অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের মিশেলে বিসিএলের ৪ দল

সাব্বির রহমানের মতো দল পাননি জাতীয় লিগে আলো ছড়ানো তরুণ পেসার নাহিদ রানা।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Nov 2022, 01:52 PM
Updated : 15 Nov 2022, 01:52 PM

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও বিসিবি একাদশের ভারত সফরের কারণে জাতীয় লিগে বেশিরভাগ রাউন্ডে পাওয়া যায়নি প্রথম সারির ক্রিকেটারদের। বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের ওয়ানডে সংস্করণ দিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরছেন তারকা ক্রিকেটাররা।

টুর্নামেন্টের প্লেয়ার্স ড্রাফট মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিসিএল মূলত চার দিনের ম্যাচের প্রতিযোগিতা হলেও গত মৌসুম থেকে এর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে ওয়ানডে টুর্নামেন্টও। গত আসরে দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটের পর হয়েছিল এক দিনের ম্যাচগুলো। এবার শুরুতেই হবে সেটি। 

আগামী ২০ নভেম্বর শুরু হবে বিসিএলের ওয়ানডে সংস্করণ। বিকেএসপিতে প্রতিটি দল একে অপরের বিপক্ষে খেলবে একটি করে ম্যাচ। পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ দুই দলকে নিয়ে ২৭ নভেম্বর হবে ফাইনাল। মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটি হবে দিবা-রাত্রির।

গত আসর থেকে ছয় জন করে খেলোয়াড় ধরে রেখেছে সব দল। তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, আফিফ হোসেনকে রেখে দিয়েছে ইসলামী ব্যাংক পূর্বাঞ্চল। নাজমুল হোসেন শান্ত, সৌম্য সরকারদের ছাড়েনি মধ্যাঞ্চল। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও লিটন দাস বিসিবি উত্তরাঞ্চল এবং মেহেদী হাসান মিরাজ ও এনামুল হক বিসিবি দক্ষিণাঞ্চলেই আছেন। 

প্লেয়ার্স ড্রাফট থেকে চলতি জাতীয় লিগে ব্যাট ও বল হাতে ভালো করা ক্রিকেটারদেরকে প্রাধান্য দিয়ে অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের মিশেলে দল সাজিয়েছে সবাই। তবে রাজশাহী বিভাগের হয়ে আলো ছড়ানো ২০ বছর বয়সী পেসার নাহিদ রানাকে নেয়নি কোনো দল। লিগের পঞ্চম রাউন্ড পর্যন্ত ২৭ উইকেট নিয়ে তালিকার দুই নম্বরে ছিলেন তিনি। 

পরিচিত মুখদের মধ্যে দল পাননি সাব্বির রহমান। বিশ্বকাপের জন্য ঘোষিত দলে শুরুতে ছিলেন তিনি। নিউ জিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের পর সাদামাটা ফর্মের কারণে তাকে দল থেকে বাদ দেওয়া হয়। দেশে ফিরে জাতীয় লিগের তিন রাউন্ডেও তেমন কিছু করতে পারেননি ৩০ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান।

এছাড়া জাতীয় দলের দুই পেসার সৈয়দ খালেদ আহমেদ ও আবু জায়েদ রাহিও দল পাননি। বিসিবির টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি জানিয়েছেন, দল না পাওয়া খেলোয়াড়দেরও সামনে সুযোগ আসতে পারে। প্লেয়ার্স ড্রাফট শেষে মিরপুরে সংবাদ মাধ্যমে এ কথা বলেন তিনি।  

"আমাদের টেকনিক্যাল কমিটি সবকিছু বিবেচনায় এনে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। আমাদের চেষ্টা থাকবে যত বেশি খেলোয়াড়কে সুযোগ করে দেওয়া যায়। তারা যেন যেকোনো কন্ডিশনে ব্যস্ত থাকে। এটিই আমাদের লক্ষ্য। (যারা দল পায়নি) তারা দল পাবে কি না সেটি অনিশ্চিত। তবে এভেইলেবল থাকলে তারাও সুযোগ পাবে।"

ডিসেম্বরের প্রথম দিন বাংলাদেশে আসছে ভারত ক্রিকেট দল। তাদের বিপক্ষে শুরুতে ওয়ানডে সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। এ কারণে বিসিএলে এবার চার দিনের ম্যাচের আগে ওয়ানডে খেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানালেন সাজ্জাদুল আলম। ভারত সিরিজের সঙ্গে মিল রেখে বিসিএলের ওয়ানডে সংস্করণও কুকাবুরা বলে খেলা হবে। 

