ক্রিকেট শেখার তাড়নায় ছোটবেলা থেকে লড়াই করেছেন প্রতিনিয়ত, ওই কঠিন দিনগুলোই ইয়াশাসভি জয়সওয়ালকে শিখিয়েছে, প্রতিটি সুযোগের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে।
Published : 18 Feb 2024, 11:15 PM
স্রেফ সাত টেস্টের ক্যারিয়ার। খেলেছেন ১৩ ইনিংস। এর মধ্যেই ইয়াশাসভি জয়সওয়াল সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন তিনটি। প্রতিটা শতরানই পেরিয়েছে দেড়শর সীমানা। যার মধ্যে দুটি ডাবল সেঞ্চুরি। বয়স মাত্র ২২ বছর। এত কম বয়সে কীভাবে বড় ইনিংস খেলার এমন অভ্যাস তৈরি করে ফেলেছেন, সেই রহস্য জানিয়েছেন ভারতের প্রতিভাবান এই ব্যাটসম্যান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার বাসনায় বেড়ে ওঠার সময়ে জীবনের কঠিন চ্যালেঞ্জগুলো থেকেই এই ক্ষুধা তৈরি হয়েছে তার মাঝে।
উত্তর প্রদেশের দরিদ্র এক পরিবারে জন্ম জয়সওয়ালের। মাত্র ১৩ বছর বয়সে নিজের শহর থেকে তিনি চলে আসেন মুম্বাইয়ে। ক্রিকেট শেখার তাড়নায় কখনও আজাদ ময়দানের পাশে তাঁবুতে থাকতে হয়েছে তাকে। প্রতিনিয়ত অনেক লড়াই করে, শহরের নানা ময়দান মাতিয়ে একসময় ভারতীয় ক্রিকেটের মূল স্রোতে উঠে আসেন তিনি। ওই কঠিন দিনগুলোই তাকে শিখিয়েছে, প্রতিটি সুযোগের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে।
দেশের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চলমান টেস্ট সিরিজে ভারতের পরপর দুটি ম্যাচ জয়ে ব্যাট হাতে তার আছে বড় অবদান। বিশাখাপাত্নামে দ্বিতীয় টেস্টে তিনি খেলেন ২০৯ রানের ইনিংস। রাজকোটে পরের ম্যাচে দ্বিতীয় ইনিংসে উপহার দেন আরেকটি ডাবল সেঞ্চুরি, এবার খেলেন অপরাজিত ২১৪ রানের ইনিংস।
রাজকোটে রোববার ভারতের ৪৩৪ রানের রেকর্ড ব্যবধানে জয়ের পর ব্রডকাস্টারে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বড় ইনিংস খেলার নেপথ্যের কথা তুলে ধরেন জয়সওয়াল।
“ভারতে বেড়ে ওঠার সময়ে সবকিছুর জন্যই কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। এমনকি বাসে ওঠার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। ট্রেন, অটোরিকশায় উঠতে এবং সবকিছুতে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। আর আমি ছোটবেলা থেকেই এটি করেছি। আমি জানি প্রতিটি ইনিংস কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তাই অনুশীলন সেশনে কঠোর পরিশ্রম করি।”
“প্রতিটি ইনিংস আমার এবং আমার দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যা দেশের হয়ে খেলার জন্য আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। সবসময় আমি স্রেফ এটাই নিশ্চিত করি যে, যখন যেখানেই থাকি, আমার শতভাগ দিতে হবে এবং তারপর উপভোগ করতে হবে।”
রাজকোটের ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে প্রথম ইনিংসে অবশ্য ভালো করতে পারেননি জয়সওয়াল। আউট হয়ে যান ১০ বলে ১০ রান করে। শুরুতে ৩ উইকেট হারানোর ধাক্কা সামলে সেঞ্চুরি করেন অধিনায়ক রোহিত শার্মা ও রবীন্দ্র জাদেজা। ড্রেসিং রুমে বসে অভিজ্ঞ দুই সতীর্থের ব্যাটিং মনোযোগ দিয়ে দেখেন জয়সওয়াল। দুজন যেভাবে ব্যাটিং করেছেন, সেটা তাকে বড় ইনিংস খেলতে অনুপ্রাণিত করেছিল বলে জানান তিনি।
সেটাই তিনি কাজে লাগান দ্বিতীয় ইনিংসে। এবার শুরুর দিকেই রোহিতকে হারায় ভারত। জেমস অ্যান্ডারসনের নতুন বলের চ্যালেঞ্জ সামলে জয়সওয়াল থিতু হতে সময় নেন। একটা পর্যায়ে তার রান ছিল ৭৩ বলে ৩৫। ওই সময়ে ব্যাটিং করা কঠিন ছিল বলে জানালেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
"সেই মুহূর্তে মনে হচ্ছিল উইকেটে কিছু আছে (বোলারদের জন্য)। বল খেলা কঠিন ছিল। তখন মনে হচ্ছিল, দলকে ভালো শুরু এনে দেওয়া আমার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। গত তিনটি ম্যাচে দ্বিতীয় ইনিংসে দেখেছেন, (হায়দরাবাদে অলিভার পোপের ১৯৬, বিশাখাপাত্নামে শুবমান গিলের ১০৪) ম্যাচে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল এবং আমি নিশ্চিত করার চেষ্টা করছিলাম যে, যতটা সম্ভব যেন খেলা চালিয়ে যেতে পারি। আমার মনে হয়, এটা কঠিন, বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটে। তাই আমি নিশ্চিত করতে চাই, উইকেটে থাকলে আমি যেন আমার শতভাগ দিতে পারি।”
অভ্যস্ত হতে অবশ্য বেশি সময় লাগেনি তার। পরের ৪৯ বলে করে ফেলেন ৬৫ রান। ১২২ বলে পূর্ণ করেন সেঞ্চুরি। এরপর পিঠে অস্বস্তি অনুভব করায় ফিজিওর সেবাশুশ্রূষা নিয়েও খেলা চালিয়ে যেতে পারেননি তিনি, ১০৪ রান নিয়ে ছেড়ে যান মাঠ। পরদিন আবার নামেন ব্যাটিংয়ে। বললেন, আগের দিন ব্যাটিং চালিয়ে যাওয়া সত্যিই খুব কঠিন ছিল তার জন্য।
“আমার পিঠের অবস্থা আসলেই ভালো ছিল না। আমি (আহত অবসর) আউট হতে চাইনি, কিন্তু খুব কঠিন ছিল (ব্যাটিং করা)। পরের দিন আমি জানতাম না, কিভাবে সবকিছু এগোবে, মনে মনে অনেক কিছু ভাবছিলাম। কিন্তু আবার যখন ব্যাটিংয়ে নামলাম, আমি নিজেকে সময় দেওয়ার চেষ্টা করলাম এবং তারপর বেশ ভালো অনুভব করলাম।”
২১৪ রানের অসাধারণ ইনিংসের পথে ১২টি ছক্কা মারেন জয়সওয়াল। টেস্টের এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ডে বসেন ওয়াসিম আকরামের পাশে। তার আগে ভারতের হয়ে টানা দুই টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করতে পারেন কেবল ভিনোদ কাম্বলি ও ভিরাট কোহলি। তার চেয়ে কম বয়সে টেস্টে একাধিকবার দুইশ ছোঁয়ার কীর্তি আছে কেবল কাম্বলি ও স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের।