২০০৫ অ্যাশেজের জোয়ার ফিরবে ইংলিশ ক্রিকেটে?
লন্ডন থেকে আরিফুল ইসলাম রনি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 12 Jul 2019 06:48 PM BdST Updated: 12 Jul 2019 06:48 PM BdST
২৭ বছর পর বিশ্বকাপ ফাইনালে ইংল্যান্ড। সেটিও দেশের মাটিতে। ২০০৫ অ্যাশেজ জয়ের পাশাপাশি এবারের ফাইনাল সম্ভবত গত ৩০ বছরে ইংলিশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ঘটনা। তবে আরেকটি দিক থেকেও এই ফাইনাল হতে যাচ্ছে মাইলফলক। ১৪ বছর পর দেশটিতে ক্রিকেট দেখা যাবে ‘ফ্রি টু এয়ার’ চ্যানেলে! ধারণা করা হচ্ছে, আবার ক্রিকেটের জোয়ার ফিরতে পারে ইংল্যান্ডে।
ক্রিকেটের জন্ম ইংল্যান্ডে হলেও এখানে ক্রিকেট কখনোই তুমুল জনপ্রিয় ছিল না। ফুটবল, রাগবির জনপ্রিয়তার সঙ্গে তো তুলনাই হয় না। তবে ২০০৫ অ্যাশেজের সময়টায় গোটা ইংল্যান্ড বুঁদ ছিল ক্রিকেটেই।
সেই অ্যাশেজ জয়ের পর প্রায় গোটা দেশ রূপ নিয়েছিল উৎসবের জনপদে। ক্রিকেটাররা হয়ে উঠেছিলেন মহাতারকা। তারা বাইরে বের হলেই লোক জড়ো হয়ে যেত। অ্যাশেজ জয়ী অধিনায়ক মাইকেল ভন, জয়ের অন্যতম নায়ক অ্যান্ড্রু ফ্লিন্টফের বাড়ির বাইরে লোকের ভিড় লেগেই থাকত। তাদের পেছনে স্পন্সরদের ছুটোছুটিও লেগে ছিল।
দেড় যুগ পর ইংল্যান্ড সেবার অ্যাশেজ জিতেছিল, এটি তো একটি কারণ ছিলই। তার চেয়েও বড় কারণ ছিল, ওই অ্যাশেজ দেখিয়েছিল চ্যানেল ফোর, যারা ছিল টেরিস্ট্রিয়াল চ্যানেল। সিরিজটিও ছিল তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং ক্রিকেটীয় মানে দুর্দান্ত। সব মিলিয়ে ইংল্যান্ডে ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছিল ক্রিকেট।
সেই সাফল্যে যখন ক্রিকেট হয়ে ওঠার কথা সার্বজনীন, উল্টো সেই অ্যাশেজের পর বন্ধ হয়ে যায় ক্রিকেটের জন্য সাধারণ্যের দুয়ার। ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) সম্প্রচার স্বত্ব পায় স্কাই স্পোর্টস, যারা ‘পে চ্যানেল’। মোটা অঙ্কের অর্থে ফুলেফেঁপে ওঠে বোর্ডের কোষাগার। কিন্তু ক্রিকেটের বিস্তার থমকে যায়।
ক্রমেই তাই সংকুচিত হয়ে আসতে থাকে ইংল্যান্ডে ক্রিকেটের পরিধি। এখনও ইংল্যান্ডের বিভিন্ন পাব, বার বা রেস্টুরেন্টে স্কাই স্পোর্টস থাকলে বড় করে ব্যানার থাকে, ‘এখানে স্কাই স্পোর্টস দেখা যায়’। স্কাই থাকা এখানে বড় বিজ্ঞাপন, এই চ্যানেল এখানে এতটাই বড় ব্যাপার।
২০০৫ অ্যাশেজের পর ২০০৯ অ্যাশেজে দেশের মাটিতে জিতেছে ইংল্যান্ড। ২০১০-১১ অ্যাশেজ জিতেছে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে। আবার দেশের মাটিতে জিতেছে ২০১৩ ও ২০১৫ অ্যাশেজ। কিন্তু ক্রিকেটের জোয়ার আসা বহুদূর, জনপ্রিয়তার স্রোত খুব বেগবানও দেখা যায়নি। মূল কারণ মনে করা হয়, পে চ্যানেলে ক্রিকেট সম্প্রচার।
বিবিসির একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, ২০০৫ অ্যাশেজের সময় চ্যানেল ফোরের একদিনে সর্বোচ্চ দর্শক ছিল ৮২ লাখ, চতুর্থ টেস্ট জিতে যেদিন ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ইংল্যান্ড। অথচ ২০০৯ অ্যাশেজে স্কাই স্পোর্টসের একদিনের সর্বোচ্চ দর্শক ছিল কেবল ১৯ লাখ, ২০১৩ অ্যাশেজে ১৩ লাখ।
২০০৯ থেকে এই ১০ বছরে ছয় অ্যাশেজের চারটিই জিতেছে ইংল্যান্ড। কিন্তু বিবিসির ‘স্পোর্টস পারসোনালিটি অব দা ইয়ার’ পুরষ্কারে দর্শক ভোটে সেরা তিনে আসতে পারেনি কোনো ক্রিকেটার। সবশেষ সেই ২০০৫ অ্যাশেজ জয়ের পর সেরা তিনে ছিলে ফ্লিনটফ।

