এনামুল হক ব্যাট হাতে মাঠে ঢুকতেই আইসিসি ডিজিটাল টিমের তৎপরতা বেড়ে গেল। এনামুলের ব্যাটিং, তার হাঁটাচলা, ব্যাট হাতে ‘শ্যাডো’ করা, সবকিছুই ক্যামেরায় ধারণ করছিলেন তারা। বিশ্বকাপজুড়েই বাংলাদেশ দলের নানা ক্রিকেটারকে নিয়ে চমৎকার কিছু ভিডিও গল্প তারা তৈরি করেছেন। শেষ সময়ে এসে নতুন একজন চরিত্র পেয়ে হয়তো চেষ্টা করা হচ্ছে তাকে উপস্থাপন করার।
আইসিসি ডিজিটাল টিমই শুধু নয়, বাংলাদেশের সংবাদকর্মীদের আগ্রহের কেন্দ্রেও ছিলেন এনামুল। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এ দিন তার থাকার কথা ছিল রাজশাহীতে। জাতীয় লিগের ম্যাচ খেলতেন খুলনার হয়ে। কিন্তু এখন তিনি বিশ্বকাপের ময়দানে। সাকিব আল হাসানের বদলি হিসেবে সুযোগ পেয়ে আগের দিন যোগ দিয়েছেন দলে। স্রেফ একটি ম্যাচের জন্য তাকে উড়িয়ে আনা হয়েছে। তাকে ঘিরে বাড়তি কৌতূহলটুকু সেই কারণেই।
অলরাউন্ডারের বদলে নেওয়া হয়েছে একজন ওপেনারকে। অনেক প্রশ্নের একটা উত্তর মিলে গেছে সেখানেই। বিশ্বকাপ দল ঘোষণার পর থেকেই সবচেয়ে আলোচিত প্রসঙ্গ ছিল, টপ অর্ডারে কোনো বিকল্প ব্যাটসম্যান না রাখা। লিটন কুমার দাসের সঙ্গে অনভিজ্ঞ তানজিদ হাসানকে রাখা হয় স্কোয়াডে, আর কোনো বাড়তি ওপেনার রাখা হয়নি।
শুধু ওপেনিংই নয়, গোটা স্কোয়াডেই বাড়তি বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান ছিল না। দলকে সেজন্য ভুগতেও হয়েছে বেশ। ম্যাচের পর ম্যাচ তানজিদ ব্যর্থ হলেও তাকে খেলানো হয়েছে অনেকটা বাধ্য হয়েই। বিশ্বকাপের আগে বলা হয়েছিল, প্রয়োজনে মেহেদী হাসান মিরাজকে কাজে লাগানো হবে ওপেনিংয়ে। কিন্তু তিন নম্বর থেকে শুরু করে নিচের দিকে বিভিন্ন পজিশনে মিরাজ দলের কাছে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলেন যে, তাকে ওপেন করানোর কথা হয়তো ভাবতেই পারেনি দল।
বাড়তি ব্যাটসম্যানের প্রয়োজনীয়তার কথা যদিও বিশ্বকাপজুড়েই অস্বীকার করে গেছে দল। বিভিন্ন সংবাদ সম্মেলনে দলের প্রতিনিধি হয়ে যারা এসেছেন, তারা প্রতিবারই বলেছেন এই কথা। এমনকি সবশেষ সংবাদ সম্মেলনেও অধিনায়ক সাকিব বলেছেন, ব্যাটসম্যানদের ওপর তাদের এতটাই ভরসা ছিল যে বিকল্প ব্যাটসম্যান রাখার কথা তারা ভাবেননি।
এখন এই শেষ সময়ে এসে সেই সাকিবের বদলি হিসেবেই, একজন অলরাউন্ডারের পরিবর্তে যখন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানকে আনা হয়, উত্তরটা সেখানেই দেওয়া হয়ে যায়। অবশেষে ব্যাটসম্যানের অভাব অনুভব করেছে দল!
