দুর্দান্ত ঢাকার রেকর্ড পরাজয়ের ধারা চলছেই, পার্নেল ও মুকিদুলের দারুণ বোলিংয়ের পর আফিফের ঝড়ো ইনিংসে খুলনা টাইগার্সের জয়।
Published : 16 Feb 2024, 04:30 PM
ম্যাচ শেষ হতেই এনামুল হকের মুখে ফুটে উঠল চওড়া হাসি। ডাগআউটে সবাইকে আলিঙ্গনে জড়ালেন তিনি, ‘হাই ফাইভ’ করলেন কয়েকজনের সঙ্গে। তিনি নিজে আউট হয়েছেন প্রথম বলে। তবু তিনি হাসতে পারছেন, কোচিং স্টাফের সবার মুখেও হাসি। অবশেষে যে জিতেছে দল! ঢাকার ডাগআউট তখন সেই চেনা চেহারাতেই। সেখানে সবার মুখই শুকনো।
পরাজয়ের ধারায় ছিল দুই দলই। সেই হতাশার স্রোতে বাঁধ দিতে পারল খুলনা টাইগার্স। নতুন বলে সুইং বোলিংয়ে ভিত গড়ে দিলেন ওয়েইন পার্নেল। পরে দুর্দান্ত বোলিং করলেন মুকিদুল ইসলাম। রান তাড়ায় পারভেজ হোসেন ইমন ও আফিফ হোসেনের ব্যাট থেকে এলো ঝড়ো দুটি ইনিংস। ৫ উইকেটের জয়ে প্লে অফের লড়াইয়ে নিজেদের অস্তিত্ব আবার জানান দিল খুলনা টাইগার্স।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে শুক্রবার পার্নেল শিকার করেন ১৯ রানে ৩ উইকেট, মুকিদুল ১৮ রানে ৩টি। দুর্দান্ত ঢাকার ইনিংস থমকে যায় ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১২৮ রানে। খুলনা টাইগার্স জিতে যায় ২৮ বল বাকি রাখতেই।
টানা চার জয়ে আসর শুরু করা খুলনা পঞ্চম জয়ের দেখা পেল টানা পাঁচ ম্যাচ হারার পর। জয় দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করা ঢাকার রেকর্ড পরাজয় যাত্রা পৌঁছে গেল দুই অঙ্কে। টানা ১০ ম্যাচে হার!
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা ঢাকার প্রথম দুই ওভার ছিল নিস্তরঙ্গ। তৃতীয় ওভারে নাহিদুল ইসলামকে ছক্কা ও চার মেরে জ্বলে ওঠার ইঙ্গিত দেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান অ্যাডাম রসিংটন। পরের ওভারেই আরেকপ্রান্তে পার্নেলের ছোবল। মোহাম্মদ নাঈম শেখকে (১১ বলে ৫) এলবিডব্লিউ করে দেওয়ার পরের বলেই ভেতরে ঢোকা দুর্দান্ত ডেলিভারিতে বোল্ড করে দেন সাইফ হাসানকে (০)। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে ফিরিয়ে দেন তিনি রসিংটনকেও (১২ বলে ১৮)।
২৭ রানে ৩ উইকেট হারানো দলকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন অ্যালেক্স রস ও ইরফান শুক্কর। তবে শুরুতে ধুঁকছিলেন দুজনই। প্রথম রানটি করতেই ৯ বল খেলেন ইরফান। রসের রান এক পর্যায়ে ছিল ২১ বলে ৮।
সেখান থেকে একটু জেগে উঠে অভিষিক্তি বাঁহাতি স্পিনার আরিফ আহমেদের এক ওভারে একটি ছক্কা দুটি চার মারেন ইরফান। পরে আরিফকেই চার ও ছক্কা মারেন রস। কিন্তু দুজনের কেউই পুষিয়ে দিতে পারেননি ঘাটতি। ২৬ বলে ২৫ রান করে মুকিদুলকে উড়িয়ে মারার চেষ্টায় বিদায় নেন ইরফান।
