১৫ বছর পর ইংল্যান্ডকে ওয়ানডে সিরিজ হারানোর স্বাদ পেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
Published : 10 Dec 2023, 10:33 AM
ঘরের মাঠে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক, গ্যালারিতে বাবা-মা ও পরিজন। প্রথম ওভারেই উইকেটের স্বাদ, একটু পর শিকার আরও দুই উইকেট। এরপর রান তাড়ায় বাট হাতে অবদান, দলের জয়কে সঙ্গী করে ফেরা। ম্যাচ জয়ের সঙ্গে সিরিজ জয়েরও স্বাদ। আর কী লাগে! অভিষেকে ম্যান অব দা ম্যাচ হয়ে ম্যাথু ফোর্ড নিজেই বললেন, “আই অ্যাম লিভিং মাই ড্রিম… স্পেশাল মুহূর্ত আমার জন্য, স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো ব্যাপার।”
২১ বছর বয়সী এই পেস বোলিং অলরাউন্ডারের জন্য যেমন, তেমনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের জন্যও উপলক্ষটি বিশেষ কিছু। ১৫ বছর পর তারা ওয়ানডে সিরিজে হারাতে পারল ইংল্যান্ডকে। দেশের মাঠে ইংলিশদের বিপক্ষে সিরিজ জয় ধরা দিল তাদের ২৫ বছর পর!
তৃতীয় ওয়ানডেতে শনিবার ইংল্যান্ডকে ৪ উইকেট হারিয়ে সিরিজ জয় নিশ্চিত করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
বারবাডোজে বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচ নেমে আসে শুরুতে ৪৩ ওভার ও পরে ৪০ ওভারে। ইংলিশরা তোলে ৯ উইকেটে ২০৬ রান। পরে আবার বৃষ্টিতে ক্যারিবিয়ানদের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৪ ওভারে ১৮৮। ম্যাচ জিতে যায় তারা ১৪ বল বাকি রেখে।
অভিষেকে ইংল্যান্ডের প্রথম তিন ব্যাটসম্যানকেই আউট করেন ফোর্ড। পরে রান তাড়ায় রোমারিও শেফার্ডের সঙ্গে গড়েন ৫৬ রানের অবিচ্ছিন্ন ম্যাচ জেতানো জুটি।
সেই জুটিতে অবশ্য আসল কাজটি করেন শেফার্ডই। ২৮ বলে ৪১ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন তিনি। ফোর্ড অপরাজিত থাকেন ১৩ রান করে।
কেনসিংটন ওভালের উইকেটে পেসারদের সহায়তা ছিল কিছুটা। ফোর্ড প্রভাব রাখতে সময় নেননি খুব একটা। ম্যাচের প্রথম ওভারেই ফিরিয়ে দেন তিনি ফিল সল্টকে। নিজের পরের ওভারে তিনি শূন্য রানে ফেরান জ্যাক ক্রলিকে।
আরেক প্রান্তে উইল জ্যাকস শুরুটা করেছিলেন ভালো। কিন্তু তাকেও ১৭ রানে বিদায় করে দেন ফোর্ড।
আলজারি জোসেফের দারুণ ফিল্ডিংয়ে রান আউট হয়ে যান হ্যারি ব্রুক। এক বল পরই জোসেফের শর্ট বলে ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলার আউট হন ‘গোল্ডেন ডাক’ পেয়ে।
৫৯ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ইংল্যান্ড তখন ধুঁকছে।
বেন ডাকেট ও লিয়াম লিভিংস্টোনের জুটি সেখান থেকে টেনে তোলে ইংল্যান্ডকে। ৯৪ বলে ৮৮ রানের জুটি গড়েন দুজন।
জুটি ভেঙে এই দুজনকেই ফেরান শেফার্ড। ৭৩ বলে ৭১ রান করেন ডাকেট, ৫৬ বলে ৪৫ লিভিংস্টোন। এরপর স্যাম কারান ও রেহান আহমেদ উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারেননি। শেষ দিকে দুই পেসার গাস অ্যাটকিনসন (২০*) ও ম্যাথু পটসের (১৫*) ৩৫ রানের জুটিতে দুইশ ছাড়া পারে ইংল্যান্ড।
রান তাড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ শুরুতেই হারায় ব্র্যান্ডন কিংকে। তবে আলিক আথানেজ ও কেসি কার্টি দ্বিতীয় উইকেটে ৭৬ রানের জুটি গড়ে পথে রাখেন দলকে। ৭ চারে ৪৫ রান করে বিদায় নেন আথানেজ।
আগের দুই ম্যাচে দারুণ ব্যাটিং করা শেই হোপকে এবার বেশিক্ষণ টিকতে দেননি লেগ স্পিনার রেহান আহমেদ। এরপর উইল জ্যাকসের দারুণ এক স্পেলে ক্যারিবিয়ানদের চেপে ধরে ইংল্যান্ড। দুই বাঁহাতি শিমরন হেটমায়ার ও শেরফেন রাদারফোর্ডকে আউট করার পর এক প্রান্ত আগলে রাখা কার্টিকেও বিদায় করেন জ্যাকস।
আগের দুই ম্যাচে ব্যর্থ কার্টি এবার ৫৮ বলে করেন ৫০।
তিনি যখন বিদায় নেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ৬ উইকেটে ১৩৫। ম্যাচ তখনও দোদুল্যমান। সেখান থেকেই শেফার্ড ও ফোর্ডের জুটি জিতিয়ে দেয় ইন্ডিজকে।
তিনটি করে চার ও ছক্কা মারেন শেফার্ড। তাকে স্রেফ সঙ্গ দিয়ে যান ফোর্ড। ম্যাচ জিতে উল্লাসে মাতে ক্যারিবিয়ানরা। বিশ্বকাপে খেলতে ব্যর্থ হওয়ার পর নতুন শুরুটা তাদের জন্য হলো প্রেরণাদায়ী।
দুই দল এখন খেলবে ৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। বারবাডোজেই এটি শুরু বুধবার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড: ৪০ ওভারে ২০৬/৯ (সল্ট ৪, জ্যাকস ১৭, ক্রলি ০, ডাকেট ৭১, ব্রুক ১, বাটলার ০, লিভিংস্টোন ৪৫, কারান ১২, রেহান ১৫, অ্যাটকিনসন ২০*, পটস ১৫*; ফোর্ড ৮-০-২৯-৩, শেফার্ড ৮-০-৫০-২, জোসেফ ৮-০-৬১-৩, মোটি ৮-০-২৩-০, ক্যারাইয়াহ ৮-০-৪৩-০)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: (লক্ষ্য ৩৪ ওভারে ১৮৮) ৩১.৪ ওভারে ১৯১/৬ (আথানেজ ৪৫, কিং ১, কার্টি ৫০, হোপ ১৫, হেটমায়ার ১২, রাদারফোর্ড ৩, শেফার্ড ৪১*, ফোর্ড ১৩*; কারান ৪-০-২২-০, অ্যাটকিনসন ৬-০-৫৮-২, পটস ৩-০-১৫-০, জ্যাকস ৭-১-২২-৩, রেহান ৭-০-৩৭-১, লিভিংস্টোন ৪.৪-০-৩৪-০)
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২-১ ব্যবধানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: ম্যাথু ফোর্ড
ম্যান অব দা সিরিজ: শেই হাপ