একসময় যার পরিচয় ছিল কিপার-ব্যাটসম্যান, সেই তিনিই বল হাতে ৪ উইকেট নিলেন বাংলাদেশের বিপক্ষে সিলেট টেস্টের প্রথম দিনে।
Published : 28 Nov 2023, 07:39 PM
গ্লেন ফিলিপসকে এখন অলরাউন্ডার বলা যেতেই পারে!
শুনে অনেকে ভ্রু কুঁচকে তাকাতে পারেন। ফিলিপস এখন মোটামুটি নিয়মিতই হাত ঘোরান। টুকটাক উইকেটও পান বটে। তবে তাই বলে এখনই অলরাউন্ডার?
কিন্তু টেস্ট ম্যাচে প্রথম দিনে স্পিন বোলিংয়ে ৪ উইকেট শিকার করেন যিনি, দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে দলের প্রতিনিধি হয়ে আসেন বোলিংয়ের সাফল্যে, তার বোলিং সত্ত্বাকে তো গুরুত্ব দিতেই হয়!
ফিলিপসের নিজের অন্তত নিজের বোলিংয়ের প্রতি অনুরাগ প্রবল। একসময় তার তার মূল পরিচয় ছিল কিপার-ব্যাটসম্যান। তবে স্রেফ এইটুকুতে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখতে চাননি তিনি। ফিল্ডিংয়ে নিজেকে এমনভাবে ঝালিয়ে নিয়েছেন যে, এখন বিশ্বের সেরা ফিল্ডারদের একজন তিনি। কিপার যখন ছিলেন, মাঝেমাধ্যে হাত ঘোরাতেন তখনও। পরে ঠিক করেন, বোলিংয়েও হাত পাকাবেন। সেই প্রক্রিয়া চলছে। সীমিত ওভারে তিনি এখন বেশ কার্যকর এক বোলিং বিকল্প। এখন টেস্টেও দেখাচ্ছেন তার ঝলক।
সিলেট টেস্টের প্রথম দিনে বোলিং সাফল্যের পর সংবাদ সম্মেলনে তার আগের কিপার পরিচয়ের প্রসঙ্গ উঠতেই হাসতে হাসতে বললেন, “অনেক দিন ধরেই চেষ্টা করছি কিপার-ব্যাটার তকমাটা যেন মুছে ফেলা যায়। আশা করি এই চার উইকেটের পর এই পরিচয়ে কিছুটা সিলগালা বসবে!”
টেস্টে বোলিং সাফল্যের পর আসলে এমন দাবি তিনি করতেই পারেন। সীমিত ওভারে বোলিংয়ের উন্নতি তিনি দেখিয়ে চলেছেন বটে। কিন্তু টেস্টের প্রথম দিনে চার উইকেট পাওয়া মানে তো বিশেষ কিছুই!
এখানে তিনি ছাড়িয়ে গেছেন আসলে নিজের প্রত্যাশাকেও। এই টেস্টে তার একাদশে জায়গা পাওয়ার ক্ষেত্রে বোলিংয়ের ভূমিকাও ছিল। ক্যারিয়ারে আগের একমাত্র টেস্ট ম্যাচটি খেলেছিলেন তিনি সেই ২০২০ সালের জানুয়ারিতে। তখনও তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বোলিং করেন না। কিন্তু এখন বদলে গেছে চিত্র। তার বোলিংয়ে দলের আস্থা এখন এতটাই বেড়েছে যে, রাচিন রবীন্দ্রর মতো জেনু্ইন স্পিনিং অলরাউন্ডারকে বাইরে রেখে তাকে একাদশে বেছে নিয়েছে দল।
কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্টও কি ভাবতে পেরেছিল যে প্রথম দিনে দলের সফলতম বোলার হবেন এই ফিলিপসই! তিনি নিজে যে এমন সাফল্যে চমকে গেছেন, তা লুকালেন না সংবাদ সম্মেলনে।
“হ্যাঁ, পুরোপুরিই (নিজেও চমকে গেছি)… যদিও টেস্টে বোলিং করার স্বপ্ন অনেক দিন ধরেই দেখছিলাম। এই টেস্টে দলের ভারসাম্য ও বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপে অনেক বাঁহাতি ব্যাটার মিলিয়ে আমার সুযোগটা এসে গেছে। টিমি (অধিনায়ক টিম সাউদি) যেভাবে বোলারদের আজকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে কাজে লাগিয়েছে, সেটাও ছিল দারুণ।”
বোলার ফিলিপসকে সফল করে তুলতে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের প্রচেষ্টাও কম ছিল না! ফুল টস ডেলিভারিতে তাকে প্রথম টেস্ট উইকেট উপহার দেন নাজমুল হোসেন শান্ত। মুমিনুল হক, শাহাদাত হোসেনদের আউটেও দায়টা বেশির ভাগ তাদেরই। ফিলিপসে তাতে আপত্তি জানানোর কারণ নেই!
“বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা আমাদের ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করেছে। এজাজকে (প্যাটেল) অনেক চাপে ফেলে দিয়েছিল তারা। এটাই আমাদের উইকেট এনে দেওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। তবে উপমহাদেশের পিচে আমরা এমনিতেও জানি, বোলারদের লাইন-লেংথ এলোমেলো করে দিতে ব্যাটসম্যানরা আগ্রাসী হওয়ার চেষ্টা করে। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা সেটাই চেষ্টা করেছে আজ এবং এটিই আমাদেরকে সুযোগ করে দিয়েছে উইকেট নেওয়ার।”
তবে ব্যাটসম্যানদের ভুলের দিকে ঠেলে দিতেও তো বোলারদের কিছু না কিছু করতে হয়। সেটুকুর জন্য নিজের যে চেষ্টা, বোলার হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার স্বপ্নের পেছনে ছুটতে যে কঠোর পরিশ্রম, সেটিও তুলে ধরলেন ২৬ বছর বয়সী ক্রিকেটার।
“বেশ কয়েক বছর ধরেই এই লক্ষ্য নিয়ে সত্যিই কঠোর পরিশ্রম করে গেছি আমি। আমার এটাও মনে হয়েছে যে, টেস্ট খেলতে হলে বল হাতে কিছু একটা করতেহবে আমাকে। আমাদের ব্যাটিং লাইন-আপ দারুণ শক্তিশালী। এখানে জায়গা করে নিতে হলে তাই অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা জরুরি।”
“প্রক্রিয়ার কথা বললে, গত কয়েক বছরে নিজের বোলিং নিয়ে অনেক কাজ করেছি আমি। ব্যাটিং নিয়ে তো বছরের পর বছর ধরে খাটুনি চলছেই, তবে লাল বলে শীর্ষ পর্যায়ে খেলার জন্য, প্রক্রিয়ায় থাকার জন্য চেষ্টা করে গেছি। আর নিজের বোলিংয়ের ওপর বিশ্বাস আমার সবসময়ই ছিল। আজকে শুরুতে ভাগ্য কিছুটা সহায়তা করেছে বটে। তবে ভাগ্যকে পাশে লাগে কখনও কখনও।”
সেই ভাগ্যটা হয়তো তৈরি করেছেন তিনি নিজেই। পরিশ্রম দিয়েই নিজেকে ভেঙে গড়ে চলেছেন। যেভাবে এগোচ্ছেন, সামনে হয়তো তাকে অলরাউন্ডার বললে হয়তো আর ভ্রু কুচকে যাবে না কারও!