নতুন ব্যাটসম্যান শন উইলিয়ামস প্রথম বলেই পুল করে ধরা পড়েন সীমানায়। হতাশায় ব্যাটে ভর নিয়ে নুইয়ে থাকেন তিনি কিছুক্ষণ।
আগের ম্যাচে ৪৯ বলে ৮৯ করা রস এবার ৩৫ বল খেলে করতে পারেন কেবল ২৫ রান।
মোসাদ্দেক হোসেনের শুরুটাও ছিল মন্থর। পরে একটু বাড়ান রানের গতি। ২৩ বলে ২৬ করে শেষ ওভারে নাহিদুলের দারুণ ক্যাচে বিদায় নেন তিনি। চাতুরাঙ্গা ডি সিলভার ২ ছক্কায় ১৩০ রানের কাছে যেতে পারে ঢাকা।
রান তাড়ায় প্রথম বলেই ক্রিজে ছেড়ে বেরিয়ে তেড়েফুঁড়ে মারার চেষ্টা করেন এনামুল। কিন্তু ভেতরে ঢোকা দুর্দান্ত ডেলিভারিতে তার লেগ স্টাম্প নাড়িয়ে দেন শরিফুল ইসলাম। সেই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগে বিপজ্জনক এভিন লুইসকেও বিদায় করেন এই বাঁহাতি পেসার।
এবারের বিপিএলের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি তিনি অনেক আগে থেকেই। এই ম্যাচে তার উইকেট পূর্ণ হলো ২০টি।
তবে সহজাত আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে জোড়া ধাক্কার চাপ উড়িয়ে দেন পারভেজ হোসেন। একাদশে ফেরা তরুণ ব্যাটসম্যান ক্রিজে যাওয়ার পরপরই তাসকিন আহমেদকে ছক্কা ও চার মেরে বার্তা দিয়ে দেন। পরে বিশাল এক ছক্কায় ওড়ান তিনি শরিফুলকেও।
অস্ট্রেলিয়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের সিরিজ শেষ করে ফেরা শেই হোপ কার্যকর ব্যাটিংয়ে গড়ে তোলেন জুটি।
ইনিংস অবশ্য বড় করতে পারেননি কেউই। চাতুরাঙ্গাকে টানা দুটি ছক্কার পর আরেকটির চেষ্টায় আউট হয়ে যান পারভেজ। ৪ ছক্কায় তার ব্যাট থেকে আসে ৩০ বলে ৪০ রান। তাসকিনকে ছক্কায় ওড়ানোর পর স্লোয়ার বলে ক্যাচ হয়ে যান হোপ (২৮ বলে ৩২)।
তবে আফিফ ছিলেন বলেই চাপে পড়তে হয়নি খুলনা। আলাউদ্দিন বাবুর এক ওভারে দুই ছক্কার পর তিনি মোসাদ্দেকের এক ওভারে মারেন দুটি চার দুটি ছক্কা। দলকে জিতিয়ে ২১ বলে ৪৩ রানে অপরাজিত রয়ে যান তিনি। এবারের আসরের দ্বিতীয় ম্যাচে ৪১ করেছিলেন তিনি। দশম ম্যাচে এসে ছাড়িয়ে যেতে পারলেন সেই স্কোরকে।
দারুণ বোলিংয়ে ম্যাচের সেরা অবশ্য ওয়েইন পার্নেল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দুর্দান্ত ঢাকা: ২০ ওভারে ১২৮/৭ (নাঈম শেখ ৫, রসিংটন ১৮, সাইফ ০, রস ২৫, ইরফান ২৫, উইলিয়ামস ০, মোসাদ্দেক ২৬, চাতুরাঙ্গা ১৭*, আলাউদ্দিন ২*; নাহিদুল ৪-০-২৮-০, পার্নেল ৪-১-১৯-৩, আরিফ ৪-০-৪১-০, টম্স ৪-০-১৮-০, মুকিদুল ৪-০-১৮-৩)।
খুলনা টাইগার্স: ১৫.২ ওভারে ১৩১/৫ (লুইস ৪, এনামুল ০, পারভেজ ৪০, হোপ ৩২, আফিফ ৪৩*, জয় ২, পার্নেল ৫*; শরিফুল ৩.২-০-১৭-২, তাসকিন ৪-০-২৭-২, চাতুরাঙ্গা ৪-০-৩৫-১, মোসাদ্দেক ৩-০-৩৬-০, আলাউদ্দিন ১-০-১২-০)।
ফল: খুলনা টাইগার্স ৫ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: ওয়েইন পার্নেল।