সবশেষ সিরিজটা ভালো কাটেনি ভারতের। প্রথম দুই ম্যাচ জিতেও দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৩-২ ব্যবধানে হেরেছিল তারা। তবে গত বিশ্বকাপের পর থেকে জয়-পরাজয়ের অনুপাতে দারুণ সফল দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। ৮৬ ম্যাচের মধ্যে জিতেছে ৫৬টিতে। হেরেছে ২৭ ম্যাচে, একটি টাই, দুই ম্যাচ হয়েছে পরিত্যক্ত। বিশ্বকাপের দলগুলোর মধ্যে জয়-পরাজয়ের অনুপাতে ভারতের (২.০৭৪) চেয়ে এগিয়ে কেবল ইংল্যান্ড (২.৫২১)।
২০১১ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ভারত পরের আসরে থেমেছিল সেমি-ফাইনালে। ওই আসরে অবশ্য ফেভারিটদের তালিকায় ছিল না তারা। তবে এবার দলটিকে পিছিয়ে রাখার সুযোগ নেই। বিশ্বের সেরা ব্যাটিং লাইন, দারুণ কার্যকর ও বৈচিত্র্যে ভরপুর বোলিং বিভাগ। যা একটু দুর্বলতা তা কেবল ফিল্ডিংয়ে। এই দল নিয়ে শিরোপা স্বপ্ন দেখাই যায়। কপিল দেব, মহেন্দ্র সিং ধোনির পাশে বসার আশা করতেই পারেন কোহলি।
ব্যাটিং লাইনআপে প্রথম তিনটি স্থান থিতু। উদ্বোধনী জুটিতে রোহিত শর্মার সঙ্গী শিখর ধাওয়ান। তিনে কোহলি। কিন্তু চারে? খুব গুরুত্বপূর্ণ এই পজিশনে অনেককে সুযোগ দিলেও নিজের করে নিতে পারেননি কেউই। অনেক দেখে-শুনে চার নম্বরের জন্য বেছে নেওয়া হয় অলরাউন্ডার বিজয় শঙ্করকে।
গত বিশ্বকাপের পর থেকে এবারের আসর পর্যন্ত বিশ্বের সফলতম দুই ব্যাটসম্যানই ভারতের। ৬৯ ম্যাচে ৭৮.২৯ গড়ে কোহলি করেন ৪ হাজার ৩০৬ রান। অধিনায়কের স্ট্রাইক রেট ৯৮.৩৩। ইচ্ছে হলেই যেন সেঞ্চুরি করেছেন এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। এই সময়ে খেলেছেন ৩৫টি পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস যার ১৯টিই সেঞ্চুরি।
তার চেয়ে খুব একটা পিছিয়ে নেই ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি ডাবল সেঞ্চুরির মালিক রোহিত। অন্য কারোর নেই একটার বেশি, সেখানে ডানহাতি এই ওপেনার দুইশ ছুঁয়েছেন তিনবার। গত বিশ্বকাপের পর থেকে ৭১ ম্যাচে ৬১.১২ গড়ে করেছেন ৩ হাজার ৭৯০ রান। সেঞ্চুরি ১৫টি, ফিফটি ১৬টি। রান এসেছে ধাওয়ানের ব্যাট থেকেও। আট সেঞ্চুরি ও ১৫ ফিফটিতে ৬৭ ম্যাচে করেছেন ২ হাজার ৮৪৮ রান।
রোহিত-ধাওয়ানের উদ্বোধনী জুটি হয়ে উঠেছে দারুণ কার্যকর। গত বিশ্বকাপের পর থেকে ওয়ানডেতে সফলতম জুটির কীর্তি তাদের। ৬০ ইনিংসে ৮টি একশ ছোঁয়া জুটিতে তুলেছেন ২ হাজার ৬০৯ রান। দক্ষিণ আফ্রিকার হাশিম আমলা ও কুইন্টন ডি ককের চেয়ে একটু পিছিয়ে তিন নম্বরে আছে রোহিত-কোহলির জুটি। ৩০ ইনিংসে ৮৪.৪৬ গড়ে তারা যোগ করেছেন ২ হাজার ৩৬৫ রান। তাদের জুটি একশ ছুঁয়েছে নয়বার।
টপ অর্ডার যতটা দাপট দেখিয়েছে ততটা পারেনি মিডল অর্ডার। তবে কেদার যাদব, দিনেশ কার্তিক, ধোনি, শঙ্কর, হার্দিক পান্ডিয়ার সামর্থ্য আছে দলকে পথ দেখানোর। উইকেটের সামনে-পেছনে ধোনির উপস্থিতি ভারতের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। পরিস্থিতি বোঝায় এখনও দলের যে কারোর চেয়ে এগিয়ে বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক।
বোলিংয়েও পিছিয়ে নেই ভারত। আইসিসি ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দশে আছে তাদের তিন বোলার। মূল স্ট্রাইক বোলার জাসপ্রিত বুমরাহ আছেন চূড়ায়। সাতে কুলদীপ যাদব, আটে যুববেন্দ্র চেহেল। সময়ের সেরা ডেথ বোলার বুমরাহর সঙ্গী হতে কঠিন লড়াইয়ে নামতে হবে ভুবনেশ্বর কুমার ও মোহাম্মদ শামিকে। শেষের দিকে লাইন-লেংথে বেশ উন্নতি করা শামি হয়তো একটু এগিয়ে থাকবেন। তবে প্রয়োজনে ব্যাট হাতেও ভূমিকা রাখতে পারার বিবেচনায় সুযোগ পেতে পারেন ভুবনেশ্বর।
