“দিন শেষে হয়ত অনেক কাজ শেষ করা যাবে না, তবে সূচনা করে যাব। আমি না থাকতে পারি, কেউ না কেউ শেষ করবে,” বলেন মেয়র।
Published : 14 Feb 2024, 05:13 PM
মেয়াদের তিন বছর শেষ করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, তিনি নগরীর উন্নয়নকে শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে অনেক পরিকল্পনা নিয়েছেন, যা হয়ত তার মেয়াদে শেষ হবে না।
তবে সেসব উদ্যোগ নিতে শুরু করে দিয়ে যেতে চান। পাশাপাশি জলাবদ্ধতা নিরসনে বারইপাড়া খালের কাজ শেষ করতে চান চলতি বছরের মধ্যে।
মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে বুধবার নগরীর টাইগারপাসে অস্থায়ী নগর ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এছাড়া সাম্প্রতিক আলোচিত ইস্যু নিউমার্কেট এলাকার হকার উচ্ছেদ বিষয়ে নিজের অনড় অবস্থানের কথা ঘোষণা করেছেন মেয়র।
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “ইশতেহারের অনেক কিছুই প্রক্রিয়াধীন। দিন শেষে হয়ত অনেক কাজ শেষ করা যাবে না। তবে সূচনা করে যাব। আমি না থাকতে পারি, কেউ না কেউ শেষ করবে। যেন এই নগরীর উন্নয়নকে একটা শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে পারি, সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি।
“এই শহরকে সুন্দরভাবে সাজাতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। শহর শুধু মেয়রের একার না, সবাই এগিয়ে এলে সফল হবই। আমি উদ্যোগ নিচ্ছি। ভুল করলে শুধরে দিবেন।”
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মেয়র রেজাউল বলেন, “প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ বাসযোগ্য নান্দনিক নগর প্রতিষ্ঠার দৃঢ়প্রতিজ্ঞা নিয়ে আমি তিন বছর দায়িত্ব পালন করেছি। প্রায় ১১০০ কোটি টাকা দেনা নিয়ে আমি দায়িত্ব গ্রহণ করি। গত তিন বছরে ৫৫০ কোটি টাকা শোধ করা হয়েছে।
“দায়িত্ব নিয়ে দেখি কোটি কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিল বাকি। আমার তিন বছরে এক টাকাও বিল, সরকারি ভ্যাট-ট্যাক্স বাকি নেই। এখনও যা বাকি আছে, তা অতীতের।”
চট্টগ্রাম শহর অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “অতীতে কোনো একজন মেয়রের চোখে যেটা সুন্দর মনে হয়েছে, সেটা করেছেন। আরেকজন মনে করেছে অন্যভাবে সুন্দর, সেটাও করেছেন। কিন্তু মাস্টারপ্ল্যান অনুসরণ করা হয়নি। হলে আজ শহরের এ দুর্দশা হত না।”
ফুটপাত মুক্ত রাখতে অনড়
গত ৮ ফেব্রুয়ারি অভিযান চালিয়ে বিআরটিসি ফলমন্ডি থেকে স্টেশন রোড, নিউমার্কেট মোড় হয়ে জিপিও এবং আমতলা পর্যন্ত অংশের প্রায় এক হাজার হকারকে উচ্ছেদ করে ফুটপাত ও সড়ক দখলমুক্ত করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি)।
এরপর ১২ ফেব্রুয়ারি স্টেশন রোড এলাকার ফুটপাত পুনর্দখল ঠেকাতে অভিযানে গেলে সিটি করপোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেট, কর্মী ও পুলিশের উপর হামলা হয়। এসময় হকার ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সংবাদ সম্মেলনে মেয়র রেজাউল বলেন, “শত বাধা উপেক্ষা করে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে নিউমার্কেট মোড়ের নালা, রাস্তা ও ফুটপাত দখলমুক্ত করেছি। এই ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব প্রতিপত্তি ইনফ্লুয়েন্স আমাকে থামাতে পারবে না।
“নাগরিকদের মধ্যে থেকে একটাই দাবি উঠেছে, হকার মুক্ত ফুটপাত চাই। চলাচলের জন্য ফুটপাত চাই। ফুটপাত সাধারণ মানুষের হাঁটার জন্য। ফুটপাত কাঁচা বাজার, মাছ বাজার আর কাপড়ের বাজার বসানোর জন্য নয়।”
উচ্ছেদ অভিযানে হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ মেয়র বলেন, “এত দুঃসাহস তারা পায় কোথায়? আমরা দ্রুত বিচার আইনে মামলা করেছি।
“আমি আগেও বলেছি, হকারদের জন্য হলিডে মার্কেট করে দিব। সেখানে তারা শুক্র-শনিবার ব্যবসা করবেন।
সচেতন না হলে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি নেই
