টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নিজের প্রথম সেঞ্চুরিটি তরুণ এই ব্যাটসম্যান উৎসর্গ করলেন তার মাকে।
Published : 10 Feb 2024, 07:57 AM
চার বছর হয়ে গেছে। তবে সবকিছুই এখনও স্পষ্টই চোখে ভাসে তাওহিদ হৃদয়ের। নিজেই বললেন, চোখ বন্ধ করলেই সেদিনের সবকিছু দেখতে পান তিনি। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ, হোক সেটি যুব বিশ্বকাপে, তবু সেটির তুলনীয় কিছুও তো বাংলাদেশের ক্রিকেটে নেই! ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তাই কখনোই ভোলার কথা নয় হৃদয় কিংবা ওই দলের কারও।
হৃদয় ভোলেননি তা। তবে তারিখটি আলাদা করে তার মনে ছিল না। বিপিএলে ব্যস্ত সময় কাটছে, তারিখটি মনের আড়ালে চলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। মনে করিয়ে দেওয়ার পর অবশ্য তার মুখে চওড়া হাসি। যদিও এই প্রসঙ্গ ছাড়াই হৃদয় মাইক্রোফোনের সামনে বলেছেন, এই দিনটির জন্য তার অপেক্ষা ছিল অনেক দিনের। কাকতালীয়ভাবে, প্রথম টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরির স্বাদ যে পেলেন তিনি সেই একই তারিখে!
বিপিএলে দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে শুক্রবার দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরিতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে জয় এনে দেন হৃদয়। ৮ চার ও ৭ ছক্কায় ৫৭ বলে ১০৮ রানের অপরাজিত ইনিংসটি বিপিএলের দশম আসরের প্রথম সেঞ্চুরি। ২০ ওভারের ক্রিকেটে তার প্রথম শতরানও।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১৪ ম্যাচে ৩টি শতরান তার। এর মধ্যে একটি আছে দ্বিশতকও। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ২২ ফিফটির পাশে সেঞ্চুরি আছে একটি। এবার টি-টোয়েন্টিতেও এখানে অপূর্ণতা রইল না।
টুর্নামেন্টের সম্প্রচারকারী প্রতিষ্ঠান টি-স্পোর্টসে ম্যাচের পর হৃদয় বললেন, তার অনেক প্রতীক্ষার ইনিংস এটি।
“বলে বোঝাতে পারব না, কতটা খুশি আজকে… এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করেছিলাম অনেক দিন ধরেই। প্রতিটি ব্যাটসম্যানের জন্যই সেঞ্চুরি একটা স্বপ্ন। আমার জন্যও এই অনুভূতি অন্যরকম…।”
ম্যান অব দা ম্যাচ হয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনেও হৃদয় শোনান তার একটি স্বপ্ন পূরণের গল্প।
“টি-টোয়েন্টিতে প্রথম শতরান… আলহামদুলিল্লাহ। প্রতিটি ব্যাটসম্যানেরই স্বপ্ন থাকে যে সেঞ্চুরি করবে। গত বছর আমার সুযোগ ছিল সেঞ্চুরি করার, কিন্তু করতে পারিনি। এবার একটা সেঞ্চুরি হয়েছে। প্রতিটি ব্যাটসম্যানের জন্যই সেঞ্চুরি অনেক গুরুত্বপূর্ণ।”
বিপিএলের গত আসর থেকেই হৃদয়ের ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরে যাওয়ার শুরুর। সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে ভয়ডরহীন ব্যাটিংয়ে দুর্দান্ত কয়েকটি ইনিংস খেলে তিনি নজর কাড়েন। ওই দলের হয়ে ওপেনিংয়ে আর তিন নম্বরেই ব্যাট করার সুযোগটা বেশি পেয়েছিলেন তিনি। এবার কুমিল্লার হয়ে শুরুটাও ছিল তিনে। প্রথম ম্যাচে ৪৭ রান আসে তার ব্যাট থেকে। তবে পরের ম্যাচে তিনে নেমে আউট হয়ে যান শূন্যতে।
এরপর তার ব্যাটিং অর্ডার এক ধাপ নামিয়ে দেওয়া হয়। পরের চার ম্যাচ টানা চার নম্বরে খেলানো হয় তাকে। তাতে ফল আসে ভালো-মন্দের মিশেল। এক ম্যাচে করেন ২৮ বলে ৩৯, আরেকটিতে ১২ বলে ৩১। বাকি দুটিতে ফেরেন ১৬ ও ৯ রানে।
ঢাকার বিপক্ষে রান তাড়ার চ্যালেঞ্জে আবার তাকে ফেরানো হয় তিনে। সেই ভরসার প্রতিদান দিলেন তিনি ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়ে। তিনে আস্থা রাখার জন্য হৃদয় কৃতজ্ঞতা জানালেন তার কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ও অধিনায়ক লিটন কুমার দাসের প্রতি।
“প্রতিটি ব্যাটসম্যানেরই ইচ্ছা থাকে সেঞ্চুরি করা। প্রথম ম্যাচে সুযোগ পেয়েছিলাম ওপরে ব্যাট করার। হঠাৎ করে আজকে আবার তিন নম্বরে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছি। গত বছর তো ওপরেই ব্যাট করেছিলাম। মাঝখানে (মিডল অর্ডারে) ব্যাট করাটা একরকম, ওপরে খেলাটা আরেকরকম।”
“আমার কোচ-অধিনায়ককে ধন্যবাদ জানাতে চাই ওপরে ব্যাট করার সুযোগ দেওয়ার জন্য। চেষ্টা করেছি সুযোগটা কীভাবে কাজে লাগাতে পারি এবং আজকে একটা ভালো শুরু করার জায়গা ছিল যে, এখান থেকে যদি আমার দলকে দিতে পারি (জয় এনে দিতে), তাহলে আমার জন্য ভালো।”
শেষ পর্যন্ত দলের জয় সঙ্গে নিয়েই ফিরেছেন হৃদয়। ইনিংসটি তিনি উৎসর্গ করেছেন তার মাকে। ক্রিকেটার হিসেবে তার বেড়ে ওঠায় মায়ের ছিল বড় ভূমিকা। একসময় যখন তার স্বপ্ন থমকে যাওয়ার পথে, হতাশায় ক্রিকেট ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন, তখন মায়ের ভালোবাসার পরশ আর প্রেরণার ছোঁয়া তাকে নতুন স্বপ্নে উজ্জীবিত করেছিল।
২৩ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান টি-স্পোর্টসে বললেন, এই সেঞ্চুরিটি মায়ের জন্য।
“অবশ্যই আমি আমার মাকে উৎসর্গ করতে চাই। তিনি আসেননি (মাঠে)… তবে জানি, আমি যখনই মাঠে থাকি, মা সবসময় টিভির সামনে থাকেন। বারবার না করি। আম্মা তো অসুস্থ… আল্লাহর রহমতে এখন অবশ্য সুস্থ আছেন। আমি জানি যে একটা টেনশন কাজ করে (মায়ের)। এজন্য সবসময় বলি যে খেলা দেখার দরকার নেই। তার পরও উনি বলেন যে, ‘আমি তো খেলা দেখি না, আমি তোমাকে দেখি।”