স্পিনে বাঁহাতি অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজার সঙ্গী দুই রিস্ট স্পিনার কুলদীপ ও চেহেল। ইংলিশ কন্ডিশনে কার্যকর হতে পারেন তারা। তবে বুমরাহ-শামি-চেহেল-কুলদীপ এক সঙ্গে খেললে লম্বা একটা লোয়ার অর্ডার থাকবে ভারতের, যেখান থেকে ব্যাটিংয়ে কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই হয়তো কুলদীপ-চেহেলকে এক সঙ্গে কম দেখা যেতে পারে।
প্রতিভার কমতি নেই দলে। কোহলি-ধোনি-রোহিত-ধাওয়ানরা এক সঙ্গে খেলছেন বহুদিন ধরে। বোঝাপড়ায় নেই ঘাটতি। দলের ভারসাম্যও দারুণ। তৃতীয় বিশ্বকাপের স্বপ্ন তাই দেখতেই পারে ভারত।
গুরুত্বপূর্ণ যিনি: কুলদীপ যাদব
আইপিএলটা ভালো কাটেনি এই চায়নাম্যানের। তবে বিশ্বকাপে ভারতের পরিকল্পনার বড় অংশ জুড়ে আছেন তিনি। ওয়ানডেতে ৪২ ইনিংসে ২১.৭৪ গড়ে ৮৭ উইকেট নেওয়া কুলদীপ মাঝের ওভারগুলোয় হতে পারেন কোহলির সবচেয়ে বড় অস্ত্র। আঁটসাঁট বোলিংয়ে চাপে রাখতে পারেন ব্যাটসম্যানদের, উইকেটশিকারী এই বোলার গড়ে দিতে পারেন ম্যাচের ভাগ্য।
কোচ: রবি শাস্ত্রী
১৯৮৩ বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য রবি শাস্ত্রীর অধীনে সাফল্যের কমতি নেই ভারতের। দেশের বাইরে ক্রমশ টেস্টেও সমীহ করার মতো শক্তি হয়ে উঠছে তারা। অননুমেয় পাকিস্তান দুই বছর আগে একরকম ছিনিয়ে নিয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা। এবার আঁটঘাট বেঁধে নেমেছেন শাস্ত্রী। আরেকটি বিশ্বকাপ চাই তার, এবার কোচ হিসেবে।
বিশ্বকাপের ভারত দল: বিরাট কোহলি (অধিনায়ক), রোহিত শর্মা (সহ-অধিনায়ক), শিখর ধাওয়ান, লোকেশ রাহুল, কেদার যাদব, হার্দিক পান্ডিয়া, রবীন্দ্র জাদেজা, বিজয় শঙ্কর, মহেন্দ্র সিং ধোনি, দিনেশ কার্তিক, যুজবেন্দ্র চেহেল, কুলদীপ যাদব, ভুবনেশ্বর কুমার, জাসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ শামি।
বিশ্বকাপ রেকর্ড:
১৯৭৫: গ্রুপ পর্ব
১৯৭৯: গ্রুপ পর্ব
১৯৮৩: চ্যাম্পিয়ন
১৯৮৭: সেমি-ফাইনাল
১৯৯২: গ্রুপ পর্ব
১৯৯৬: সেমি-ফাইনাল
১৯৯৯: সুপার সিক্স
২০০৩: রানার্সআপ
২০০৭: গ্রুপ পর্ব
২০১১: চ্যাম্পিয়ন
২০১৫: সেমি-ফাইনাল
ভারতের বিশ্বকাপ সূচি:
তারিখ, বার | বাংলাদেশ সময় | প্রতিপক্ষ | ভেন্যু |
০৫ জুন, বুধবার | বেলা সাড়ে তিনটা | দক্ষিণ আফ্রিকা | হ্যাম্পশায়ার বৌল, সাউথ্যাম্পটন |
০৯ জুন, রোববার | বেলা সাড়ে তিনটা | অস্ট্রেলিয়া | দা ওভাল, লন্ডন |
১৩ জুন, বৃহস্পতিবার | বেলা সাড়ে তিনটা | নিউ জিল্যান্ড | ট্রেন্ট ব্রিজ, নটিংহ্যাম |
১৬ জুন, রোববার | বেলা সাড়ে তিনটা | পাকিস্তান | ওল্ড ট্র্যাফোর্ড, ম্যানচেস্টার |
২২ জুন, শনিবার | বেলা সাড়ে তিনটা | আফগানিস্তান | হ্যাম্পশায়ার বৌল, সাউথ্যাম্পটন |
২৭ জুন, বৃহস্পতিবার | বেলা সাড়ে তিনটা | ওয়েস্ট ইন্ডিজ | ওল্ড ট্র্যাফোর্ড, ম্যানচেস্টার |
৩০ জুন, রোববার | বেলা সাড়ে তিনটা | ইংল্যান্ড | এজবাস্টন, বার্মিংহ্যাম |
০২ জুলাই, মঙ্গলবার | বেলা সাড়ে তিনটা | বাংলাদেশ | এজবাস্টন, বার্মিংহ্যাম |
০৬ জুলাই, শনিবার | বেলা সাড়ে তিনটা | শ্রীলঙ্কা | হেডিংলি, লিডস |