চট্টগ্রামের কালুরঘাট পয়েন্টে কর্ণফুলী নদীর ওপর একসঙ্গে রেল ও সড়ক সেতু নির্মাণে ৮১ কোটি ৪৯ লাখ ডলার ঋণ দিচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া। বৃহস্পতিবার দুই দেশের সরকারের মধ্যে এ সংক্রান্ত দুটি চুক্তি সই হয়েছে।
Published : 30 Jun 2024, 02:16 PM
চট্টগ্রামের কালুরঘাটে রেল ও সড়ক সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুত শুরু করার দাবি জানিয়েছে বোয়ালখালী-কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদ।
রোববার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানানো হয়।
এক দশক ধরে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে রেল কাম সড়ক সেতু নির্মাণের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে ‘বোয়ালখালী-কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদ’।
পরিষদের আহ্বায়ক আব্দুল মোমিন লিখিত বক্তব্যে বলেন, “আমরা মনে করি, দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে ঋণচুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে বহুল প্রত্যাশিত কালুরঘাট সেতু নির্মাণে অর্থ সংগ্রহের চূড়ান্ত অগ্রগতি এবং সেতু নির্মাণে সরকারের আন্তরিকতার বিষয়টি দৃশ্যমান হয়েছে।”
সেতু নির্মাণের অগ্রগতি শুরু হওয়ায় সরকার প্রধানসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি এ বছরের মধ্যে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করারও দাবি জানান তিনি।
মোমিন বলেন, “সেতু নির্মাণের ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় আর যেন অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো বাধাবিঘ্ন ও বিলম্ব সৃষ্টি না হয়। অর্থায়ন জটিলতা কেটে যাবার মধ্য দিয়ে সেতু বাস্তবায়নের কার্যক্রমে প্রত্যাশিত যে গতি এসেছে সেটি যেন বহাল থাকে।
“একনেকের অনুমোদন, দরপত্রসহ আনুষাঙ্গিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে চলতি বছরের মধ্যে যেন এ সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হয়।”
চট্টগ্রাম নগরীর সঙ্গে বোয়ালখালী ও পটিয়া উপজেলার একাংশের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম এই কালুরঘাট সেতু। সড়ক পথের সব ধরনের যানবাহনের পাশাপাশি এ শতবর্ষী এ সেতু দিয়ে ট্রেনও চলাচল করে। রাজধানী ঢাকার সাথে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের রেল চলাচল করে এ সেতুর উপর দিয়ে।
কর্ণফুলী নদীর উপর নতুন সেতু নির্মাণের জন্য বিভিন্ন সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও তা থেমে যায় নানা কারণে।
চট্টগ্রামের কালুরঘাট পয়েন্টে কর্ণফুলী নদীর ওপর একসঙ্গে রেল ও সড়ক সেতু নির্মাণে ৮১ কোটি ৪৯ লাখ ডলার ঋণ দিচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া। বৃহস্পতিবার দুই দেশের সরকারের মধ্যে এ সংক্রান্ত দুটি চুক্তি সই হয়েছে।
বাংলাদেশ ‘কনস্ট্রাকশন অব রেলওয়ে কাম রোড ব্রিজ অ্যাক্রোস দ্য রিভার কর্ণফুলী অ্যাট কালুরঘাট পয়েন্ট' শীর্ষক প্রকল্পে ইডিসিএফ তহবিল থেকে ৭২ কোটি ৪৭ লাখ ডলার এবং ইডিপিএফ তহবিল থেকে ৯ কোটি ডলার ঋণ পাবে বাংলাদেশ।
ইডিসিএফ ও ইডিপিএফের যৌথ অর্থায়নের এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ২০৩০ সালের মধ্যে এ সেতু নির্মাণ শেষ হবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
রোববার সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল মোমিন বলেন, চট্টগ্রাম-৮ আসনের প্রয়াত দুই সংসদ সদস্য মঈনউদ্দিন খান বাদল ও মোসলেম উদ্দিন আমৃত্যু জাতীয় সংসদে কালুরঘাটে নতুন সেতু নির্মাণের দাবিতে সোচ্চার ছিলেন। সাবেক সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদ ও বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুচ ছালামও সেতু বাস্তবায়নের পদক্ষেপে গতি আনার পথে আন্তরিকতার প্রমাণ দিয়েছেন।