বন্দর নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন নিয়ে জানতে চাইলে মেয়র রেজাউল বলেন, “এই শহরে ৭২টি খাল ছিল। পরে কমে গিয়ে হয় ৫৭টি। এরমধ্যে ৩৬টি খাল নিয়ে সিডিএ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। সেখানে হাত দেয়ার সুযোগ আমাদের নেই। উনাদের আমরা সময়ে সময়ে বলি।
“আমাদের একটা খাল- বারইপাড়া খাল খনন.. এর কাজের অগ্রগতি ৬০ শতাংশ। জমি বুঝিয়ে দেয়ার এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে আমরা খাল দৃশ্যমান করেছি। এই মৌসুমে খালে পানি চলাচল করবে। ২০২৪ সালের মধ্যে পুরো প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্যে কাজ এগিয়ে চলেছে।”
হোল্ডিং ট্যাক্স ‘সহনীয়’
চট্টগ্রাম শহরে অতীতে বর্ধিত হোল্ডিং ট্যাক্স বিরোধী আন্দোলন হয়েছে মন্তব্য করে মেয়র রেজাউল বলেন, “তখন কিভাবে এসেসমেন্ট করে এক লাখ টাকার হোল্ডিং ট্যাক্স ১০-১২ লাখ টাকা করা হয়েছিল তা আপনারাই পত্রিকায় লিখেছিলেন।
“আমি আসার পর করদাতাদের আপত্তি ও আর্থিক সমস্যার কথা বিবেচনা করে ছয়টি রিভিউ বোর্ড গঠন করি। গণশুনানিতে আমি নিজে উপস্থিত থেকে করদাতাদের চাহিদা মোতাবেক সহনীয় পর্যায়ে কর মূল্যায়ন করা হয়েছে।”
একারণে নগরবাসী স্বত:স্ফূর্তভাবে গৃহকর পরিশোধ করছেন দাবি করে মেয়র রেজাউল বলেন, “নগরবাসীর এ বিষয়ে যে অসস্তোষ ছিল তা প্রশমিত হয়েছে। এ উদ্যোগের ফলে আগের অর্থ বছরের চেয়ে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ২৪ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আয় হয়েছে।”
প্রশ্ন ছিল ডোর টু ডোর আর্বজনা অপসারণে সিসিসির নিজস্ব কর্মী বাহিনী থাকার পরেও ঘর-বাড়ি থেকে আবর্জনা সংগ্রহে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার দায়িত্ব পালন ও এ বাবদ তাদের টাকা আদায় বিষয়ে।
জবাবে মেয়র বলেন, “ঢাকা শহরের সব ওয়ার্ডে আউটসোর্সিং আছে। আমরা অন্য শহরের মত ১৭ বা ২৭ শতাংশ হোল্ডিং ট্যাক্স নিই না। অন্য শহরের মত ট্যাক্স নিতে পারলে হয়ত এ টাকা দিতে হত না।
“যারা ময়লা নিয়ে যায় তারা পরিবার প্রতি ৫০ টাকা হয়ত নিচ্ছে। শহর পরিচ্ছন্ন রাখতে হলে এটুকু দিতেই হবে।”
নগরীর আন্দরকিল্লায় ২০ তলা নতুন নগর ভবন নির্মাণের বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে মেয়র রেজাউল বলেন, “প্রথম ধাপে ২৭ কোটি টাকার টেন্ডার হয়েছে। সিটি করপোরেশনের নিজস্ব ফান্ড থেকে করছি। আমার মেয়াদে পুরোটা না হলেও ৭-৮ তলা শেষ করতে পারব।”
‘বিপ্লব উদ্যানে আমি দোকান দিইনি’
নগরীর বিপ্লব উদ্যানে নতুন করে অবকাঠামো নির্মাণ নিয়ে গত কিছুদিন ধরে চলমান বির্তক বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় মেয়রের কাছে।
মেয়র রেজাউল বলেন, “বিপ্লব উদ্যানে দোকান মালিক সমিতি এলো কোথা থেকে? এই দোকান কি আমি করেছি? আমি না দিলেও, সিটি করপোরেশন চুক্তি করেছে। চুক্তি থাকলে সেটা আমাকে মানতে হয়।
“যখন দোকান ভাঙতে গেল তখন তারা মামলা করল। তখন দেখলাম, আমাদের চুক্তি ছিল খুবই দুর্বল। আমি দোকান বন্ধ করার উদ্যোগ নিলাম। কিন্তু এই চুক্তিও করা ছিল। তখন আমি বললাম যে, তাহলে দুই তলা ছেড়ে দিতে হবে। সেখানে আমি মুক্তিযুদ্ধের ও ইতিহাস-ঐতিহ্যের জাদুঘর করব।”
মেয়র রেজাউল বলেন, “তারা বলল কিডজ জোন থাকবে। উন্মুক্ত মঞ্চ থাকবে। ঠিক আছে উদ্যানে বাচ্চাদের জন্য জোন থাকতে পারে। সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের জন্য মঞ্চ লাগে। তখন আমি বললাম, দোকান যাতে দেখা না যায় সেজন্য ২০০ ফুট বাই ১৫০ ফুট লাল-সবুজ বাংলাদেশের পতাকা রাখতে হবে, সেটা হবে অর্কিড দিয়ে। এটা দেশের কোথাও নেই।”
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে মেয়র বলেন, “আপনারা বলেন, সেখানে কি আমি দোকান দিয়েছি? আমিও বলি, উদ্যানে দোকান কেন থাকবে? যদি আগে টাকা দেয়া না থাকত, চুক্তি না থাকত- আমি দোকান ভেঙে ফেলতাম। এখন উচ্ছেদ করতে হলে তাদের টাকা দিতে হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে প্যানেল মেয়র গিয়াস উদ্দিন, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মো. তৌহিদুল ইসলাম, সচিব খালেদ মাহমুদ ও মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেমসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।