কর্ণফুলীর দখল-দূষণ রোধে ‘দৃশ্যমান পদক্ষেপ’ নেবে নদী রক্ষা কমিশন

ঢাকা ওয়াসা ও চট্টগ্রাম ওয়াসা দুই নগরীর ‘অবস্থা খারাপ’ করে দিয়েছে বলে মন্তব্য জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানের।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Nov 2022, 04:10 PM
Updated : 7 Nov 2022, 04:10 PM

কর্ণফুলী নদীর দখলের পরিমাণ আরও বেড়েছে উল্লেখ করে নদীর জমি দখলমুক্ত করতে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়ার প্রত্যয় জানিয়েছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী। 

সোমবার বিকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে চট্টগ্রামের নদী ও খাল নিয়ে অভ্যন্তরীণ মতবিনিময়ে এ মন্তব্য করেন নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান। চট্টগ্রামে কমিশনের কর্মকর্তাদের তিনদিনের পরিদর্শনের অংশ হিসেবে এই মতবিনিময়ের আয়োজন করা হয়। 

সভায় ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, “দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নদী কর্ণফুলী। শুধু চট্টগ্রামবাসীর জন্য না, সারাদেশের জন্য। এখানে দূষণ আছে। দূষণের চেয়েও দখল বেশি। এসব কারণে নেভিগেশন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। 

“২০১৮-১৯ সালে দুইবার কমিশনের চেয়ারম্যান এখানে এসেছিলেন। ৩ বছর ১১ মাস পর আমাদের এ পরিদর্শন। তখনও কিছু সমস্যা ছিল। তখন নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল- জেলা প্রশাসক, সিটি করপোরেশন ও বন্দরকে। সমস্যার সমাধান অল্প হয়েছে। সমস্যা আরও বেড়েছে। দখলের পরিমাণও বেড়েছে।” 

এবারের পরিদর্শনে ‘গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’ নেওয়া হতে পারে ইঙ্গিত দিয়ে নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, “রাষ্ট্রের সম্পত্তি রক্ষায় আমরা নিয়োগপ্রাপ্ত। দৃশ্যমান ফল এবার পেতে পারেন। অপেক্ষা করুন। 

“হাইকোর্টের রায় অনুসারে, সিএস মতে, নদীর জায়গা নদীর অধিকার। নদীকে দখলদারদের হাত থেকে অবমুক্ত করতে হবে। জীবন্তসত্তা হিসেবে অবাধে প্রবাহিত হওয়া, দখল না হওয়া ও দূষণ না হওয়ার অধিকার নদীর আছে।” 

তিনি বলেন, “নদীর জমিতে অবকাঠামো করার অনুমতি কোনো সরকারি সংস্থা দিতে পারে না। ৩ বছর ১১ মাস আগে ডিসিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সব বাতিল করে নদীর জমি খাস খতিয়ানে নিয়ে আসতে। সেই আদেশ প্রতিপালিত হয়েছে কিনা তা দেখতে এসেছি। 

“এখান থেকে শুধু আশ্বাস নিয়ে যাব না। এক আশ্বাসে চার বছর গেছে। বন্দরের কারণে কর্ণফুলী নদীর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কর্ণফুলীর পরিস্থিতি সুখকর নয়।” 

ঢাকা ওয়াসা ও চট্টগ্রাম ওয়াসা দুই নগরীর ‘অবস্থা খারাপ’ করে দিয়েছে মন্তব্য করে নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, “ঢাকা একটি পয়ঃবর্জ্য বিপর্যস্ত নগরীতে পরিণত হয়েছে। আমরা যে অবস্থায় চলে গেছি তা ভয়াবহ। 

“ওয়াসা আমাদের অবস্থা খারাপ করে দিয়েছে। কোনো সুয়ারেজ নেই। চট্টগ্রামেও নেই। চট্টগ্রামে এক কোটির মত লোক। সব পয়ঃবর্জ্য খালগুলো দিয়ে কর্ণফুলীতে গিয়ে পড়ছে। নদীকে আমরা বিষাক্ত করে ফেলেছি। মানুষ প্রকৃতির ওপর এত অত্যাচার করতে পারে!” 

পয়ঃবর্জ্য ঠেকাতে কর্ণফুলীর সঙ্গে যুক্ত খালের মুখে চার ধাপের ‘লিনিয়ার টিট্রমেন্ট প্ল্যান্ট’ পরীক্ষামূলকভাবে দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্থাপনের পদক্ষেপ নিতে সিটি করপোরেশনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। 

সভায় নদী রক্ষা কমিশনের উপ-পরিচালক (গবেষণা ও নিরীক্ষণ) ড. আকতারুজ্জামান তালুকদার বলেন, “২০০০ সালে কর্ণফুলী ৮০০ মিটারের বেশি প্রশস্ত ছিল। এখন ৫০০ মিটার। এভাবে এগুতে থাকলে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য কিছু থাকবে না। কর্ণফুলী শুধু এখনকার নয় ভবিষ্যতের জন্যও আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নদী।” 

সভায় উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সহকারী পরিচালক মো. তৌহিদুল আজিজ, সহকারী পরিচালক মো. আশরাফুল হক, চুয়েট এর ডিজাস্টার ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষক ড. মো. আবুল হাছান, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধি।