কার্যাদেশ গেছে কমে, পোশাক খাতের সক্ষমতা থাকছে অব্যবহৃত: ফারুক

পোশাক রপ্তানির মূল্য বাড়লেও পরিমাণ বাড়েনি বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Jan 2023, 07:02 PM
Updated : 22 Jan 2023, 07:02 PM

কার্যাদেশ কমে যাওয়ায় দেশের পোশাক কারখানাগুলোর সক্ষমতা সম্পূর্ণ ব্যবহার করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান।

তিনি বলেছেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশসহ সারা বিশ্বে মূল্যস্ফীতি দেখা দেওয়ায় উন্নত দেশগুলো কৃচ্ছ্রসাধন করে কেনাকাটা কমিয়ে দিয়েছে। তাই পোশাকের অর্ডারও কমিয়ে দিয়েছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। আমদানিকারকরা একসাথে বড় অর্ডার না দিয়ে ছোট ছোট স্লটে অর্ডার দিচ্ছে।

“অনেকেই অর্ডার বাতিল করছে আবার কেউ কেউ ‘ডেফার্ড পেমেন্টের’ দিকে ঝুঁকছেন। আমাদের জানামতে এ মুহূর্তে পূর্ণ সক্ষমতা ব্যবহার করে কারখানা চালানোর মতো কোনো অর্ডার কোনো কারখানার নেই। অর্ডার কম থাকায় অনেক কারখানায় ছুটিও দিতে হচ্ছে।”

রোববার চট্টগ্রাম বিজিএমইএ ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ কথা জানান ফারুক।

বর্তমান পরিস্থিতিতে এ বছর বিশ্বে পোশাক বাজারের আকার বড় করা যাবে না এবং যে আকার আছে সেটা ধরে রাখাই চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন ফারুক হাসান।

“কোভিড মহামারী থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর মধ্যেই পোশাক কারখানাগুলো নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। বৈশ্বিক রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে, তার প্রভাব পড়েছে আমাদের পোশাক শিল্পে।”

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, “২০২১ সালের তুলনায় পরের বছর পোশাক রপ্তানি ২৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪৫ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড গড়লেও পরিমাণ বাড়েনি। কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি এবং উচ্চ দামের পোশাক রপ্তানি বেড়ে যাওয়ায় রপ্তানি মূল্য বেড়েছে।”

এ সময় উৎপাদন ব্যয়ও বেড়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “গত দেড় বছরে সুতার দাম বেড়েছে ৬২ শতাংশ, কন্টেইনার ভাড়া বেড়েছে ৩৫০ থেকে ৪০০ শতাংশ, ডাইস ও কেমিক্যালের খরচ বেড়েছে ৬০ শতাংশ এবং শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ।

“যার কারণে গত পাঁচ বছরের পোশাক শিল্পে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ। আবার কোভিডের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা পরিচালনায় খরচ আরও বেড়েছে।”

মতবিনিময় সভায় বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান পোশাক শিল্পখাতের কিছু সম্ভাবনার কথাও বলেন।

“গত অর্থবছরে দেশের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৩৫ শতাংশ। চীন থেকেও কয়েক বছরে অনেক ক্রয়াদেশ এসেছে। আগামী কয়েক বছরে এর পরিমাণ আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে। যার কারণে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে পোশাক শিল্পখাত থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছে বিজিএমইএ।”

পরিবেশগত কারণে চীন পোশাকখাত থেকে সরে যাওয়ায় সেসব কার্যাদেশ বাংলাদেশে আসবে বলে মনে করেন ফারুক।

তবে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কারণে গার্মেন্টে যে উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে তা বহনের সক্ষমতা কারখানা মালিকদের নেই বলে দাবি করেন ফারুক হাসান।

তিনি বলেছেন, বিশ্বজুড়ে চলমান জ্বালানি সংকটের কারণে স্থানীয় পর্যায়ে বিদ্যুতের অপ্রতুলতায় কারখানা পরিচালনার জন্য ডিজেল চালিত জেনারেটর চালানোর কারণেও কারখানা পরিচালনায় খরচ বেড়েছে।

সিস্টেম লস কমানোর পাশাপাশি অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে শিল্পের জন্য গ্যাস-বিদ্যুতের যৌক্তিক দাম নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি।

নন কটন পোশাক রপ্তানিতে প্রণোদনা দাবি বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান জানান, বিশ্ববাজারে কটন বস্ত্রের শেয়ার এবং পোশাকের ব্যবহার মাত্র ২৬ শতাংশ। সেখানে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা তৈরি পোশাকের ৭৫ শতাংশই কটন পণ্য।

টেকসই হবার কারণে বিশ্ববাজারের ক্রেতারা এখন নন কটন পোশাক পণ্যের দিকে ঝুঁকছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, টেক্সটাইল খাতের মধ্যে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি খাত হচ্ছে ম্যান-মেইড ফাইভার ভিত্তিক ইয়ার্ন ও ফেব্রিকস যেমন- পলিয়েস্টার, ভিনকস, স্প্যানডেক্স ও মেলাঞ্জ।

নন কটন, ম্যান-মেইড ফাইভার ভিত্তিক পোশাক রপ্তানিতে প্রণোদনা দেওয়ার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, “ভ্যালু চেইনে এগিয়ে থাকার জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে সদস্যদের সাধারণ পোশাকের পাশাপাশি উচ্চ মূল্যের বা ব্যতিক্রমী পোশাক তৈরিতে প্রতিনিয়ত উৎসাহ দিচ্ছে।

“যারা এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করবে, তাদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ প্রণোদনা থাকা জরুরি।”

মতবিনিময় সভায় বিজিএমইএ’র প্রথম সিনিয়র সহ-সভাপতি নজরুল ইসলামসহ সাবেক ও বর্তমান নেতারা উপস্থিত ছিলেন।