রেকর্ড রাঙা অভিষেকেও হৃদয়ের ৮ রানের আক্ষেপ

বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডে অভিষেকে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়লেও একটুর জন্য সেঞ্চুরির ইতিহাস গড়তে পারলেন না ২২ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান।

ক্রীড়া প্রতিবেদকসিলেট থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 March 2023, 12:56 PM
Updated : 18 March 2023, 12:56 PM

হেলমেটের গ্রিলের ফাঁক দিকে তৌহিদ হৃদয়ের মুখটা পুরোপুরি বোঝা যাচ্ছিল না। তবে সেখানে হতাশার ছাপই থাকার কথা। মাঠে থাকা দর্শকেরা তখন তুমুল করতালিতে অভিনন্দন জানাচ্ছেন তাকে। দুর্দান্ত ইনিংসটির পর এমন অভিবাদনই পাওয়ার কথা। হৃদয়ের হৃদয়ে তবু কিছুটা হাহাকার জেগে ওঠার কথা। ৯২ রান করার তৃপ্তির চেয়ে আর ৮ রান করতে না পারার অপ্রাপ্তিই ঠিক ওই মুহূর্তে বুকে বাজার কথা বেশি করে!

ইতিহাসের হাতছানি দেখতে পাচ্ছিলেন তিনি। ওয়ানডে ক্রিকেটের ৫২ বছরের ইতিহাসে অভিষেকে চার নম্বরের নিচে নেমে সেঞ্চুরি নেই কারও। অনন্য কীর্তি করা থেকে স্রেফ দুটি বাউন্ডারি দূরে ছিলেন হৃদয়। কিন্তু হলো না। গ্রাহাম হিউমের ফুল লেংথ বল কবজির মোচড়ে খেলার চেষ্টায় ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে বল ছোবল দিল স্টাম্পে। গোটা স্টেডিয়ামের ভারী নিঃশ্বাস একযোগে ভেসে এলো তাৎক্ষণিক হতাশার বার্তা ছড়িয়ে।

বিশ্ব রেকর্ড গড়া হলো না। দেশের ‘প্রথমও’ হতে পারলেন না। বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডে অভিষেকে সেঞ্চুরি নেই কারও।

তবে প্রাপ্তির পথ ধরে অনেকটা দূর ছুটে গেছেন বলেই অপ্রাপ্তিগুলো নিয়ে এত আলোচনা। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে সিলেটে শনিবার আউট হওয়ার আগে তিনি যা করেছেন, রেকর্ড বইয়ে তার নাম উঠে গেছে তাতেই।

এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, নিজের ছাপ রাখতে পেরেছেন। অভিষেকেই মেলে ধরতে পেরেছেন নিজেকে। যে চাওয়া নিয়ে নির্বাচকরা ও টিম ম্যানেজমেন্ট তাকে দলে এনেছেন, যে ভাবনা থেকে তাকে পাঁচ নম্বরে নামানো হয়েছে, তা তিনি পুরোপুরি পূরণ করেছেন ৮ চার ও ২ ছক্কায় ৮৫ বলে ৯২ রানের ইনিংসে।

৮১ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর ক্রিজে যান তিনি। দলের রান রেট তখন পাঁচের নিচে। কিন্তু হৃদয়ের ব্যাটে চাপের রেশমাত্র দেখা যায়নি। ছিল না অভিষেকের স্নায়ুর চাপের কোনো চিহ্ন। যেন বাইরে থেকেই থিতু হয়ে গিয়েছিলেন। দ্বিতীয় বলেই বাউন্ডারি দিয়ে তার শুরু। এরপর সাবলিল ব্যাটিংয়ে এগোতে থাকেন।

রানিং বিটুউইন দা উইকেট ছিল তার দুর্দান্ত। এক-দুই নেওয়ার পাশাপাশি বাজে বলকে সাজা দিতে ভুল করেননি। শট খেলেছেন উইকেটের চারপাশে। চাবুকের মতো ব্যাট স্পিডে পুল শটগুলো জানান দিয়েছে তার সামর্থ্যের।

চাপের মধ্যে নেমেও ফিফটিতে পৌঁছে যান তিনি ৫৫ বলে। পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে পরে রানের গতি বাড়ান আরও। সাকিব আল হাসানের সঙ্গে গড়েন ১২৫ বলে ১৩৫ রানের জুটি, মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে ৪৯ বলে ৮০ রানের।

শেষ পর্যন্ত সেঞ্চুরি করতে পারেননি। তবে এক ঝলক মুক্ত বাতাস তিনি বইয়ে দিয়েছেন। প্রতিপক্ষ যদিও আয়ারল্যান্ড, আরও কঠিন পরীক্ষা তার সামনে আসবে। তবে শুরুটা দারুণ রকম আশা জাগানিয়া।

বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডে অভিষেকে ফিফটি ছিল আগে কেবল দুজনের। ২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ছয় নম্বরে নেমে ফরহাদ রেজা করেছিলেন ৫০। ২০১১ সালে একই প্রতিপক্ষের সঙ্গে আটে নেমে নাসির হোসেন করেছিলেন ৬৩।

অভিষেকে পাঁচ নম্বরে নেমে আগের সর্বোচ্চ ছিল ফয়সাল হোসেনের ১৭।

হৃদয় এখন দুটি রেকর্ডেই দেশের সবার ওপরে।

অভিষেকে ৫ নম্বরে নেমে সর্বোচ্চ ইনিংসের বিশ্বরেকর্ড সংযুক্ত আরব আমিরাতের স্বপ্নীল পাতিলের। ২০১৪ সালে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৯ রানে অপরাজিত ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যাটসম্যান। হৃদয়ের নাম এখন তার পরই।

ওয়ানডে অভিষেকে সেঞ্চুরি আছে বিশ্বক্রিকেটে ১৬ জনের। সবশেষ ২০২১ সালে করেছেন আফগানিস্তানের রহমানউল্লাহ গুরবাজ। হৃদয় পারলেন না সপ্তদশ হতে, বরং হয়ে গেলেন ‘সপ্তম।’ ওয়ানডে অভিষেকে নব্বইয়ে থমকে যাওয়া ব্যাটসম্যান এখন হৃদয়কে নিয়ে ৭ জন।

হৃদয়ের অভিষেক আর ফিরে আসবে না। তবে তিনি ফিরবেন আবার, ব্যাট হাতে। বাংলাদেশের নতুন দিনের বার্তা নিয়ে। নতুন যুগের আশা হয়ে।