টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে প্রতিপক্ষের বাইরে ম্যাচের ভেন্যু নিয়েও আলাদা করে ভাবতে হবে বাংলাদেশকে।
Published : 07 Jan 2024, 04:56 PM
সেন্ট ভিনসেন্টে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হয় না এক দশক। এখনও আন্তর্জাতিক অভিষেকের অপেক্ষায় ডালাস ও নিউ ইয়র্কের স্টেডিয়াম। এই তিন মাঠেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের লড়াইয়ে নামবে বাংলাদেশ। নতুন মাঠের অচেনা কন্ডিশনের চ্যালেঞ্জ মাথায় রেখেই তাদের এগোতে হবে সামনের পথে।
আগামী জুনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এবারের আসর। গ্রুপ পর্বে দুই দেশ মিলিয়েই নিজেদের চার ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ।
যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসে ৭ জুন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু ‘ডি’ গ্রুপে বাংলাদেশের যাত্রা। তিন দিন পর নিউ ইয়র্কে প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেন্ট ভিনসেন্টে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচ ১৩ জুন। একই মাঠে তিন দিন পর নেপালের মুখোমুখি হবে তারা।
চার মাঠের মধ্যে সেন্ট ভিনসেন্টের সঙ্গে কিছুটা পরিচিত বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত তিন সংস্করণ মিলিয়ে ওই মাঠে চারটি ম্যাচ খেলেছে তারা। তবে সবশেষটিও সেই ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে।
বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওই টেস্টের পর সেন্ট ভিনসেন্টে আর আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়নি। ২০২২ সালে সবশেষ মাঠে গড়ায় যুব ওয়ানডে। এই মাঠে কখনও ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগের খেলাও হয়নি। তাই সাম্প্রতিক সময়ের উইকেট-কন্ডিশন সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার সুযোগ অনেকটাই কম।
জাতীয় দলের নির্বাচক হাবিবুল বাশার অবশ্য এতে দুশ্চিন্তার কিছু দেখেন না৷ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপচারিতায় বললেন, গত কয়েক বছরে ক্যারিবিয়ান সফরের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ দলের কাজে লাগবে বলেই তার ধারণা।
“২০০৪ সালে যখন সেন্ট ভিনসেন্টে যাই, সেটি ছিল আমাদের প্রথম ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর। এরপর আমরা অনেকবার সেখানে গিয়েছি। তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের কন্ডিশন, সেখানে কী কী চ্যালেঞ্জ আসতে পারে তা আমরা ভালোভাবে জানি। এই অভিজ্ঞতাটা আমাদের আছে।”
“জ্যামাইকা ও বারবাডোজ বাদে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কন্ডিশন কিছুটা আমাদের দেশের মতোই। তাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আমরা কীভাবে নিজেদের মেলে ধরতে পারি। কোন কন্ডিশনে খেলছি, তার চেয়ে আমরা নিজেদের কাজ কতটা বাস্তবায়ন করতে পারি, তা নিয়েই বেশি চিন্তিত আমি।”
ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো যুক্তরাষ্ট্রেও খেলার অভিজ্ঞতা আছে বাংলাদেশের৷ তবে সবগুলো ম্যাচই হয়েছে ফ্লোরিডার লডারহিলে। ডালাস ও নিউ ইয়র্ক তাই পুরোপুরি নতুন বাংলাদেশ দলের জন্য৷
এই দুই মাঠ অবশ্য যে কোনো দলের জন্যই অচেনা। ২০০৮ সালে নির্মাণের পর ২০১৯ পর্যন্ত বেসবল খেলা হতো ডালাসের মাঠে। ২০১৭ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত আমেরিকান সকারে টেক্সাস ইউনাইটেডের ঘরের মাঠ ছিল এটি।
২০২০ সালের নভেম্বরে এই মাঠটি লিজ নেয় আমেরিকান ক্রিকেট এন্টারপ্রাইজ (এসিই)। এরপর থেকে ক্রিকেটের জন্যই ব্যবহৃত হচ্ছে এটি। কয়েক দফা বদলের পর এই মাঠের বর্তমান নাম গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়াম।
নিয়মিতই যুক্তরাষ্ট্রের ঘরোয়া বিভিন্ন খেলা হয় এই মাঠে। এর বাইরেও বিশ্বের তারকা ক্রিকেটারদের নিয়ে গত বছর আয়োজন করা হয় মেজর লিগ ক্রিকেট (এমএলসি)। ফাইনালসহ বেশ কিছু ম্যাচে দেখা যায় ১৮০ ছাড়ানো সংগ্রহ।
বিশ্বকাপ প্রস্তুতিতে এমএলসি থেকে পাওয়া তথ্য-পরিসংখ্যান কিংবা ভিডিও ফুটেজ থেকে সাহায্য নিতে পারে বাংলাদেশ। আর কন্ডিশন বোঝার জন্য টুর্নামেন্ট শুরুর কিছু দিন আগেই সেখানে যাওয়ার কথা বললেন হাবিবুল বাশার।
"নতুন মাঠ আসলে সব দেশের জন্যই নতুন। ডালাসের মাঠ তো সব দেশের জন্যই প্রথম হবে। সবার জন্যই অচেনা কন্ডিশন। তাই আমি খুব বেশি পার্থক্য দেখি না। সব দলের জন্য একই রকম হবে।”
“কন্ডিশনটা কেমন হবে, সেটা আশা করি আমরা বুঝে যাব। বিশ্বকাপের আগে আমাদের হাতে সময় থাকবে। আমরা সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে পারব। এসব নিয়ে কাজ হবেই। তবে আমি দুশ্চিন্তার কিছু দেখি না।”
বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চমক হতে পারে নিউ ইয়র্কের মাঠ। একে তো দক্ষিণ আফ্রিকার মতো কঠিন প্রতিপক্ষ। তার ওপর নিউ ইয়র্কের নাসাউ কাউন্টির মাঠ সম্পর্কে নেই তেমন কোনো তথ্য!
স্থানীয় সাংবাদিক পিটার ডেলা পেনার সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট অনুযায়ী, এখনও পিচই বানানো হয়নি নিউ ইয়র্কের ওই মাঠে। এমনকি ফেব্রুয়ারির আগে নাকি মাঠের কাজও শুরু হবে না।
আইসিসির তত্ত্বাবধানে বিশ্বকাপ শুরুর আগেই হয়তো প্রস্তুত হয়ে যাবে মাঠ। কিন্তু ওই মাঠের উইকেটের আচরণ সম্পর্কে অন্ধকারেই থাকতে হবে সব দলকে।
বাংলাদেশ অবশ্য পেতে পারে খানিক সুবিধা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নামার আগে ওই মাঠে ভারত-পাকিস্তানসহ হবে পাঁচটি ম্যাচ। সেসব থেকে কিছুটা হলেও ধারণা নিতে পারবে বাংলাদেশ।
নিউ ইয়র্কের আপাতত 'অপ্রস্তুত' মাঠ সময়ের আগেই প্রস্তুত হয়ে যাবে, বিশ্বাস বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুলের।
“নিউ ইয়র্ক বা ডালাস, সব মাঠই বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুত হয়ে যাবে। যেহেতু বিশ্বকাপের খেলা, নিশ্চিতভাবেই টুর্নামেন্ট শুরুর আগে সব কাজ হয়ে যাবে। আইসিসি যেহেতু ভেন্যু হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে, অবশ্যই তারা এই বিষয়টা দেখবে।”