টুর্নামেন্ট সেরার লড়াইয়ে থাকবেন সাকিবও

বিশ্বকাপের উত্তেজনা-রোমাঞ্চ থেকে এখন অনেক দূরে সাকিব আল হাসান। স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে ছুটি কাটাচ্ছেন সুইজারল্যান্ড-ইতালিতে। দেশে বাংলাদেশ দলের পরবর্তী সফর নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। বিশ্বকাপে অষ্টম হওয়া দলের ফাইনালে উপস্থিতির কোনো কারণ নেই। এরপরও সাকিবের সৌজন্যে লর্ডসের ফাইনালে উচ্চারিত হতে পারে বাংলাদেশের নাম; যদি এই অলরাউন্ডার জেতেন ‘ম্যান অব দা টুর্নামেন্ট’ পুরস্কার।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিলন্ডন থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 July 2019, 03:17 PM
Updated : 13 July 2019, 03:49 PM

সম্ভাবনা যদিও সামান্য। মূল কারণ, তার দল উঠতে পারেনি বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে। সাকিবের পারফরম্যান্স আরও স্পেশাল হয়ে উঠেছে এই কারণেই। অষ্টম হওয়া দলের একজন ফাইনাল পর্যন্ত টুর্নামেন্ট সেরার লড়াইয়ে থাকলে তার পারফরম্যান্সের বিশালত্ব ফুটে ওঠে।

৮ ইনিংস খেলে এবার ৮৬.৫৬ গড় ও ৯৬.০৩ স্ট্রাইক রেটে ৬০৬ রান করেছেন সাকিব। বল হাতে উইকেট ১১টি। বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের নজির গড়েছেন তিনি। আগে কখনও এক আসরে ১০ উইকেটের পাশে ৪০০ রানও ছিল না কারও। সাকিবের সম্ভাবনা কিছুটা উজ্জ্বল হয়েছে সেমি-ফাইনাল থেকে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার বিদায়ে। এই দুই দলের বেশ কজন ছিলেন টুর্নামেন্ট সেরার লড়াইয়ে।

এক আসরে ৫ সেঞ্চুরির অভাবনীয় কীর্তি গড়া রোহিত শর্মা সেমি-ফাইনালে ফিরেছেন কেবল ১ রানে। টুর্নামেন্ট শেষ করেছেন ৬৪৮ রানে। ফাইনালের আগ পর্যন্ত তিনিই সবার ওপরে রান সংগ্রহে। সাকিবের চেয়ে ১ ইনিংস বেশি খেলে রানে একটু এগিয়ে থাকলেও রোহিতের নেই উইকেট। ভারতীয় ওপেনার টুর্নামেন্ট সেরার লড়াই থেকেও খানিকটা ছিটকে গেছেন বলা যায়।

একই চিত্র ডেভিড ওয়ার্নারের। সাকিবের চেয়ে ২ ইনিংস বেশি খেলে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনারের রান ৬৪৭। টুর্নামেন্ট সেরা হওয়ার লড়াইয়ে এখন আর তিনি নাই বললেই চলে। অস্ট্রেলিয়ার আরেকজন অবশ্য এখনও বেশ ভালোভাবেই আছে দৌড়ে। এক আসরে রেকর্ড ২৭ উইকেট নেওয়া মিচেল স্টার্ক নিশ্চিতভাবেই থাকবেন বিবেচনায়।

বাস্তব সম্ভাবনায় টুর্নামেন্ট সেরা হওয়ার দৌড়ে এখন আছেন বলা যায় ফাইনালের দুই দলের বেশ কজন। ১০ ইনিংসে ৫৪৯ রান করেছেন জো রুট। ফাইনালে সেঞ্চুরি করলে রান স্কোরারদের তালিকায় সবার ওপরে ওঠার পাশাপাশি সেরা খেলোয়াড়ের লড়াইয়েও হয়ত থাকবে শীর্ষে।

রুটের সতীর্থ বেন স্টোকস ৫৪.৪২ গড়ে রান করেছেন ৩৮১, উইকেট নিয়েছেন ৭টি। ফাইনালে যদি দারুণ অলরাউন্ড পারফরম্যান্স দেখাতে পারেন এই অলরাউন্ডার, যদি তার দল জেতে শিরোপা, প্রবলভাবে বিবেচনায় আসবেন তিনিও।

ইংল্যান্ডের জফরা আর্চার ১০ ম্যাচে নিয়েছেন ১৯ উইকেট, নিউ জিল্যান্ডের লকি ফার্গুসন ৮ ম্যাচে ১৮টি। ফাইনালে দারুণ পারফরম্যান্সে দলের জয়ে অবদান রাখতে পারলে সেরার লড়াইয়ে দুই গতি তারকাকেও রাখতে হবে গোনায়।

