২০০৫ সালে নিষিদ্ধ জেএমবি শীর্ষনেতাদের ফাঁসি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ভেঙে পড়েছে বলে এতদিন বলে আসছিলেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
তবে গত এক বছরে জঙ্গি কায়দায় বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের পর অধিকাংশ ঘটনার জন্য পুলিশ এখন এই সংগঠনটিকেই এখন দায়ী করছে।
২০১৫ সালে নিষিদ্ধ আনসারুল্লাহর প্রধান মুফতি জসীমউদ্দিন রাহমানী ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যামামলায় দণ্ড নিয়ে কারাগারে রয়েছেন। সাম্প্রতিক কয়েকটি হামলায় এই সংগঠনটি জড়িত বলে পুলিশ জানায়।
কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের পর চট্টগ্রামে জঙ্গি কায়দায় এসপিপত্নী নিহত হওয়ার প্রেক্ষাপটে দেশজুড়ে জঙ্গি-সন্ত্রাসী দমনে ‘সাঁড়াশি অভিযান’ শুরুর পর রোববার বন্দর নগরীতে যান আইজিপি শহীদুল।
দামপাড়া মেট্রোপলিটন শুটিং ক্লাবে এক সুধী সমাবেশের পর তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, নিষিদ্ধ ছয়টি জঙ্গি সংগঠনের মধ্যে দুটি সক্রিয় রয়েছে। এ দুটি হচ্ছে জেএমবি ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিম।
আনসারুল্লাহ এখন আনসার আল ইসলাম নামে কাজ করছে বলে জানান তিনি।
আইজিপি বলেন, ২০০৪ সালে দেশজুড়ে বোমাহামলার পর অনেক জঙ্গি গ্রেপ্তার হলেও জামিনে বেরিয়ে তারা আবার সংগঠনে জড়িয়ে পড়ে। সেই ‘ডাটাবেইজ’ পুলিশের কাছে আছে।
গত এক বছরে লেখক, প্রকাশক, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, বিদেশি, হিন্দু পুরোহিত, খ্রিস্টান যাজক, বৌদ্ধ ভিক্ষু, শিয়া ও আহমদিয়া সম্প্রদায়ের উপর হামলার পর কখনও আইএস কখনও আল কায়দার নামে দায় স্বীকারের বার্তা এসেছে।
তবে বাংলাদেশে এসব হত্যাকাণ্ডে আন্তর্জাতিক কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টতা নেই বলে আগের মতোই দাবি করেছেন আইজিপি শহীদুল।
তিনি বলেন, পাবনা, গাইবান্ধা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এই সবগুলো দেশীয় জঙ্গিবাদের উত্থান।
জঙ্গিবাদী তৎপরতার বিষয়ে তিনি বলেন, “জিহাদ কখনও চোরাগোপ্তা হয় না। জিহাদ করতে হলে রাষ্ট্রের সমর্থন লাগে।”
গত দুই বছরে জঙ্গি কায়দায় ৪২টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে জানিয়ে পুলিশ প্রধান বলেন, “তার মধ্যে ৩৪টি ডিটেক্ট হয়েছে। বাকিগুলোর জন্য পুলিশ কাজ করছে।”
জনগণকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে বাংলাদেশ পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরাকের মতো অকার্যকর দেশে রূপান্তরিত হবে। দেশে মানুষ বসবাস করতে পারবে না।”
জঙ্গিবাদ নির্মূলে আলেম-ওলামাদের নিয়ে পুলিশ কাজ করছে জানিয়ে শহীদুল হক বলেন, এক লাখ আলেমদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করা হচ্ছে। তারা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন।
সুধী সমাবেশে আইজিপি বলেন, “এই দেশকে নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যখন স্বাধীনতা যুদ্ধ হচ্ছিল তখনও কিন্তু একটি শ্রেণি স্বাধীনতা চায়নি। এই পরাজিত শক্তি নানা ভাবে নানা কৌশলে একটার পর একটা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।”
এই প্রসঙ্গে বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে ইসরাইলি লিকুদ পার্টির সদস্যের বৈঠকেরও সমালোচনা করেন তিনি।
সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহারের সভাপতিত্বে সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার রুহুল আমিন, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোহাং শফিকুল ইসলাম, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরী, সিডিএ চেয়ারম্যান আব্দুচ ছালাম, প্যানেল মেয়র জোবাইদা নার্গিস, বিজিএমই-এর সহ-সভাপতি মঈনুদ্দীন আহমেদ মিন্টু, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি কলিম সরোয়ার, কমিউনিটি পুলিশের সভাপতি ডা. মিনহাজ ও পরিবহন মালিকনেতা বেলায়েত হোসেন।