এছাড়া অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানম সেতু বাস্তবায়নের পদক্ষেপ ত্বরান্বিত করতে দৃশ্যমান ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন উল্লেখ করে মোমিন বলেন, “নতুন সেতু নির্মাণের দাবির সাথে বিভিন্ন সময়ে ভূমিকা রাখায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও রেলপথ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর প্রতিও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”
সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক সাংবাদিক মুস্তফা নঈম কালুরঘাট সেতুর অর্থনৈতিক উপযোগিতার বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, “কক্সবাজারে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কারণে টানেল ও শাহ আমানত সেতুর ওপর চাপ তৈরি হবে। নতুন কালুরঘাট সেতু নির্মাণ করা হলে চট্টগ্রামের সাথে এ যোগাযোগ অনেকটা সহজ হবে। পাশাপাশি বান্দরবান জেলা ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সাথে সড়ক পথের দূরত্ব কমে আসবে।”
পরিষদের সদস্য সচিব রমেন দাশগুপ্ত বলেন, সেতু নির্মাণের অর্থায়নের বিষয়ে অগ্রগতি হওয়ায় দক্ষিণ চট্টগ্রাম তথা বোয়ালখালী-পটিয়ার মানুষ আশায় বুক বেঁধেছে। আনাকাঙ্ক্ষিত জটিলতা কিংবা কালক্ষেপণ করে সেটি যেন হতাশায় পরিণত না হয়।
“আমরা আশা করছি, পদ্মা সেতুর মত কালুরঘাট সেতু নির্মাণেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেন নজরদারিতে রাখেন।”
১৯৩০ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে রেল যোগাযোগের জন্য এ সেতু নির্মাণ করা হয়। পরে ১৯৫৮ সালে এ সেতুটি সব ধরনের যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার।
নব্বইয়ের দশকে চট্টগ্রাম দোহাজারী রুটে ট্রেন চলাচল সীমিত হয়ে পড়লে কালুরঘাট সেতুতে যান চলাচলে চাপ বাড়ে। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে দ্বিতীয় কর্ণফুলী সেতু ভেঙে গেলে কালুরঘাট সেতু হয়ে পড়ে নগরীর সাথে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ছয়টি উপজেলা ও কক্সবাজার, বান্দরবান জেলার যোগাযোগের অন্যতম রাস্তা।
স্থানীয়দের ভাষ্য, ২০১০ সালে তৃতীয় শাহ আমানত সেতুর উদ্বোধনের আগ পর্যন্ত কালুরঘাট সেতু দিয়ে ভারী যান চলাচলের কারণ সেতুটি আরও নাজুক হয়ে পড়ে।
২০০১ সালে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করার পর ২০০৪ ও ২০১২ সালে দুই দফায় এ সেতুটি বন্ধ রেখে সংস্কার কাজ করেছিল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
কক্সবাজারের পথে রেল চালুর জন্য কালুরঘাট সেতু সংস্কারের জন্য গত বছরের ১ অগাস্ট থেকে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এর মধ্যে ৫ নভেম্বর কক্সবাজারের পথে রেল চলাচল শুরু হয়। প্রায় শতবর্ষী রেল সেতুটি বর্তমানে সংস্কার চলছে। কয়েক দফায় সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার তারিখ ঘোষণা করলেও কাজ শেষ হয়নি। সংষ্কারের পর অন্যান্য যানবাহন চলাচল উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
পুরানো খবর:
কালুরঘাটে সেতু নির্মাণে ৮২ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া
‘বার্ধক্যের ভার’ বইতে পারছে না কালুরঘাট সেতু
চট্টগ্রাম-৮: আলোচনার কেন্দ্রে একটি সেতু
কালুরঘাট সেতুতে ধাক্কা খেয়ে আটকে গেছে জাহাজ
জাহাজের ধাক্কা: কালুরঘাট সেতুর ‘অর্ধ কোটি টাকার’ ক্ষতি, মামলা
জুনের আগে কালুরঘাট সেতু দিয়ে যান চলাচল হচ্ছে না