৬৫-৭০ টাকা দরে বিক্রি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

বারবার সর্তক করার পরেও খাতুনগেঞ্জে অতিরিক্ত দামে পেঁয়াজ বিক্রি করায় গ্রামীণ বাণিজ্যালয়কে ৫০ হাজার টাকা এবং রেয়াজ উদ্দিন বাজারের রুহুল আমিন সওদাগরকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে।

এদিন অভিযানে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শাহিদা ফাতেমা চৌধুরী,  র‌্যাব-৭, এপিবিএন, নগর পুলিশের সদস্য ও বাজার পরিদর্শক বিল্লাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।