শর্ট বলের তোপ, কতটা প্রস্তুত বাংলাদেশ?

উইকেট সবুজ। আকাশ থেকে ঝরছে পানি। আর নেটে ঝরছে আগুন! গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেই চলছিল টনটনের নেটে বাংলাদেশের ব্যাটিং-বোলিং। পেস বান্ধব কন্ডিশনে আগুনে বোলিং খেলে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের শর্ট বলের তোপ সামলানোর।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিটনটন থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 June 2019, 03:14 PM
Updated : 15 June 2019, 03:14 PM

টনটনে আসার পর শনিবারই প্রথম পূর্ণাঙ্গ অনুশীলন সেশন ছিল বাংলাদেশ দলের। প্রস্তুতির বড় অংশ জুড়ে যে আছে শর্ট বল খেলা, সেই ছবি ফুটে উঠল নেট ব্যাটিংয়ে।

পাশাপাশি তিনটি নেটে সবার আগে ব্যাটিং শুরু করলেন তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসান। আর্ম থ্রোয়ারে ছুটে আসছিল একের পর এক শর্ট বল। নেট বোলারদের মধ্যে ছিল দারুণ গতিময় কয়েকজন পেসার। বাংলাদেশের পেসারদের সঙ্গে মিলে তারাও করছিলেন শর্ট বল। তামিম-সাকিবরা পুল-হুক খেললেন, ছেড়ে দিলেন। কিছু বল লাগল শরীরে, কিছু উড়ে গেল মাথার ওপর দিয়ে, কিছু নাকে-মুখে বাতাস লাগিয়ে। একটি বলে হাতে আঘাত পেয়ে তো নেট থেকেই চলে যেতে হলো মুশফিককে।

শর্ট বলের তোপ থামেনি তার পরও। নেটে আসা পরের ব্যাটসম্যানরাও খেলে গেছেন একের পর এক শর্ট বল।

বাংলাদেশের বিপক্ষে সব প্রতিপক্ষই সবচেয়ে মোক্ষম অস্ত্র মনে করে শর্ট বল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ এই বিশ্বকাপে সব দলের বিপক্ষেই মূল অস্ত্র মানছে শর্ট বলকে। বাংলাদেশ তাই জানে, সোমবার টনটনের ২২ গজে তাদের অপেক্ষায় শর্ট বলের স্রোত।

নেটে যে চিত্র দেখা গেল, নেট সেশন শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সেই বাস্তবতাই ফুটে উঠল তামিমের কণ্ঠে।

“যে কোনো ম্যাচের আগেই প্র্যাকটিস করা হয় প্রতিপক্ষ কোনটা টার্গেট করবে, সেটা ভেবে। আমাদের বেশিরভাগ ম্যাচেই এই টার্গেট ওরা করে। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলিং যদি দেখেন, বিশেষত প্রথম ১০-১৫ ওভার, সব দলের বিপক্ষেই ওরা শর্ট বলে ফোকাস করে। অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তানের বিপক্ষেও দেখেছি।”

“ওদের পরিকল্পনা খুবই সিম্পল। সবাই সেটা দেখেছে। যত ম্যাচ খেলেছে, একই ধরনের বোলিং করেছে। শুরুর সময়টা ভালোভাবে সামলে আমাদের তা পরে কাজে লাগাতে হবে। চ্যালেঞ্জ হবে অবশ্যই। তবে আমরা প্রস্তুত।”

বিশ্বকাপের আগে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজেও বাংলাদেশের বিপক্ষে শর্ট বলের কৌশল নিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেবার তা কাজে লাগেনি খুব একটা। মুখোমুখি তিনটি ম্যাচই জিতেছে বাংলাদেশ, খুব একটা ভোগাতে পারেনি শর্ট বল।

আয়ারল্যান্ড সিরিজের দল থেকে শ্যানন গ্যাব্রিয়েল, কেমার রোচ, শেলডন কনটরেল, জেসন হোল্ডার আছেন বিশ্বকাপেও। তাদের সঙ্গে বিশ্বকাপ দলে যোগ হয়েছেন ওশেন টমাস ও আন্দ্রে রাসেল। কৌশল এবারও শর্ট বল থাকবে, সেটি ধরে নেওয়ায় খুব একটা ঝুঁকি নেই। তবে তামিম যেমন বললেন, তোপ সামলাতে আত্মবিশ্বাসের কমতিও নেই তাদের। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাও এই কৌশল নিয়েছিল, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা সেই চ্যালেঞ্জ জিতেছেন। এবারও না জেতার কারণ দেখছেন না কোচ স্টিভ রোডস।

“আমরা দেখেছি তারা কী করে আসছে। শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজ নয়, আরও অনেক দলই করছে। আমাদের সেটা সামলানোর পথ জানা আছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচেও দেখা গেছে, ওদের পেসাররা আমাদের খুব ভোগাতে পারেনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসারদেরও আমরা সম্প্রতি আয়ারল্যান্ডে ভালো খেলেছি।”

“আয়ারল্যান্ডে ওশেন টমাস না থাকলেও গত ডিসেম্বরে তাকে আমরা খেলেছি। আমাদের তাই যথেষ্ট ধারনা আছে ওদের নিয়ে। জানি, কী অপেক্ষায়। পরিকল্পনাও আছে। সেভাবেই সামলানোর চেষ্টা করব আমরা।”

ক্যারিবিয়ানদের শর্ট বল কৌশলের উল্টো দিকটাও দেখালেন তামিম। শর্ট বলের চেষ্টায় অনেক আলগা বলও করে ফেলেন ক্যারিবিয়ান পেসাররা। ব্যাটসম্যানদের দৃষ্টি থাকবে সেদিকেও, জানালেন তামিম।

“আমাদের মাথায় এটাও রাখতে হবে যে শর্ট বলের পাশাপাশি রান করার প্রচুর সুযোগও ওরা দেয়। আগের ম্যাচেও ওরা প্রচুর বল দিয়েছে রান করার মতো। শর্ট বল সামলানোর পাশাপাশি ওই বলগুলি কাজে লাগাতেও হবে। তাই দুই দিকেই আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। সেজন্যই আমরা কঠোর পরিশ্রম করছি যে অন্তত চমকে যেন না যাই মাঠে গিয়ে।”