পাহাড়ি ঢল-ধসে চট্টগ্রামে ৩০ জনের মৃত্যু

নিম্নচাপের প্রভাবেটানা দুইদিনের বৃষ্টিতে চট্টগ্রামে পাহাড় ও দেয়াল ধসসহ বিভিন্ন ঘটনায় ৩০ জন মারা গেছেন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 June 2017, 03:54 PM
Updated : 13 June 2017, 03:56 PM

প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী মঙ্গলবার ভোর রাত থেকে বিকাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া ও চন্দনাইশে পাহাড় ধসে মারা গেছে ২৫ জন। 

এর মধ্যে রাঙ্গুনিয়ায় ২১ এবং চন্দনাইশে চারজনের মৃত্যু হয় বলে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মাসুকুর রহমান সিকদার জানিয়েছেন।

এছাড়া রাউজানে নদীতে ভেসে গিয়ে একজন, বাঁশখালীর বাহারছড়ায় গাছচাপায় একজন, নগরীর হালিশহরে দেয়াল চাপায় একজন এবং বাকলিয়ায় বজ্রপাতে একজনের মৃত্যুর খবর জানা গেছে।

রাঙ্গুনিয়ায় প্রাণহানি

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ইসলামপুর ও রাজানগর ইউনিয়নে পাহাড়ধসে দুই পরিবারের আটজনসহ ২১ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামাল হোসেন।

সকালেই পাহাড় ধসের ঘটনা জানাজানি হলেও দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসসহ উদ্ধারকারী দলের সদস্যদের ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে বেগ পেতে হয়।

ইউএনও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ভোর রাতে টানা বৃষ্টির ফলে রাঙ্গুনিয়ার দুর্গম ইসলামপুর ও রাজানগর ইউনিয়নে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২০কিলোমিটার দূরে এই দুই ইউনিয়ন।

ধসে ইসলামপুর ইউনিয়নের মইন্যারটেকে পাঁচজনএবং পাহাড়তলী ঘোনায় আটজনের মৃত্যু হয়। আর রাজানগর ইউনিয়নের জঙ্গল বগাবিলে ভোরে পাহাড় ধসে আটজন মারা যায়।

জঙ্গল বগাবিলে নিহতরা হলেন- নজরুল ইসলাম কালু (৪০) তার স্ত্রী আসমা আক্তার (৩০), তাদের সন্তান মঞ্জুরুল ইসলাম (১২), সাথী আক্তার (৭), মো. ইসমাঈল (৪২) ও তার স্ত্রী মনিরা খাতুন (৩৭) এবং তাদের সন্তান ইশা মনি (৮) ও ইভামনি (৪)।

ইসলামপুরে নিহতরা হলেন- শেফালী বেগম, মো.হোসেন, মো.পারভেজ, রিজিয়া বেগম, মুনমুন আক্তার, হিরু মিয়া, মো. সুজন (২৪), তার স্ত্রী মুন্নী আক্তার, ফালুমা আক্তার, জোৎস্না আক্তার ও মীম আক্তার। এই ইউনিয়নে নিহত অপর দুইজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

রাঙ্গুনিয়ার এই দুই জায়গায় পাহাড় ধস ও পাহাড়ি ঢলে বেশকয়েকজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

চন্দনাইশে পাহাড় ধসে নিহত ৪, আহত দুই

উপজেলার ধোপাছড়ি ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের শামুকছড়ি ও ছনবনিয়া এলাকায় পৃথক দুটি পাহাড় ধসের ঘটনায় দুই পরিবারের শিশুসহ চারজন মারা গেছেন বলেচন্দনাইশ থানার ওসি ফরিদ উদ্দিন খন্দকার জানান।

ধোপাছড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২ নম্বর ওয়ার্ডের শামুকছড়িতে পাহাড় ধসে আজগর আলীর তিন বছর বয়সী মেয়ে মাহিয়া মারা যায়।

কাছাকাছি এলাকা ছনবনিয়ায় অপর ঘটনায় কেউ লা খেয়াং (১০), মে মাউ খেয়াং (১৩) ও মোকইউ অং খেয়াং (৫০) মাটিচাপায় মারা গেছে বলে জানান তিনি। আহত দুইজন হলেন- শানু খেয়াং (২১) ও ছেলাই কেউ খেয়াং (২৮)।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিকজানান,রাতভর টানা বৃষ্টির ফলে শামুকছড়ি ও ছনবনিয়ায় দুটি পরিবারের ওপর পাহাড়ের মাটি ধসে পড়ে। বান্দরবান সদর উপজেলার সীমানা সংলগ্ন চন্দনাইশের ধোপাছড়ি ইউনিয়নের এই দুই এলাকায় উদ্ধারকারীদের যেতে খুব বেগ পেতে হয়।

এদিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়, চট্টগ্রামের রাউজানে পাহাড়ি ঢলে ভেসে নদীতেগিয়ে এক যুবক মারা গেছে।

বাঁশখালীর বাহারছড়া ইউনিয়নের রত্নপুর গ্রামে গাছচাপায় মারা গেছে এনায়েতুল হক (৭) নামে এক শিশু। তার বাবার নাম কবির আহমেদ।

চট্টগ্রাম নগরীর আছদগঞ্জে ভোররাতে বজ্রপাতে মোহাম্মদ দেলোয়ার (১৯) নামে একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী মারা যান।

অপরদিকে হালিশহরের বারুনিঘাটা এলাকায় দেয়াল চাপায় নিহত হয় মোহাম্মদ হানিফ (৪৫) নামে এক ব্যক্তি।