উইলিয়ামসনের বীরত্বে দ. আফ্রিকাকে হারাল নিউ জিল্যান্ড

বোলারদের জন্য বেশ সহায়তা আছে এমন উইকেটে রান তাড়ায় দলকে পথ দেখালেন কেন উইলিয়ামসন। ভীষণ চাপেও অধিনায়কের দারুণ সেঞ্চুরিতে বিশ্বকাপে অজেয় যাত্রা ধরে রাখল নিউ জিল্যান্ড। দক্ষিণ আফ্রিকার সেমি-ফাইনালের আশা কার্যত শেষ করে দিয়ে উঠে গেল পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 June 2019, 02:47 PM
Updated : 19 June 2019, 07:44 PM

বার্মিংহ্যামের এজবাস্টনে ৪ উইকেটে জিতেছে নিউ জিল্যান্ড। ২৪২ রানের লক্ষ্য ৩ বল বাকি থাকতে পেরিয়ে যায় তারা।  

আউটফিল্ড ভেজা থাকায় বুধবার দেরিতে শুরু হওয়া ম্যাচের দৈর্ঘ্য নেমে আসে ৪৯ ওভারে। কন্ডিশনের সুবিধা দারুণভাবে কাজে লাগান নিউ জিল্যান্ডের বোলাররা। কঠিন করে তোলেন রান নেওয়া। কঠিন সময়ে মাটি কামড়ে পড়ে থেকে দলকে টানেন হাশিম আমলা। শেষের দিকে আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে দলকে ৬ উইকেটে ২৪১ রানে নিয়ে যান রাসি ফন ডার ডাসেন।

চাপের মধ্যেও অসাধারণ এক ইনিংসে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেন উইলিয়ামসন। এক প্রান্ত আগলে রেখে খেলেন অপরাজিত ১০৬ রানের ইনিংস। মাঝে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৬০ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম।

দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ‘কোয়ার্টার-ফাইনাল’ ম্যাচে তাদের ফিল্ডিং ছিল বিবর্ণ। রান আউট আর কঠিন বেশ কয়েকটি সুযোগ হাতছাড়া করেছে তারা। ৭৬ রানে ইমরান তাহিরের বল উইলিয়ামসনের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে জমা পড়লেও কট বিহাইন্ড যে হয়েছে বোঝেনি দক্ষিণ আফ্রিকা!

টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকার। ট্রেন্ট বোল্টের ফুল লেংথ বলের লাইন মিস করে বোল্ড হয়ে যান কুইন্টন ডি কক। আরেক ওপেনার আমলা ছিলেন সাবধানী। আস্থার সঙ্গে খেলছিলেন অধিনায়ক ফাফ দু প্লেসি। গতিময় এক বাউন্সারের পর আরেকটি গতিময় ইয়র্কারে বোল্ড করে তাকে বিদায় করেন লকি ফার্গুসন।

বাঁহাতি স্পিনারের জন্য স্বপ্নের এক ডেলিভারিতে আমলার প্রতিরোধ ভাঙেন মিচেল স্যান্টনার। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ওয়ানডেতে দ্রুততম আট হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করা অভিজ্ঞ ওপেনার চারটি চারে ৮৩ বলে করেন ৫৫ রান।

থিতু হয়ে ফিরেন এইডেন মারক্রাম, ডেভিড মিলার। শেষের দিকে বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে রানের গতি বাড়ান ফন ডার ডাসেন। ৬৪ বলে তিন ছক্কা ও দুই চারে ৬৭ রানে অপরাজিত থাকেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান।

দারুণ বোলিংয়ে ৫৯ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন পেসার ফার্গুসন। আঁটসাঁট বোলিংয়ে ব্যাটসম্যানদের বেঁধে রেখেছিলেন ম্যাট হেনরি, ডি গ্র্যান্ডহোম।

রান তাড়ায় শুরুতেই কলিন মানরোকে হারায় নিউ জিল্যান্ড। মার্টিন গাপটিল ও উইলিয়ামসন শুরুর ধাক্কা সামাল দিয়ে এগিয়ে নেন দলকে। গাপটিলের হিট উইকেটে ভাঙে ৬০ রানের জুটি।

ক্রিস মরিসের লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে রস টেইলর ও লেগ স্টাম্পের বলে টম ল্যাথাম কট বিহাইন্ড হলে চাপে পড়ে যায় নিউ জিল্যান্ড। পরে বোলিংয়ে ফিরে জিমি নিশামকে ফিরিয়ে মরিস ভাঙেন ৫৭ রানের জুটি। ৪৯ রানে ৩ উইকেট নিয়ে তিনিই দলের সেরা বোলার।

ক্রিজে গিয়েই শট খেলতে শুরু করেন ডি গ্র্যান্ডহোম। দ্রুত জমে যায় তার সঙ্গে অধিনায়কের জুটি। ছক্কার চেষ্টায় এই অলরাউন্ডার সীমানায় ধরা পড়লে ভাঙে ৯১ রানের জুটি। ডি গ্র্যান্ডহোম ৪৭ বলে করেন ৬০ রান।

জয়ের জন্য শেষ ওভারে নিউ জিল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ৮ রান। স্ট্রাইক পেয়ে দ্বিতীয় বলে ছক্কা হাঁকিয়ে উইলিয়ামসন তুলে নেন সেঞ্চুরি। পরের বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে নিউ জিল্যান্ডকে এনে দেন চতুর্থ জয়।

দারুণ সেঞ্চুরির জন্য ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন উইলিয়ামসন।

৫ ম্যাচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে উঠলো নিউ জিল্যান্ড। ভারতের বিপক্ষে তাদের ম্যাচ ভেসে গিয়েছিল বৃষ্টিতে। ৬ ম্যাচে চতুর্থ পরাজয়ের স্বাদ পেল দক্ষিণ আফ্রিকা। ৩ পয়েন্ট নিয়ে আট নম্বরে আছে তারা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তাদের ম্যাচ ভেসে গিয়েছিল বৃষ্টিতে। একমাত্র জয় আফগানিস্তানের বিপক্ষে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

দক্ষিণ আফ্রিকা: ৪৯ ওভারে ২৪১/৬ (ডি কক ৫, আমলা ৫৫, দু প্লেসি ২৩, মারক্রাম ৩৮, ফন ডার ডাসেন ৬৭*, মিলার ৩৬, ফেলুকোয়ায়ো ০, মরিস ৬*; হেনরি ১০-২-৩৪-০, বোল্ট ১০-০-৬৩-১, ফার্গুসন ১০-০-৫৯-৩, ডি গ্র্যান্ডহোম ১০-০-৩৩-১, স্যান্টনার ৯-০-৪৫-১)

নিউ জিল্যান্ড: ৪৮.৩ ওভারে ২৪৫/৬ (গাপটিল ৩৫, মানরো ৯, উইলিয়ামসন ১০৬*, টেইলর ১, ল্যাথাম ১, নিশাম ২৩, ডি গ্র্যান্ডহোম ৬০, স্যান্টনার ২*; রাবাদা ১০-০-৪২-১, এনগিডি ১০-১-৪৭-১, মরিস ১০-০-৪৯-৩, ফেলুকোয়ায়ো ৮.৩-০-৭৩-১, তাহির ১০-০-৩৩-০)

ফল: নিউ জিল্যান্ড ৪ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: কেন উইলিয়ামসন