ব্যাটিং-বোলিংয়ের সম্মিলিত ব্যর্থতায় একের পর এক ম্যাচ হেরে চলেছে গতবার চমক দেখানো সিলেট স্ট্রাইকার্স, তবে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা ছাড়ছে না দলটি।
Published : 31 Jan 2024, 09:03 AM
প্রথম জয়ের খোঁজে ঘরের মাঠে সিলেট স্ট্রাইকার্স। কিন্তু গ্যালারি থেকে কিছুক্ষণ পরপরই শোনা গেল প্রতিপক্ষ ফরচুন বরিশালের পক্ষে স্লোগান। গত বিপিএলে তো প্রশ্নই আসে না, চলতি আসরের শুরুতেও এমন কিছু ভাবা ছিল কঠিন। সেই অভাবনীয় কিছুর দেখাই এবার মিলল সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।
বিপিএলে এখনও প্রথাগত ‘হোম এন্ড অ্যাওয়ে’ পদ্ধতি শুরু করতে পারেনি আয়োজকরা। তবে বিপুল দর্শক সমর্থনে গত আসরে সিলেটের মাঠকে সত্যিকার অর্থেই নিজেদের ‘হোম’ বানিয়ে ফেলেছিল সিলেট। প্রতি ম্যাচে গ্যালারিতে দেখা গিয়েছিল নিজেদের দলের জার্সি গায়ে দর্শকের জোয়ার। সেই মাঠেই এবার মঙ্গলবার রাতের ম্যাচে প্রতিপক্ষ দলের নামে স্লোগান শুনেছে দলটি।
এর কারণ অবশ্য দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার। মিরপুরে দুই হারের পর সিলেটে এখন পর্যন্ত খেলা তিন ম্যাচেও জয়ের দেখা পায়নি মাশরাফি বিন মুর্তজার নেতৃত্বাধীন দল। সবশেষ পরাজয় মঙ্গলবার বরিশালের বিপক্ষে ৪৯ রানে। বোলাররা হতাশ করার পর বিবর্ণ ছিলেন ব্যাটসম্যানরাও।
গত আসরের রানার্স-আপ দলটি তাই এখনও ধুঁকছে প্রথম জয়ের খোঁজে। বিপিএলের ইতিহাসে এর চেয়ে বাজে শুরু দেখা গেছে স্রেফ একবার। সেটিও প্রায় এক যুগ আগে, প্রথম আসরে। ২০১২ সালের বিপিএলে প্রথম সাত ম্যাচে টানা হারের পর পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে থেকে বিদায় নেয় সিলেট রয়্যালস।
বিপিএলে সবচেয়ে বেশিবার মালিকানা বদল হয়েছে সিলেট ফ্র্যাঞ্চাইজিরই। ফ্র্যাঞ্চাইজিটি গত বছর পেয়েছিল নিজেদের সেরা সাফল্য। সেই দলই এবার পড়েছে প্রথম আসরের নেতিবাচক ফলের পুনরাবৃত্তির শঙ্কায়। তবে এখনও সাত ম্যাচ বাকি থাকায় ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনাও দেখছে সিলেট।
কুমিল্লার কাছে হারের পর সংবাদ সম্মেলনে এর সম্ভাব্য পথটাও বলে যান সিলেটের ইংলিশ অলরাউন্ডার বেনি হাওয়েল।
“হ্যাঁ অবশ্যই (এক জয় পরিস্থিতি বদলে দেবে)… আমাদের পূর্ণ বিশ্বাস আছে। আমরা অবশ্যই হতাশ। অবশ্যই টানা পাঁচ ম্যাচ হারতে চাইনি। কেউই তা চায় না। আমরা এখন ঘুরে দাঁড়াতে চাই। আমাদের শুধু পরিকল্পনাটা ঠিকঠাক মতো বাস্তবায়ন করতে হবে।”
“আমরা অবশ্যই পাঁচ ম্যাচে পাঁচটি হারতে চাইনি। এটি আদর্শ কিছু নয়। তবে এখনও সব শেষ হয়ে যায়নি। বিভিন্ন ম্যাচে আমরা যেসব জিনিস ঠিক করছি, সেগুলো সব একই ম্যাচে করতে হবে আমাদের। আশা করি, পরের ম্যাচেই আমরা সেটি করতে পারব। সামনের কথাই এখন ভাবতে হবে।”
গত বিপিএলে সিলেটের সাফল্যের বড় কারিগর ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে সেবার আসরের সর্বোচ্চ ৫১৬ রান করেন তরুণ বাঁহাতি ওপেনার। এবার তাই প্লেয়ার্স ড্রাফটের অনেক আগেই শান্তকে ধরে রাখে সিলেট।
সেই শান্ত এবার নেই ছন্দে। পাঁচ ম্যাচে তার সংগ্রহ সাকল্যে ৬৯ রান, স্ট্রাইক রেট একশর নিচে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে শান্তর ব্যাটিং নিয়ে।
অবশ্য শান্তর মতোই বেগতিক অবস্থা সিলেটের বেশিরভাগ ব্যাটসম্যানের। মোহাম্মদ মিঠুন প্রথম ম্যাচে ভালো করলেও পরে হারিয়ে ফেলেন নিজেকে। ইয়াসির আলি চৌধুরি প্রথম তিন ম্যাচের ব্যর্থতার পর জায়গা হারান একাদশে। ব্যতিক্রম শুধু জাকির হাসান। পাঁচ ম্যাচে একটি ফিফটি ও তিনটি ত্রিশ ছাড়ানো ইনিংসে তার সংগ্রহ এখন পর্যন্ত আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৮৯ রান।
আর কোনো ব্যাটসম্যান সব মিলিয়ে ৭৫ রানও করতে পারেননি। সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় সেরা দশেও নেই সিলেটের কোনো বোলার। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা বেশির ভাগ ম্যাচে বোলিংই করতে পারছেন না। যেটুকু করছেন, সেখানে রাখতে পারছেন না প্রভাব। ব্যাট হাতেও তার অবস্থা তথৈবচ। দল যখন টানা হারতে থাকে, নেতৃত্বও তখন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া স্বাভাবিক।
তবে করুণ অবস্থা সিলেটের অন্য মূল বোলারদেরও। তানজিম হাসান ৪ ম্যাচ খেলে ৩ উইকেট নিতে পেরেছেন ওভারপ্রতি প্রায় সাড়ে ৯ করে রান দিয়ে। টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে বলাবলি হচ্ছিল, মাশরাফির কারণে সুযোগ পাচ্ছেন না রেজাউর রহমান রাজার মতো সম্ভাবনাময় পেসার। কিন্তু সেই রেজাউর পরে ৩ ম্যাচ খেলে উইকেট পাননি একটিও। রান দিয়েছেন ওভারপ্রতি প্রায় সাড়ে ৮।