সাকিবের মতো হওয়ার বিশ্বাস রাখেন মিরাজ

উন্নতির পথচলায় ছুটে একদিন সাকিবের মতোই ‘জেনুইন’ অলরাউন্ডার হয়ে উঠতে চান মিরাজ।  

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 March 2023, 12:52 PM
Updated : 15 March 2023, 12:52 PM

আরেকজন সাকিব আল হাসান আবার কবে পাবে বাংলাদেশ! এই অলরাউন্ডারকে নিয়ে মুগ্ধতা আর প্রশংসার পাশাপাশি এমন হাহাকারও শোনা যায় কান পাতলে। সেখানেই আশার আশ্বাস শোনালেন মেহেদী হাসান মিরাজ। সাকিবের মতোই অলরাউন্ডার হয়ে ওঠার স্বপ্ন বুকে লালন করে ছুটছেন তিনি। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের মতোই একদিন তিনি একইরকম ভূমিকা রাখতে চান ব্যাটে-বলে।

ক্রিকেট ইতিহাসের গ্রেট সব অলরাউন্ডারের মতো একটা জায়গায় সাকিব আলাদা একটি দলেই থাকেন। বেশির ভাগ অলরাউন্ডারই ব্যাটিং প্রধান বা বোলিং প্রধান অলরাউন্ডার। ‘জেনুইন’ অলরাউন্ডার ইতিহাসেই খুব একটা নেই। সাকিব সেই বিরলদের একজন, ব্যাটিং-বোলিংয়ের যে কোনো একটি দিয়েই তিনি দলে জায়গা করে নিতে পারেন এবং দুটিতেই সেরাদের একজন।

বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে মিরাজও ছিলেন জেনুইন অলরাউন্ডার। চার-পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতেন, অফ স্পিনেও ছিলেন বিশেষজ্ঞ বোলার। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবির্ভাবে বল হাতে চমকপ্রদ পারফরম্যান্সের পর তিনি হয়ে ওঠেন মূলত বোলার। পরে ব্যাটিংয়েও টুকটাক অবদান রাখতে শুরু করেন। তবে অলরাউন্ডার হয়ে ওঠার শুরু গত বছর দুয়েকে। ব্যাট হাতে মিরাজ এখন সব সংস্করণেই অনেক কার্যকর ও ধারাবাহিক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও তাকে অলরাউন্ডার এখন বলাই যায়। জেনুইন অলরাউন্ডার হয়ে ওঠার ছাপও আছে পারফরম্যান্সে।

মিরাজও সেই স্বপ্ন দেখেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ৩-০তে অবিস্মরণীয় জয়ের পরদিন একটি প্রতিষ্ঠানের পণ্যদূত হওয়ার আয়োজনে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হলে তার কাছে প্রশ্ন ছুটে গেল, সাকিবের মতো হওয়ার বিশ্বাস আছে কি না। তার অকপট উত্তর, “বিশ্বাস না করলে তো যেতে পারব না। অবশ্যই বিশ্বাস করি।”

পরে আরেকটু বিশদভাবেই শোনালেন তিনি নিজের স্বপ্ন ও ভাবনা। সাকিবকে প্রেরণা মেনেই সেই পথে ছুটে হয়ে উঠতে চান দলের জন্য আরও কার্যকর একজন।

“দলে অলরাউন্ডার যত থাকবে, দলের অবস্থা তত ভালো থাকবে। দলের সমন্বয় করাটা অনেক ভালো হয়। সাকিব ভাই তো আমরা জানি, বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার এখন, সবসময়ই ছিল। তাকে দেখেই কিন্তু আমরা অনুপ্রাণিত হয়েছি এবং যখন আমরা চোখের সামনে বিশ্বমানের ক্রিকেটার দেখি, তখন অবশ্যই আমাদেরও চাহিদাটা থাকে যে, আমরাও একদিন হব।”

“দিনশেষে, দলের ভেতরে যত বেশি ম্যাচ জেতানোর ক্রিকেটার থাকবে... আমরা যদি বিশ্বাস করি, একটা ক্রিকেটার আছে, কেবল ও-ই ম্যাচ জেতাতে পারে, এটা হলে দল হয়তো এক দিন জিততে পারে। দিনের পর দিন জিততে পারবে না। তবে আমাদের দলে এখন যে কোনো দিন যে কেউ জেতাতে পারে। অবশ্যই নিজের কাছে ভালো লাগছে, যেহেতু ব্যাটিং ভালো হচ্ছে। চেষ্টা করব ব্যাটিং-বোলিংয়ে আরও উন্নতি করার।”

ক্রিকেটার হিসেবে মিরাজ যেমন স্বপ্নাতুর হয়ে সামনে তাকিয়ে, বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলের জন্যও তেমন নতুন আশার রসদ বয়ে এনেছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের অভাবনীয় সাফল্য। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ভুগতে থাকা দলটিই এবার চমকপ্রদ পারফরম্যান্সে হোয়াইটওয়াশ করেছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। ২০ ওভারের ক্রিকেটে নতুন দিনের যে হাতছানি, সেটি অনুসরণ করেই দল এগোবে বলে বিশ্বাস মিরাজের।

“আমরা কিন্তু ওয়ানডেতে অনেক দিন ধরেই অনেক ভালো ক্রিকেটে খেলে আসছি। সবাই বলে, আমরা টি-টোয়েন্টিতে অত ভালো দল নই বা টেস্টে আমরা ভালো করতে পারি না। আমি মনে করি, এটা শুরু হয়েছে আমাদের। টি-টোয়েন্টিতে আমরা ভালো ক্রিকেট খেলে সিরিজ জয় করেছি ও হোয়াইটওয়াশ করেছি।”