"এরপর আমাদের যে আন্তর্জাতিক সূচি আছে, সেখানে ওয়ানডে খেলতে হবে। যে কারণে আমাদের জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা এখানে কিছু ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছে। এর ফলে ওই সিরিজেও এর ফায়দা পেতে পারি। সেটা চিন্তা করেই এমনটা করা হয়েছে। ভারত সিরিজে যা যা করা হবে, বলসহ অন্যান্য যা আছে সব একই রাখার চেষ্টা করছি এখানে। যাতে খেলোয়াড়েরা অভ্যস্ত হয়ে ওঠে।"

ভারত সিরিজের পরই রয়েছে বিপিএল। এরপর আবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজের খেলা। সব মিলিয়ে সামনে ব্যস্ত সময় পার করবে দেশের ক্রিকেট। বিসিএলের চার দিনের ম্যাচগুলো কবে হবে, সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান। 

"এরপর বিসিএল লঙ্গার ভার্সনের জন্য আমাদের দুইটা ফাঁকা জায়গা আছে। একটা ডিসেম্বরে, আরেকটা ফেব্রুয়ারিতে। আমরা চাচ্ছি যে ডিসেম্বরের দিকেই এটা করতে। যদি না হয়, ফেব্রুয়ারিতে। ডিসেম্বরের ১২ তারিখ অথবা ফেব্রুয়ারির ১২ তারিখ হতে পারে। আমি ডিসেম্বরের কথা বলেছি। তবে সিদ্ধান্ত হয়নি এখনও।"

ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টুর্নামেন্ট বলা হলেও গত কয়েক মৌসুম ধরে বিসিএলের দুইটি দল পরিচালনা করছে খোদ বিসিবি; গত আসরে ছিল ইসলামী ব্যাংক পূর্বাঞ্চল ও ওয়ালটন মধ্যাঞ্চল। এবারের আসরে সরে দাঁড়িয়েছে ওয়ালটন। তাই তিনটি দল চালাতে হবে বিসিবিকে।

এমতাবস্থায় এটিকে আদৌ ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টুর্নামেন্ট বলা যায় কি না, তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। এ বিষয়ে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক দুরাবস্থার কথা বললেন সাজ্জাদুল আলম। আর্থিক সংকট কেটে গেলে ওয়ালটন আবার বিসিএলে যুক্ত হবে বলে আশাবাদী তিনি।

"এটি আসলে দুঃখজনক। এই মুহূর্তে সরে গেছে একটা দল। সারা বিশ্বেরই অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ। সেটার ফলশ্রুতিতে অনেক কিছুতেই প্রভাব পড়েছে। আমাদের যে ফ্র্যাঞ্চাইজি ছিল ওয়ালটন, তারাও জানিয়েছে তারা বিভিন্ন সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সমস্যা কাটিয়ে উঠলে উনারা আবার আমাদের সঙ্গে থাকবে।"

বিসিএলের চার দলের স্কোয়াড

বিসিবি দক্ষিণাঞ্চল: এনামুল হক, নাসুম আহমেদ, তৌহিদ হৃদয়, জিয়াউর রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজ, জাকির হাসান, শরিফুল ইসলাম, নাঈম ইসলাম, মোহাম্মদ নাঈম শেখ, নাসির হোসেন, কামরুল ইসলাম রাব্বি, তানজিম হাসান, আলাউদ্দিন বাবু, আরাফাত সানি ও রিশাদ হাসান।

মধ্যাঞ্চল জোন: মোসাদ্দেক হোসেন, মোহাম্মদ মিঠুন, নাজমুল হোসেন শান্ত, সৌম্য সরকার, হাসান মাহমুদ, রবিউল হক, হাসান মাহমুদ, নাহিদুল ইসলাম, মুমিনুল হক, আবদুল মজিদ, সুমন খান, জাকের আলি, সালমান হোসেন, তাইজুল ইসলাম ও মুশফিক হাসান।

ইসলামী ব্যাংক পূর্বাঞ্চল: তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, আফিফ হোসেন, ইয়াসির আলী চৌধুরি, ইমরুল কায়েস, তানভীর ইসলাম, শেখ মেহেদি হাসান, রেজাউর রহমান, ইবাদত হোসেন, আশিকুর জামান, প্রীতম কুমার, মাহমুদুল হাসান জয়, রুবেল হোসেন, নাবিল সামাদ ও শরিফউল্লাহ।

বিসিবি দক্ষিণাঞ্চল: মাহমুদউল্লাহ, লিটন দাস, সানজামুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, আকবর আলি, রাকিবুল হাসান, সাইফ হাসান, ফজলে মাহমুদ, শাহাদাত হোসেন, শামীম হোসেন, তানজিদ হাসান, শফিকুল ইসলাম, রিপন মণ্ডল ও নাঈম হাসান।