নামাজে গিয়ে নিখোঁজ হন ‘আইএস আত্মঘাতী’ নিয়াজ মোর্শেদ রাজা

সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের প্রকাশ করা ভিডিওতে সিরিয়ায় আইএসএর ‘আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী বাংলাদেশি’ হিসেবে যাকে দেখানো হয়েছে, তিনি দুবছর আগে নামাজ পড়ার কথা বলে বাসা থেকে বেরিয়ে নিরুদ্দেশ হন বলে জানিয়েছে তার পরিবার।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 March 2017, 02:01 PM
Updated : 16 March 2017, 03:05 PM

নিয়াজ মোর্শেদ রাজা নামে অস্ট্রেলিয়া থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়া ওই তরুণ ২০১৫ সালের ৪ মার্চ ঢাকার বারিধারার বাসায় স্ত্রী-সন্তানদের রেখে বেরিয়ে যাওয়ার পর তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি বলে তার বোন জান্নাতুল মাওয়া জানিয়েছেন।

পড়াশোনায় ভালো, শান্ত ও নম্র স্বভাবের রাজার নিখোঁজ হওয়া ও সিরিয়ায় আইএসে যোগ দেওয়াকে কোনোভাবেই মেলাতে পারেন না তার পরিবারের সদস্যরা। 

ব্যাংকারের ছেলে নিয়াজ মোর্শেদ রাজার বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার খান্দাকিয়া ইউনিয়নের ইউনুসনগর গ্রামে হলেও তারা সপরিবারে থাকতেন ঢাকার বারিধারার ডিওএইচএসের বাসায়।

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর র‌্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) প্রকাশ করা নিখোঁজ যুবকদের তালিকার ১৯২ নম্বরে ছিল রাজার নাম।

নিয়াজ র্মোশেদ রাজার ছবি (দ্য অস্ট্রেলিয়া থেকে নেওয়া)

তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজার বাবা একেএম কামাল উদ্দিন দীর্ঘদিন জাম্বিয়ার ইউনিয়ন ব্যাংকে চাকরি করেছেন। সেখানেই রাজা ‘ও’ লেভেল পড়াশোনা শেষ করেন।

পরে কামাল উদ্দিন দেশে ফিরে একটি বেসরকারি ব্যাংকের উচ্চ পদে যোগ দিলে চট্টগ্রামের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল সিজিএস (চিটাগাং গ্রামার স্কুল) থেকে ‘এ’ লেভেল পাশ করেন রাজা। তিন বোন, এক ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন তিনি।

রাজার মেজো বোন জান্নাতুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘এ’ লেভেল পাশের পর ২০০৭ সালে ব্যবস্থাপনা প্রশাসন ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যায় রাজা।

“২০১০ সালে সে দেশে ফেরার পর ২০১১ সালে বিয়ে করে এবং সে বছরই বাবা অসুস্থ হয়ে মারা যান।”

তার ভাই স্বভাবে শান্ত ও বিনয়ী ছিল দাবি করে জান্নাতুল মাওয়া বলেন, “বিদেশ থেকে ফেরার পর থেকেই সে কিছুটা নিরব হয়ে পড়ে এবং নিয়মিত নামাজ পড়া শুরু করে। এটিকে আমরা সেসময় স্বাভাবিক হিসেবেই নিয়েছিলাম।”

নিয়াজ র্মোশেদ রাজার ছবি (দ্য অস্ট্রেলিয়া থেকে নেওয়া)

২০১৫ সালের ৪ মার্চ মসজিদে নামাজ পড়তে যাবার কথা বলে বারিধারার ডিওএইচএস এর বাসা থেকে নিয়াজ মোর্শেদ রাজা বেরিয়ে যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এরপর সে আর বাসায় ফেরেনি এবং পরিবারের সদস্যরা তার কোনো খোঁজ পায়নি।

ওই সময় বাড্ডা থানায় রাজার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়রিও করা হয়েছিল বলে জানান তিনি। সেসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের বাসায় এসে খোঁজখবরও নেয়।

জান্নাতুল মাওয়া বলেন, “তার জঙ্গিগোষ্ঠীর সাথে যুক্ত হওয়ার কথা শুনেছি। ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দুই বার আমার সাথে ফোনে তার কথা হয়েছিল।”

১ অক্টোবর রাজার সঙ্গে শেষবারের মতো তার কথা হয় বলে দাবি করেন তিনি।

“ফোনে শুধু সে ভালো আছে এবং তার জন্য চিন্তা না করার জন্য বলেছিল। এসব কথা সেসময়ে আইনশঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের বলেছি। এতো শান্ত স্বভাবের ছেলেটি ‘এক্সট্রিমিস্ট’ হয়ে যাবে আমরা কেউই ভাবতে পারিনি!”

রাজার দুই বোন ঢাকায় থাকলেও অপর বোন চট্টগ্রামেই তার মা মাহবুবা কামালকে সাথে নিয়ে থাকেন।

সম্প্রতি সিরিয়ায় এক বাংলাদেশি আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীর ভিডিও প্রকাশিত হবার পর নিয়াজ মোর্শেদ রাজা আলোচনায় আসে।

আইএসের সহযোগী ফুরাত মিডিয়া এই ভিডিও প্রকাশ করে বলে জঙ্গি নজরদারি প্রতিষ্ঠান সাইট ইনটেলিজেন্স উল্লেখ করে। তবে কোন সময়ে এ বাংলাদেশি এ আত্মঘাতী মারা গেছে সে বিষয়ে কোন তথ্য সেখানে নেই। 

এই ভিডিও প্রকাশ করার পর ওই তরুণকে নিয়াজ মোর্শেদ রাজা বলে শনাক্ত করেন তার পরিবারের সদস্যরা।

নিয়াজ র্মোশেদ রাজার ছবি (দ্য অস্ট্রেলিয়া থেকে নেওয়া)

নিয়াজ র্মোশেদ রাজার ছবি (দ্য অস্ট্রেলিয়া থেকে নেওয়া)

নিয়াজ মোর্শেদ রাজার ফেইসবুকে তার সম্পর্কে লেখা আছে, তিনি অস্ট্রেলিয়ান ডেকিন ইউনিভার্সিটিতে ও তার আগে চট্টগ্রামের সানশাইন গ্রামার স্কুলে পড়েছেন। জাম্বিয়ার লুসাকায়ও যে তিনি থাকতেন তাও বলা আছে।

ওই জঙ্গি গোষ্ঠীর মিডিয়ার বরাত দিয়ে দ্য অস্ট্রেলিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আইএসের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে সম্পৃক্ত ডেকিন ইউনিভার্সিটির সাবেক এক ছাত্রকে আইএসের প্রচারণার এক ভিডিওতে অংশ নেওয়ার পর ইরাকের তিকরিতে আত্মঘাতী গাড়ি বোমা হামলা চালিয়েছে।

বুধবার প্রকাশিত ওই ভিডিওতে নিয়াজ মোর্শেদ রাজাকে ‘আবু মরিয়ম আল-বাঙালি’ পরিচয় দেওয়া হয়েছে, যিনি ইংরেজিতে বক্তব্য দিয়ে জিহাদের ডাক দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “সে এ লেভেলে পড়ালেখা চট্টগ্রামে করলেও নিখোঁজ হয়েছে ঢাকা থেকে। এখানে তার এক বোন ছাড়া পরিবারের কেউ থাকে না বলে খোঁজ নিয়ে জেনেছি।”