স্বাস্থ্যখাতকে নতুন করে সাজাতে তৈরি করা একটি মডেল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখানো হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।
Published : 06 Jul 2024, 03:11 PM
জনপ্রতিনিধিরা যদি যে যার নিজস্ব এলাকার হাসপাতালে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান, তাহলে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে সেবার মান উন্নত হবে বলে মনে করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন।
তিনি বলেছেন, এতে মানুষের বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করানোর প্রবণতাও কমে আসবে।
শনিবার সকালে চটগ্রামের মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে কর্মকর্তা ও চিকিৎসকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় কথা বলছিলেন সামন্ত লাল সেন।
এ সময় দেশের হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিকিৎসা নেওয়ার উদাহরণ তুলে ধরেন তিনি।
সামন্ত লাল সেন বলেন, “সংসদ সদস্যরা যার যার স্থানীয় হাসপাতালে গিয়ে যদি চেকআপ করান তাহলে হাসপাতালে চিকিৎসার মান উন্নত হবে। দেশের চিকিৎসার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরে আসবে। ফলে মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাবে না।”
স্বাস্থ্যখাতকে নতুন করে সাজাতে তৈরি করা একটি মডেল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখানো হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।
“আমরা স্বাস্থ্যখাত নিয়ে প্রেজেন্টেশন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দেখিয়েছিলাম। স্বাস্থ্যখাত নিয়ে সেখানে বিস্তারিত খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। আমরা যে প্রসিডিওর, মডেল তৈরি করেছি সেটা অনুযায়ী কাজ করতে পারলে স্বাস্থ্যখাতে ভালো কিছু হবে।”
চিকিৎসকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “দেশের চিকিৎসার মান উন্নত করতে আপনারা আমাকে সহযোগিতা করুন। তাহলে আমি আশা করি, দেশের মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশে না গিয়ে বিদেশের মানুষ চিকিৎসার জন্য দেশে আসবে।”
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “রোগী যাতে যথাযথ চিকিৎসা পায় সেটা দেখা যেমন আমার দায়িত্ব তেমনি ডাক্তাররাও যাতে চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে সুরক্ষা পায় সেটা দেখাও আমার দায়িত্ব।”
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের জন্য চিকিৎসকদের পাশে চেয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
তিনি “চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এমআরআই মেশিন, সিটি স্ক্যান নষ্ট এটা শুনতেও আমার কাছে খারাপ লাগে। ঢাকার পর চট্টগ্রাম বাংলাদেশ দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। এগুলো জরুরি ভিত্তিতে ঠিক করার জন্য প্রয়োজনীয় যা যা করা দরকার আমি করব।”
সভায় হাসপাতালের বিভিন্ন অসুবিধা ও লোকবল সংকটের বিষয় আলোচনায় উঠে আসে। অল্প সময়ের মধ্যে সংকটের সমাধান করা হবে বলে মন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন।
চিকিৎসকের নিরাপত্তার বিষয়ে সামন্ত লাল সেন বলেন, “একজন চিকিৎসকের জন্য আমি সব ধরনের সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করতে চাই। মহিলা ডাক্তারদের রাতে ডিউটি করার সময় যাতে কোন ধরনের অসুবিধা না হয় তার আমি জন্য কাজ করছি।”
শহরের একটি হাসপাতালের পরিস্থতি তুলে ধরে সামন্ত লাল বলেন, “আমি গতকাল চট্টগ্রামে একটা হাসপাতালে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে আমার মন খারাপ হয়ে গেছে। একটা হাসপাতালে যদি ইমার্জেন্সি ডাক্তার না থাকে, অক্সিজেন সিলিন্ডার খালি থাকে তাহলে তারা রোগীকে কি সেবা দিবে। প্রাইভেট ক্লিনিক অবশ্যই চলবে আমি তার বিরুদ্ধে নই।
“কিন্তু তাদেরকে সব নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। সাংবাদিক ভাইদের বলব আমি হাসপাতালে অভিযান চালাই না, পরিদর্শন করি। প্রত্যেকটা রোগী যাতে সুচিকিৎসা পায় সেটা দেখার দায়িত্ব আমার। ডাক্তাররা কিভাবে কাজ করছে, তারা সুরক্ষিত আছে কি না সেটা দেখার জন্য আমি পরিদর্শনে যাই।"
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে গাইনি চিকিৎসকরা ঢাকায় চলে যেতে চায় উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “সবাই যদি ঢাকায় যেতে চায় তাহলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ চলবে কেমন করে?
“এক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে একটা অনুশাসন দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, যার যেখানে পোস্টিং তার সেখানেই চাকরি করতে হবে। কেউ যদি যেতে না চায় বা আসতে না চায় তাহলে তাকে বলবা চাকরি ছেড়ে দিতে। যাকে যেখানে পোস্টিং দেওয়া হবে সেখানে তাকে যেতেই হবে।”
বার্ন ইউনিট যত দ্রুত সম্ভব
স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশিপ বার্ন ইউনিটের সাইটও পরিদর্শন করেন।
তিনি বলেন, “আমরা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেছি। এটা যেহেতু একনেকে পাস হয়ে গেছে, আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চীন সফরে যাচ্ছেস, আমার ইচ্ছা আছে যে তিনি যখন দেশে থাকেন তখনই উনাকে দিয়ে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করানোটা।
“আশা করি উনারা দেশে ফিরে আসলে আমরা এটা করতে পারব। এই মাসেই এটা করার চেষ্টা করব আর যত দ্রুত সম্ভব কাজ শুরু করব। কারণ চাইনিজরা কমিটেড যে দেড় বছর থেকে দুই বছরের মধ্যে ভবন নির্মাণ শেষ করবে। একই সাথে আমরা জনবল যন্ত্রপাতি সবনিয়েই একসাথে কাজ করছি।”
পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইউরোলজি, পেডিয়াট্রিক, শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগ পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন করার সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব বিভাগে ভর্তি করা শিশু রোগী এবং তাদের অভিভাবকদের সাথে কথা বলেন। বিভাগের কর্তব্যরত ডাক্তার ও নার্সদের সাথেও তিনি চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে কথা বলেন।
পরিদর্শনকালে ও মতবিনিময় সভায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা: আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সাহেনা আক্তার, চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরীসহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।