গণপরিবহন আমদানিতে শুল্ক কমানোর সুপারিশ

যানজট কমাতে সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি নিরুৎসাহিত করতে আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে গণপরিবহন আমদানিতে শুল্ক কমানোর সুপারিশ করেছে চট্টগ্রামের একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Oct 2018, 09:10 AM
Updated : 15 Oct 2018, 09:10 AM

সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সুপারিশ তুলে ধরেন পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক মু. সিকান্দার খান।

তিনি বলেন, “যারা প্রচুর সম্পদশালী তারা নিজ প্রয়োজনে হেলিকপ্টারে যাতায়াত করবে। গণপরিবহন আমদানিতে ট্যাক্স কমানো হোক। ছোট আকারের ব্যক্তিগত গাড়ি আমদানিতে ট্যাক্স বাড়ানো হোক।

“এমনভাবে ট্যাক্স বসানো হোক যাতে যাদের নিজেদের গাড়ি আছে তারাও গণপরিবহন ব্যবহার করেন। সবাই গাড়ি এনে দেশ উন্নত হয়ে যাবে, এটা হয় না। উন্নত দেশে সিংহভাগ মানুষ গণপরিবহন ব্যবহার করে।”

‘নগর যাতায়াতে পথচারী ও গণপরিবহনে অগ্রাধিকার- প্রেক্ষিত চট্টগ্রাম’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান স্থপতি জেরিন হোসেন।

চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’ নির্মাণের প্রকল্পের উদ্দেশ্য নিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যানের মন্তব্যের সমালোচনা করে তিনি ।

জেরিন বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের যুক্তি হিসেবে তিনি চট্টগ্রামের সিআইপি ও ভিআইপিদের দ্রুত বিমানবন্দর যাত্রার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন।

“সর্বোচ্চ ২০০ জন শিল্প উদ্যোক্তা তথা সিআইপি বা ভিআইপির জন্য আনুমানিক দুই হাজার আটশত কোটি টাকার এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ সমর্থনযোগ্য হতে পারে না।”

সিকান্দার খান বলেন, “আমাদের এখানে মেগা প্রকল্পগুলোর নেপথ্যে একটা গ্রুপ থাকে। সংস্থা প্রধানের পেছনে তারা থাকা। তারা একটা প্রকল্প নিয়ে আসে আর তা বাস্তবায়ন করা হয়। এভাবে সরকারি সম্পদের যে অপচয় হচ্ছে তা রোধ করতে হবে।

“যেসব প্রকল্প নেয়া হয় তাতে কোনো পরিকল্পনা আছে বলে মনে হয় না। অপরিকল্পিতভাবে আমরা চলেছি। অব্যবস্থাপনাও প্রকট। এজন্য প্রতি বছর সড়কে প্রচুর মানুষ মারা যায়। ভিআইপি-সিআইপিদের আর প্রটেকশন দেয়ার দরকার নেই।”

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বন্দর নগরীতে রিকশা ও অটোরিকশায় ২২ শতাংশ, বাস ও টেম্পোতে ৪৩ শতাংশ এবং ২৫ শতাংশ নগরবাসী পায়ে হেঁটে নগরযাত্রা করেন।

স্থপতি জেরিন হোসেন বলেন, সামগ্রিকভাবে উড়াল সেতুগুলো চট্টগ্রামকে সক্ষম রাখতে পারবে না, যেমন ঢাকাকে পারছে না।

“নগর চলাচলে গতি আনতে ফুটপাতসহ পথচারী সুবিধা ও সুশৃঙ্খল গণপরিবহন এমন কী চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে পণ্যবাহী যান চলাচলের জন্য ও অগ্রাধিকার বিনিয়োগ করতে হবে। কৌশলগত মহাপরিকল্পনায় এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের সুপারিশ আছে বলেও আমাদের জানা নেই।”

সচেষ্ট হলে মাত্র কয়েকশ কোটি টাকা ব্যয়ে বিমানবন্দর যাত্রা গতিশীল করা সম্ভব বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, নগরীকে কর্মক্ষম করতে প্রথমে স্পাইন্যাল সড়ক সংযোজন করা হয়। শেখ মুজিব রোড ও সিডিএ এভিনিউ হলো চট্টগ্রামের প্রধান স্পাইন্যাল সড়ক।

“উড়াল সেতুসহ বিভিন্ন স্থাপনা এই সড়কের বিভিন্ন পরিসরকে সংকুচিত করায় যানজট তীব্র হয়েছে এবং পথচারীল সুযোগ সংকুটিত ও সংকটপূর্ণ করা হয়েছে।”  

সংবাদ সম্মেলন থেকে নগরীর উন্নয়ন বিনিয়োগে অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তিমূলক নগর উন্নয়ন দর্শন অনুসরণ, পথচারী চলাচল ও গণপরিবহনমুখী যাতায়াতে বৃহৎ বিনিয়োগ করা, বিদ্যমান সড়কের শতভাগ ব্যবহার নিশ্চিত করা, নগরকেন্দ্র থেকে বিমানবন্দর যাতায়াতে সাশ্রয়ী বিকল্প ব্যবস্থাসহ ডেডিকেটেড লেইন এবং সব রাস্তায় ফুটপাত সংযোজনের দাবি জানানো হয়।

পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের স্থপতি বিধান বড়ুয়া, প্রকৌশলী এবিএম বাসেত, প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া, প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার ও শাহরিয়ার খালেদ এসময় উপস্থিত ছিলেন।