‘অবশেষে একজন টেন্ডুলকার আইপিএলে একটি উইকেট পেল’

ছেলে অর্জুন টেন্ডুলকারকে উইকেট পেতে দেখে উচ্ছ্বসিত শচিন টেন্ডুলকার, যিনি নিজে কখনও আইপিএলে উইকেটের স্বাদ পাননি।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 April 2023, 07:09 AM
Updated : 19 April 2023, 07:09 AM

ভুবনেশ্বর কুমারের ক্যাচ নিয়েই বিশ্বজয়ের উল্লাসে ছুটতে থাকলেন রোহিত শর্মা। বোলারের চেয়ে তার উল্লাসই যেন বেশি! বোলার অর্জুন টেন্ডুলকারের উদযাপনে বাঁধনহারা কিছু দেখা গেল না। বরং সতীর্থদের অভিনন্দনের স্রোতে তাকে মনে হলো যেন কিছুটা বিব্রত। টিভি ক্যামেরা তখন তাক করল ড্রেসিং রুমে অর্জুনের বিখ্যাত বাবার দিকে। কিন্তু শচিন টেন্ডুলকারের প্রতিক্রিয়া তেমন কিছু দেখা গেল না। পরে অবশ্য টুইটারে নিজের অনুভূতি ঠিকই জানালেন এই কিংবদন্তি।

ব্যাটসম্যান শচিন টেন্ডুলকারকে নিয়ে বলার আর কিছু বাকি নেই। তবে বল হাতেও তিনি ছিলেন বেশ কার্যকর। একটা সময় তো নিয়মিত বোলারই ছিলেন। আইপিএলে অবশ্য খুব একটা হাত ঘোরাননি তিনি। তবে যতটুকু বোলিং করেছেন, উইকেটের স্বাদ পাননি। তার ছেলে বাঁহাতি পেসার অর্জুন উইকেটের স্বাদ পেলেন আইপিএল ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচে। টেন্ডুলকার পরিবারের প্রথম আইপিএল উইকেট!

হায়দরাবাদে মঙ্গলবার সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিপক্ষে ভুবনেশ্বরকে আউট করে ম্যাচের ইতি টানেন অর্জুন। শচিনের ছেলে হিসেবে তার ওপর পাদপ্রদীপের আলো অনেক আগে থেকেই। তার প্রথম আইপিএল উইকেটেও বাড়তি উচ্ছ্বাস দেখা যায় ডাগআউটে, মাঠে মুম্বাই সতীর্থদের মাঝে, এমনকি ধারাভাষ্যকক্ষে রবি শাস্ত্রী, ইয়ান বিশপ, কেভিন পিটারসেনদের কণ্ঠেও।

ম্যাচের পর টুইটারে শচিন টেন্ডুলকার প্রশংসা করেন মুম্বাইয়ের জয়ের নায়কদের। সেখানেই একটি লাইনে তুলে ধরেন ছেলে অর্জুনের অর্জনকেও।

“আরও একবার মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের দুর্দান্ত অলরাউন্ড পারফরম্যান্স। ক্যামেরন গ্রিন ব্যাটে-বলে ছিলেন দারুণ, ইশান (কিষান) ও তিলকের (ভার্মা) ব্যাটিং ছিল যতটা সম্ভব ভালো। আইপিএল প্রতিদিনই কৌতূহল জাগানিয়া হয়ে উঠছে। গ্রেট গোয়িং বয়েজ!”

“এবং অবশেষে একজন টেন্ডুলকার আইপিএলে একটি উইকেট পেল!”