ফাইনালের আগে টুর্নামেন্ট সেরার সম্ভাবনায় সবচেয়ে এগিয়ে হয়তো কেন উইলিয়ামসন। ৯১.৩৩ গড়ে ৫৪৮ রান করেছেন। তবে কেবল সংখ্যা দিয়ে বিচার করা যাবে না তার পারফরম্যান্স। বলতে গেলে টুর্নামেন্ট জুড়ে দলের ব্যাটিংকে একা বয়ে নিয়েছেন নিউ জিল্যান্ড অধিনায়ক। দলের প্রয়োজনের সময় দুর্দান্ত সব ইনিংস খেলে এগিয়ে নিয়েছেন দলকে। সঙ্গে অসাধারণ নেতৃত্ব তো আছেই। ম্যান অব দা টুর্নামেন্টের বিবেচনায় আপাতত ফেভারিট উইলিয়ামসনই।

সাকিবকে টুর্নামেন্ট সেরা হতে হলে তাই ফাইনালে এই সবার ব্যর্থ হতে হবে। পক্ষে আসতে হবে আরও অনেক কিছু। বাস্তব সম্ভাবনা তাই কমই।

তবে প্রবলভাবে বিবেচনায় থাকাও যে একটা জয়, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপচারিতায় সেটি মনে করিয়ে দিলেন নিউ জিল্যান্ডের বোলিং কোচ ও বাংলাদেশের সাবেক কোচ শেন জার্গেনসেন।

“সাকিব যেভাবে খেলেছে, টুর্নামেন্ট সেরার ট্রফি পেলে অবাক হব না। তবে দল যেহেতু কোয়ালিফাই করতে পারেনি, তাকে বেছে নেওয়া কঠিন হবে বিচারকদের জন্য। আমি বরং মনে করি, সে যে এখনও লড়াইয়ে আছে, এটিও একটি স্বীকৃতি।”

এই ইংল্যান্ডেই ১৯৯৯ বিশ্বকাপ জয়ী অস্ট্রেলিয়া দলের সদস্য, সাবেক পেসার ডেমিয়েন ফ্লেমিংকে পাওয়া গেল লর্ডসের প্রেসবক্সের নিচে। সাকিবের সম্ভাবনা নিয়ে তার ধারণাও অনেকটা জার্গেনসেনের মতোই।

 “সেমি-ফাইনালে না ওঠা দলের কেউ টুর্নামেন্ট সেরা হলে সেটি হবে বিস্ময়কর। তবে সাকিবের যা পারফরম্যান্স, তাতে সে সেরা হওয়ার দাবি করতেই পারে। বিচারকদের জন্য কঠিন হবে। আমার ধারণা, শেষ পর্যন্ত হয়তো ফাইনালের দুই দলের কেউ পাবে।”

সবদিক বিবেচনায় আরেকটু বিশদভাবে বিষয়টি ফুটিয়ে তুলতে পারলেন হয়তো ডেইলি মেইলের ক্রিকেট প্রতিনিধি ও ক্রিকেটের বাইবেল খ্যাত উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমানাকের সম্পাদক লরেন্স বুথ।

“সাকিব জিতলে সেটি এদিক থেকে অস্বাভাবিক হবে যে তার দল সেমি-ফাইনালেও উঠতে পারেনি। কিন্তু সে যদি সত্যিই পুরস্কারটি পায়, সেটি যোগ্য হিসেবেই পাবে। আমার মনে হয়, কারও অভিযোগ করার কিছু থাকবে না। লম্বা সময় যে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান স্কোরার ছিল, ১১ টি উইকেট পেয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরিতে জিতিয়েছে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরিটিও অসাধারণ ছিল। বিশ্বকাপে এরকম পারফরম্যান্স অনেকের স্বপ্ন থাকে।“

“শুরুতে যেটা বললাম, সেমি-ফাইনালে না ওঠা দলের কেউ টুর্নামেন্ট সেরা হওয়াটা অস্বাভাবিক। তবে সেরা হওয়ার জন্য সম্ভব সব কিছুই সে করেছে।”

আপাতত ওই সামান্য আশাতেই হয়তো থাকবে বাংলাদেশের ক্রিকেট। ইংল্যান্ড-নিউ জিল্যান্ডের লড়াই শেষে বাংলাদেশের প্রাপ্তির সুযোগ থাকবে ওইটুকুই।