“ছোট ছোট যে জিনিসগুলো, দলের ভেতর অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটার এসেছে। যারা অনেক সাহসী, মেধাবী। তারা যদি এই প্রতিভাটা মাঠে কাজে লাগাতে পারে, তাহলে ভালো করবে। সবাই যেভাবে কঠোর পরিশ্রম করছে ও অনুশীলন করছে, এটা আমাদের দলকে অনেক ওপরে নিয়ে যাবে।”

শেষ টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটিংয়ে নামার সুযোগ পাননি মিরাজ, বল হাতে খুব ভালো করেননি। তারপরও বাংলাদেশের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তার। জস বাটলার যখন দারুণ খেলছিলেন, তখন মিরাজের অসাধারণ ফিল্ডিং ও সরাসরি থ্রোয়ে ৪০ রানে রান আউট হন ইংলিশ অধিনায়ক। ম্যাচের পর ইংল্যান্ডের কোচ ম্যাথু মট সেই রান আউটকেই বলেছিলেন টার্নিং পয়েন্ট।

মিরাজ নিজে অবশ্য একার কৃতিত্ব না নিয়ে বললেন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অন্যদের অবদানের কথা।

“প্রত্যেকটা মোমেন্টামই কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ছিল। রান আউট সবসময় ম্যাচ বদলে দেয়। এটা আমরা সবসময় দেখি। একটা মোমেন্টাম চলে আসে। আমি মনে করি, প্রত্যেকটা জিনিসেই আমাদের মোমেন্টাম ছিল। বিশেষ করে ওপেনাররা যখন শুরুর দিকে রান করেছে, ওই উইকেটে হয়তো শুরুর দিকে রান করা সহজ ছিল না। পরে মুস্তাফিজের ব্রেক থ্রু, ওই সময় সে সেট ব্যাটসম্যানকে আউট করে দিয়েছে এবং আমার রান আউটটা।”

“তারপর আবার হাসান মাহমুদ বল করেছে, তাসকিন বল করেছে। ওভারল আমি মনে করি কালকের ম্যাচটা দল অনুযায়ী খেলা হয়েছে এবং সবাই অবদান রেখেছে। এজন্য আমরা ম্যাচ জিতেছি। 

যে সংস্করণে বাংলাদেশ সবচেয়ে ভালো খেলে, সেই ওয়ানডে সিরিজে তারা এবার ইংল্যান্ডের কাছে ২-১ ব্যবধানে হেরে গেছে। প্রথম ওয়ানডেতে ২০৯ রানের পুঁজি নিয়েও ইংলিশদের বাগে পেয়েছিলেন মিরাজরা, তবে ১১৪ রানের অসাধারণ অপরাজিত ইনিংস সেদিন দলকে জিতিয়ে দেন দাভিদ মালান।

টি-টোয়েন্টি জয়ের পর ওয়ানডে নিয়ে আক্ষেপ করলেন মিরাজ। স্বীকার করে নিলেন পরিকল্পনায় কিছু ভুলের কথাও।

“ওয়ানডেতে আমরা দুর্ভাগ্যজনকভাবে হেরে গিয়েছি। বিশেষ করে প্রথম ম্যাচটা খুব কাছে গিয়ে হেরেছিলাম। আরেকটা ম্যাচ জিততে পারলে সিরিজ জিততাম। ওয়ানডেতে কিছু জায়গায় ঘাটতি ছিল, চেষ্টা করেছি সেগুলোর পুনরাবৃত্তি যেন টি-টোয়েন্টিতে না হয়। আমরা ইংল্যান্ডকে নিয়ে ভালোমতো পরিকল্পনা করেছিলাম। কোন জায়গায় কীভাবে বোলিং করব, কোন ব্যাটসম্যানকে কীভাবে করব। ব্যাটসম্যানরাও পরিকল্পনা করেছিল যে কোন বোলারকে কীভাবে খেলবে। সবাই পরিকল্পনা করেছি। অনেক সময় পরিকল্পনা সফল হয়, অনেক সময় হয় না।”

“ওয়ানডেতে হয়তো পরিকল্পনায় আমরা ছোট ছোট কিছু ভুল করেছি। আমরা মানুষ তো, আমরা ভুল করবই। পরে টি-টোয়েন্টিতে যখন এসেছি, ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করেছি এবং বাস্তবায়ন খুব ভালো হয়েছে। সেজন্য আমরা টি-টোয়েন্টিতে সফল হয়েছি।”

এই সাফল্যের পথ ধরেই এখন এগোতে চান মিরাজ। পথে যদিও প্রতিবন্ধকতা আসবে, হোঁচট খেতে হবে। প্রতিনিয়ত নিজেদের সমৃদ্ধ করে সব বাধা জয় করতে চান তিনি।

“আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপই একটা চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলবেন। অবশ্যই উন্নতির শেষ নেই, প্রতিদিন উন্নতি করতে হবে। আমি যদি নিজেকে একটা জায়গায় রাখি, তাহলে কিন্তু আমি ওপরে যেতে পারব না। চ্যালেঞ্জ এটাই, নিজেকে প্রতিনিয়ত বদলাতে হবে এবং উন্নতি করতে হবে।”