শনিবার বিকালে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় এ আহ্বান জানানো হয়।
এই সভায় মহিউদ্দিন চৌধুরীরই সভাপতিত্ব করার কথা ছিল বলে জানান নেতারা। কিন্তু বিজয় দিবসের মাত্র একদিন আগে ১৪ ডিসেম্বর দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় পৃথিবী ছেড়ে চলে যান তিনি।
শনিবার তাই বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে ছিল শোকের ছায়া। বক্তব্য দিতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মহিউদ্দিনের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মীরা।
নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, “আমাদের প্রিয় নেতা আজ নেই। সকল ভেদাভেদ ভুলে ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে প্রধানমন্ত্রীর হাতকে সবাই মিলে শক্তিশালী করব এটাই আহ্বান।
“নেত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেত্রী যে আসনে যাকে মনোনীত করবেন সেই প্রার্থীকেই বিজয়ী করে সরকার ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে।”
বাবার অনুপস্থিতিতে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দন চৌধুরীর বড় ছেলে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
তিনি বলেন, “আজ আমি প্রধান অতিথি নই, দলের একজন সাধারণ সদস্য হিসেবে এখানে হাজির হয়েছি। আমার বাবা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী একটি রাজনৈতিক আদর্শ আমাদের শিখিয়ে গেছেন- সেটা হলো বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শ এবং জননেত্রীর প্রতি অবিচল আস্থা।
নওফেল বলেন, সকলের রাজনৈতিক অভিলাষ থাকতে পারে। কিন্তু নিজের গণ্ডি ও ব্যক্তি চর্চার বাইরে কিভাবে দলকে এগিয়ে নিতে হয় সেটা সবার মনে থাকতে হবে।
“নিজেরা যদি নিজেদের সমালোচনা ও ব্যক্তি চর্চায় ব্যস্ত হই তাহলে আওয়ামী লীগ সুসংগঠিত হবে না। আসুন আজ বিজয় দিবসে শপথ নিই ঐক্যবদ্ধ থাকার।”
নওফেল বলেন, “একটি অনুরোধ- বাবা দলকে নিজের সন্তানের চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন। যদি আবার দলকে ক্ষমতায় আনতে পারি তাহলে তার আত্মা শান্তি পাবে। তার বোন ও নেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসলেই তার রাজনীতি সফল হবে।
“জননেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তিনি যাকে মনোনয়ন দেবেন তাকেই যেন বিজয়ী করতে পারি।”
নগর কমিটির সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেন, “আজ সবাই আছি শুধু তিনি নেই। বিজয় দিবসেও তাই সবাই মনমরা।
“তিনি (মহিউদ্দিন) যেমন চেয়েছিলেন- তাকে দেখতে সবাই আসবে। ঠিক তেমনি পুরো চট্টগ্রাম এসে মিলেছিল লালদীঘি মাঠে। যত বাধাই আসুক সেসবের বিরুদ্ধে মানুষের সমর্থন নিয়ে হিমালয়ের মত দাঁড়াতে পারলেই তার স্বপ্ন পূরণ হবে।”
সভাপতির বক্তব্যে নগর কমিটির সহ-সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বিজয়ের দিনে আজ যিনি প্রেরণা দিতেন তিনি নেই। আজ মহিউদ্দিন চৌধুরী থাকলে চট্টগ্রামের আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হত তার বজ্রকণ্ঠে।
নগর কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নোমান আল মাহমুদের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন সহ-সভাপতি জহিরুল আলম দোভাষ ও আলতাফ হোসেন বাচ্চু।
উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, নঈম উদ্দিন চৌধুরী ও বদিউল আলম, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, শফিকুল ইসলাম ফারুক ও চন্দন ধর, উপ-দপ্তর সম্পাদক জহর লাল হাজারী প্রমুখ।
নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতির ‘প্রাণপুরুষ’ ছিলেন মহিউদ্দিন। ২০০৬ সালে নগর কমিটির সভাপতির পদ পান তিনি। তার আগে দুই যুগ ছিলেন সাধারণ সম্পাদক।
২০১০ সাল থেকে নগর আওয়ামী লীগের একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতার সাথে নানা ইস্যুতে বিরোধে জড়ান মহিউদ্দিন।
বন্দর, হোল্ডিং ট্যাক্স, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা, আউটার স্টেডিয়াম সুইমিং পুল নির্মাণসহ নানা ইস্যুতে মহিউদ্দিনের সাথে গত কয়েক বছর ধরে বারে বারে বিরোধে জড়ান বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির।
নগর কমিটিতে মহিউদ্দিনের অনুসারীর সংখ্যাই এখনো বেশি। ছাত্রলীগ ও যুবলীগে এখনো মহিউদ্দিনের অনুসারীদের আধিপত্য নিরঙ্কুশ।