সেই ব্যাটসম্যানকে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একাদশে রাখা হবে কি না, সেটিই এখন কৌতূহলের জায়গা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দিল্লিতে যে একাদশ ছিল, সেখানে সাকিব ও মিরাজসহ বিশেষজ্ঞ বোলার ছিলেন ৫ জন। সাকিবের জায়গায় তাই একজন বোলারকেই নিতে হবে নিশ্চিতভাবে। সেক্ষেত্রে এনামুলকে একাদশে সুযোগ দিলে বাদ পড়তে হবে তানজিদকে।
পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে যদিও বৃহস্পতিবারের অনুশীলনে সেই তানজিদই নেটে গেলেন শুরুতে। স্পিনারদের নেটে সবার আগে যান মুশফিকুর রহিম, আর্ম থ্রোয়ারদের নেটে ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত আর পেসারদের নেটে তানজিদ। তিন নেটই ঘুরে ঘুরে বেশ লম্বা সময় ব্যাটিং করেন তরুণ এই ওপেনার।
প্রধান কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহে ও সহকারী কোচ নিক পোথাসকে দেখা গেল, কয়েকবারই গিয়ে তানজিদের সঙ্গে কথা বলছেন, ব্যাটিংয়ের নানা কিছু দেখিয়ে দিচ্ছেন। অর্থাৎ, যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই অনুশীলন করানো হয়েছে তাকে।
সেই গুরুত্ব পরে পেলেন এনামুলও। তিন নেট মিলিয়ে তিনিও লম্বা সময় ব্যাটিং করলেন। দারুণ কিছু শটও খেললেন। তার সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেল প্রধান কোচকে।
২০১৫ বিশ্বকাপে হাথুরুসিংহে কোচ থাকা অবস্থায়ই বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়েছিলেন এনামুল। প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে করেছিলেন ৫৫ বলে ২৯, পরের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪৩ বলে ২৯। এরপর স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ফিল্ডিংয়ের সময় কাঁধে চোট পেয়ে ছিটকে যান টুর্নামেন্ট থেকে। ২০১৯ বিশ্বকাপে সুযোগ পাননি, দলে ছিলেন না এবারও। তার বিশ্বকাপ অধ্যায় শেষ বলেই ধরে নেওয়ার কারণ ছিল যথেষ্ট। কিন্তু আরেকজনের চোটের কারণেই নাটকীয়ভাবে আরেকটি সুযোগ তার সামনে এসে গেছে।
এনামুলের এই অভিযান স্রেফ দুই দিনের অনুশীলনেই সীমাবদ্ধ থাকবে নাকি তার বিশ্বকাপ অধ্যায়ে নতুন পাতা যোগ হবে, অপেক্ষা এখন সেই উত্তর জানার।
পুনেতে অনুশীলনের পাশাপাশি বাংলাদেশের দলের দৃষ্টি ছিল বেঙ্গালুরুতেও। সেখানে নিউ জিল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছে শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে জায়গা করে নেওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল করতে এই ম্যাচে লঙ্কানদের বড় হার প্রয়োজন ছিল। সংবাদকর্মীদের সঙ্গে আড্ডার ফাঁকে টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ ফোনে স্কোর দেখে বললেন, শ্রীলঙ্কার সাত উইকেট পড়ে গেছে ১০৫ রানেই। মানে, বাংলাদেশের জন্য স্বস্তির খবর।
এই ম্যাচের আগে রান রেটে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকলেও শ্রীলঙ্কা ছিল খুব কাছেই। কিন্তু কিউইদের কাছে যেভাবে হারছে তারা, এরপর বাংলাদেশের কাজ মূলত অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে খুব বাজেভাবে না হারা।
হতাশায় মোড়ানো বিশ্বকাপের শেষ প্রান্তে এসে এখন এতটুকুই আশা!