গোটা আইপিএল ক্যারিয়ার এই মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সেই কাটিয়েছেন শচিন। ২০০৮ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত ছিলেন খেলোয়াড় হিসেবে। এরপর থেকে এখনও পর্যন্ত মেন্টর হিসেবে। ৬ মৌসুম খেললেও তিনি বোলিং করেন স্রেফ এক মৌসুমেই। ৬ ওভারে ৫৮ রান দিয়ে কোনো উইকেট তিনি পাননি।

অর্জুনের মূল কাজই বোলিং। পাশাপাশি ব্যাটিংও তিনি ভালোই করেন। এবার রঞ্জি ট্রফিতে অভিষেকেই উপহার দেন সেঞ্চুরি। তবে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সে তিনি আছেন মূলত বোলিংয়ের কারণেই। ২০২১ আইপিএলের আগে নিলামে তাকে ২০ লাখ রুপিতে দলে নেয় মুম্বাই।

সেই থেকেই তিনি আছেন দলে। তবে মুম্বাইয়ের জার্সিতে অভিষেক হলো এবারই। প্রথম ম্যাচে গত রোববার কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে ২ ওভারে ১৭ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকেন। দ্বিতীয় ম্যাচে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিপক্ষে প্রথম স্পেলে ২ ওভারে ১৪ রান দেওয়ার পর শেষ ওভারে ওই উইকেট নেন ৪ রান দিয়ে।

ম্যাচের পর মাইক্রোফোন হাতেও দেখা যায় অর্জুনকে। তবে এখানে এখনও ঠিক ততটা স্বতস্ফূর্ত নন তিনি। নানা প্রশ্নের উত্তর দিলেন ছোট ছোট কথায়। রবি শাস্ত্রী শুরুতেই বললেন, ‘বাবার তো কোনো উইকেট ছিল না, আপনার একটি হয়ে গেল…।”

অর্জুনের প্রতিক্রিয়ায় অবশ্য খুব একটা উচ্ছ্বাস মিশে থাকল না, “আইপিএলে প্রথম উইকেট পাওয়া দারুণ ব্যাপার। আমি স্রেফ নিজের কাজে মনোযোগ দিয়েছি, পরিকল্পনায় অটল থাকার চেষ্টা করেছি।”

ইয়ান বিশন জানতে চাইলেন, বাবার সঙ্গে ক্রিকেট নিয়ে কথা কতটা হয় তার, প্রস্তুতিতে কতটা পরামর্শ দেন তিনি। অর্জুন এটিও জানালেন ছোট্ট করেই।

“ক্রিকেট নিয়ে কথা হয় আমাদের। খেলার আগে কৌশল ও পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করি আমরা। অনুশীলনে যা করি আমি, মাঠেও তা করতে বলেন তিনি।”

গতি তার খুব বেশি নয়। ১৩০ কিলোমিটার গতির আশেপাশে বোলিং করেন। তবে দুই ম্যাচেই নতুন বলে বেশ কারুকাজ দেখিয়েছেন অর্জুন। বল সুইং করাতে পেরেছেন দুই দিকেই। দ্বিতীয় ম্যাচে দেখিয়েছেন ডেথ ওভারের দক্ষতাও। দারুণ কিছু ইয়র্কার ও ফুল লেংথ ডেলিভারি তিনি করেছেন।

মুম্বাই অধিনায়ক রোহিত শর্মা ম্যাচ শেষে বললেন, মৌসুম শুরুর আগেই অর্জুনের উন্নতি চোখে পড়ে তাদের।

“অর্জুন তিন বছর ধরে এই দলের অংশ। বছরের পর বছর ধরে তাকে গড়ে উঠতে দেখেছি আমি। সে নিজের কাজটা বোঝে এবং দলের জন্য যা করতে চায়, তা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী।”

“আইপিএলের আগে প্রস্তুতির সময়টায় তাকে দেখেছিলাম আমরা। বেশ জোরে বোলিং করছিল, ইয়র্কার খুব ভালো করছিল, নিজের পরিকল্পনায় বেশ স্বচ্ছ ছিল। সবকিছু বেশ স্বাভাবিক রাখছিল সে। নতুন বল সুইং করানোর চেষ্টা করছে সে এবং শেষ দিকে চেষ্টা করছে ইয়র্ক করতে। এটিই দরকার।”