‘ক্ষোভে দুঃখে’ জিডিও করেননি সাব্বিরের বাবা

ঢাকার কল্যাণপুরে নিহত জঙ্গিদের একজন চট্টগ্রাম থেকে পাঁচ মাস আগে নিরুদ্দেশ হওয়া সাব্বিরুল হক কণিক বলে জানিয়েছেন তার বাবা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 July 2016, 09:11 AM
Updated : 27 July 2016, 03:27 PM

চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকনোমিক্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগে ছাত্র সাব্বির দীর্ঘ দিন ‘নিখোঁজ’ থাকলেও ‘ক্ষোভে, দুঃখে’ থানায় জিডি করেননি বলে জানিয়েছেন তার বাবা আজিজুল হক চৌধুরী রাশেদ।

আনোয়ারা উপজেলার বরুমছড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আজিজুল বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার বড় পুত্র সাব্বির গত ২১ ফেব্রুয়ারি ঘর থেকে বের হয়ে আর ফেরেনি। রাগে দুঃখে তাকে ফেরানোর কোনো চেষ্টা করিনি, জিডিও করিনি।”

মঙ্গলবার ভোরে কল্যাণপুরের এক বাড়িতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত সন্দেহভাজন নয় জঙ্গির ছবি সংবাদমাধ্যমে এলে আজিজুল জানতে পারেন, নিহতদের মধ্যে তার ছেলেও রয়েছে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগে পরিদর্শক আজিজুলের বাড়ি বরুমছড়ায় হলেও বন্দনগরীর বাকলিয়া কালামিয়া বাজার সংলগ্ন ইসহাকের পুল এলাকার তিনি পরিবার নিয়ে থাকেন।

মঙ্গলবার রাতে ওই বাসায় গিয়ে পুলিশ কাউকে পায়নি বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন বাকলিয়া থানার ওসি আবুল মনসুর।

তবে বুধবার মোবাইলে কল করলে তা ধরেন সাব্বিরের বাবা আজিজুল। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ছবি দেখে তিনি ছেলের বিষয়ে ‘অনেকটাই নিশ্চিত’।

কল্যাণপুরে অভিযান শেষে মঙ্গলবার রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের ফেইসবুক পাতায় নিহত নয়জনের যে ছবি (রক্তাক্ত লাশের ছবি। অপ্রাপ্তবয়স্কদের দেখার ক্ষেত্রে অভিভাবকদের নির্দেশনা নেওয়ার অনুরোধ করা হল) প্রকাশ করা হয়েছে, তা দেখেই সাব্বিরকে চিনতে পারার কথা বলছেন তার বাবা।

ঘটনার পর থেকে পুলিশ, র‌্যাব ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা যোগাযোগ করছেন বলেও জানান আজিজুল।

তিনি বলেন, “আমাদের পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত। আমার বড়ভাইও ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি ছিলেন। আমিও সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করেছি। আমাদের ঘরের সন্তানের এ ধরণের কর্মকাণ্ড লজ্জার।”

আজিজুল হক চৌধুরীর তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে সাব্বির সবার বড়। চট্টগ্রামের সরকারি ‍মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১০ সালে এসএসসি এবং ২০১২ সালে কমার্স কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর তিনি ভর্তি হন সীতাকুণ্ডের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে।

আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় জামায়াতে ইসলামী সংশ্লিষ্টদের অর্থায়নে পরিচালিত বলে অভিযোগ রয়েছে। বাড়ি ছাড়ার আগে সাব্বির সেখানে চতুর্থ সেমিস্টারে পড়তেন।

ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পর জিডি করেননি কেন- এমন প্রশ্নে আজিজুল বলেন, ‘‘আমাদের পুরো ফ্যামিলি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। লোকলজ্জা আর সামাজিকতার ভয় ছিল, রাগ-ক্ষোভও ছিল।

“নিজের জন্মদাতা পিতার কথা না শুনে খারাপ লোকের কথা শোনে... তার চেহারাও দেখতে চাই না। তার লাশও নিতে যাব না,” বলেন এই বাবা।

সাব্বিরের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হতে তার বাবাকে বুধবার ডেকে নিয়ে কথা বলেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা।

চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা পরে সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা তাকে ছবি দেখিয়েছি। তিনি আমাদের জানিয়েছেন, তার ছেলে নিখোঁজ। রাউজানে এক বিয়েতে যাওয়ার কথা বলে সে বের হয়। এরপর থেকে তার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ নেই। আগেও সে মাঝেমধ্য্যে তাবলিগে যাওয়ার কথা বলে উধাও হয়ে যেত। বাবা মাজারভক্ত বলে এসব বিষয় নিয়ে তর্ক করত।” 

ছেলের লাশ শনাক্ত করতে ঢাকায় যাবেন বলে জানালেও লাশ নেবেন না বলে পুলিশকে জানিয়েছেন আজিজুল।