গত ১৪ বছরে ক্রিকেট যেহেতু নিত্য চর্চার প্রসঙ্গ হতে পারেনি, নতুন প্রজন্ম ক্রিকেট নায়কদের দেখতে পায়নি টিভিতে, ২০০৫ সালের পরের প্রজন্মগুলো তাই হয়ে উঠেছে ক্রিকেটবিমুখ। এবার বিশ্বকাপ চলার সময়ই এখানকার সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে, বিশ্বকাপ নিয়ে অতটা উত্তেজনা নেই ইংল্যান্ডে। একটা বড় অংশ সেভাবে জানেও না যে এখানে বিশ্বকাপ হচ্ছে।
ইংল্যান্ড সেমি-ফাইনাল নিশ্চিত করার পর অবশ্য উত্তেজনার আঁচ কিছুটা টের পাওয়া যাচ্ছে। সংবাদমাধ্যমে গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করা হচ্ছে। লোকের মুখে মুখে ক্রিকেট ফিরতে শুরু করেছে। বার্মিংহামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেমি-ফাইনালে ইংল্যান্ডের সমর্থনে গ্যালারি ছিল উত্তাল, নেচে-গেয়ে, স্লোগানে দলকে উৎসাহ জুগিয়ে গেছেন দর্শক।
ইংল্যান্ড সেমি-ফাইনালে ওঠার পর স্কাই স্পোর্টস ঘোষণা দিয়েছিল, ইংল্যান্ড ফাইনালে উঠলে তারা ম্যাচটি ‘ফ্রি টু এয়ার’ চ্যানেলে দেখাবে। চ্যানেল ফোরের সঙ্গে তাদের চুক্তিও হয়ে গেছে। লোকের ঘরে ঘরে আবার ক্রিকেট পৌঁছে যাচ্ছে, সেই রোমাঞ্চ স্পর্শ করছে ইংল্যান্ড অধিনায়ক ওয়েন মর্গ্যানকে।
“দারুণ ব্যাপার এটি। ২০০৫ অ্যাশেজে আমার মতে, ক্রিকেট হয়ে উঠেছিল প্রাণবন্ত ও আপন। সেই গ্রীষ্ম জুড়েই পত্রপত্রিকার সামনের ও পেছনের পাতা থাকত ক্রিকেটের দখলে, সবার মুখে মুখে ছিল ক্রিকেট। খেলাটার জন্য দারুণ ব্যাপার যে আমাদের ভালোবাসার ক্রিকেট আবার ফ্রি টু এয়ার চ্যানেলে হচ্ছে।”
একটি ম্যাচেই হয়ত ক্রিকেট আবার জনপ্রিয়তার চূড়ায় উঠবে না। তবে শুরুটা হতে পারে। অনেক শিশু-কিশোর হয়তো এ দিনই প্রথম টিভিতে ক্রিকেট দেখবে, নতুন অনেকে আগ্রহী হবে, অনেকে ভবিষ্যতের স্বপ্ন আঁকবে। আবার ক্রিকেট নিয়ে চর্চার শুরু হবে এই দেশে।
আগামী বছর থেকে অবশ্য ছেলে ও মেয়েদের ক্রিকেট মিলিয়ে প্রতি গ্রীষ্মে ২১টি ম্যাচ ‘ফ্রি টু এয়ার’ সম্প্রচারে চুক্তি করেছে স্কাই ও বিবিসি। তবে বিশ্বকাপ ফাইনালের আবেদন ও বিশালত্ব তো অনেক। এই ফাইনাল দিয়েই হয়তো হতে পারে ইংলিশ ক্রিকেটের নতুন যুগের সূচনা। বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নপূরণ দিয়ে যেমন, তেমনি লোকের হৃদয়ে আবার ঠাঁই নেওয়ার ক্ষেত্রেও।
-
আইসিসির বিশ্বকাপ একাদশে সাকিব
-
অস্ট্রেলিয়ান কোচের হাত ধরে ইংল্যান্ডের বিশ্বজয়
-
ওভারথ্রোয়ে ইংল্যান্ডকে ৬ রান দেওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল: টাফেল
-
সতীর্থরা আস্থা রাখায় খুশি আর্চার
-
ওয়ানডে ইতিহাসের সেরা ম্যাচ?
-
আফগানিস্তান ‘এ’ দলের কাছে সিরিজ হারল ইমরুলরা
-
স্টোকসের যে ডাইভ ইংল্যান্ডকে নিল ট্রফির কাছে
-
বাউন্ডারি সংখ্যায় ট্রফির নিষ্পত্তি কতটা যৌক্তিক?
WARNING:
Any unauthorised use or reproduction of bdnews24.com content for commercial purposes is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.
সর্বাধিক পঠিত
- শেষ বিকেলে পথ হারিয়ে শঙ্কায় বাংলাদেশ
- সিটিতে আসার আগে ম্যাচে ৬ গোল আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের!
- রাহুলদের বিদায় করে টিকে রইলেন কোহলিরা
- ৫ ট্রফি জয়ের কীর্তি গড়ে আবেগাপ্লুত মরিনিয়ো
- বাংলালিংকের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিল নগর বাউল ও মাইলস
- ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর বাবার নামে বিদ্যুৎ বিল আসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়
- দেখিয়ে দিতে চান আজার
- ঢাবিতে ফের সংঘর্ষে ছাত্রলীগ-ছাত্রদল
- সাবেক ওসি সিদ্দিকের ‘৫১ কোটি টাকার সম্পত্তি’ বাজেয়াপ্তের আবেদন
- প্যারিসের রাস্তায় মুন্সীগঞ্জের যুবককে পিটিয়ে হত্যা