এবারের বিপিএলে প্রথম সেঞ্চুরির পর তরুণ এই ব্যাটসম্যান বললেন, বাংলাদেশ যুব দলের হয়ে টানা তিন ম্যাচের সেঞ্চুরিই এখন তার মনে সবচেয়ে বিশেষ জায়গা নিয়ে আছে।
Published : 10 Feb 2024, 07:32 AM
যুব ক্রিকেটের রেকর্ড বইয়ের গৌরবময় একটি পাতায় এখনও একা তাওহিদ হৃদয়। যুব ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে টানা তিন ম্যাচে সেঞ্চুরি করা একমাত্র ব্যাটসম্যান তিনিই। সেই সেঞ্চুরিগুলোর ভালোলাগার সুবাসে এখনও বুঁদ তিনি নিজেও। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরির স্বাদ পাওয়ার দিনে তরুণ এই ব্যাটসম্যান বললেন, এখনও তার হৃদয়ের সবচেয়ে বিশেষ জায়গা নিয়ে আছে ওই টানা তিন সেঞ্চুরি।
২০ ওভারের ক্রিকেটে হৃদয়ের প্রথম সেঞ্চুরি এসেছে বিপিএলের মঞ্চে। দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে মিরপুরে শুক্রবার ১৭৬ রান তাড়ায় ৫৭ বলে ১০৮ রানের স্মরণীয় এক ইনিংস উপহার দিয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে জয় এনে দিয়েছেন তিনি।
স্বীকৃত ক্রিকেট এটি তার পঞ্চম সেঞ্চুরি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে একটি ডাবল সেঞ্চুরিসহ শতরান আছে তার ৩টি। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে করেছেন একটি সেঞ্চুরি। এবার টি-টোয়েন্টিতেও তিন অঙ্কের কাঙ্ক্ষিত ছোঁয়া তিনি পেলেন। কিন্তু এমন দিনেও তিনি ফিরে গেলেন প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর আগে।
২০১৯ সালের নভেম্বরে বাংলদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে ৫ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলেছিল শ্রীলঙ্কা অনূর্ধ্ব-১৯ দল। সিরিজের প্রথম ম্যাচে তিনি খেলতে পারেননি। পরে দ্বিতীয় ম্যাচে খুলনায় করেন ৫৬ বলে অপরাজিত ৮২। সিরিজের পরের তিন ম্যাচ ছিল চট্টগ্রামে। একটিতে ৯৮ বলে ১২৩ করে অপরাজিত থাকেন তিনি, পরেরটিতে করেন ১২০ বলে ১১৫, শেষটিতে ১০২ বলে ১১১।
এরপর ক্যারিয়ারে বেশ অনেকটা পথ তিনি পাড়ি দিয়েছেন। পেশাদার জগতে পা রেখেছেন, স্বীকৃত ক্রিকেটে খেলছেন নিয়মিত। তবে বিপিএলে প্রথম সেঞ্চুরির পর বললেন, বয়সভিত্তিক পর্যায়ের ওই টানা তিন সেঞ্চুরিকে কখনোই ভুলবেন না তিনি।
“প্রতিটি শতরানই আমার কাছে স্পেশাল। স্পেশাল যদি বলি, অনূর্ধ্ব-১৯ দলে টানা তিন ম্যাচে তিনটি শতরান করেছিলাম শ্রীলঙ্কার সঙ্গে। আমার কাছে সবসময় সারা জীবন ওইটাই স্পেশাল থাকবে। কারণ টানা তিন ম্যাচে তিনটা শতরান করেছিলাম। এটা আমার জন্য অনেক বড় অর্জন ছিল।”
বিপিএলের সেঞ্চুরিটাও অবশ্য তার হৃদয়ে আলাদা জায়গা পেয়ে যাওয়ার কথা। টি-টোয়েন্টিতে প্রথম সেঞ্চুরি বলেই শুধু নয়, ম্যাচের পরিস্থিতি ও তার খেলার ধরনের কারণেও।
মিরপুরে ১৭৫ রান টপকে জয় সচরাচর দেখা যায় কমই। সেখানে রান তাড়ায় ২৩ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল কুমিল্লা। তবে তাতে ভড়কে না গিয়ে শট খেলতে থাকেন হৃদয়। ম্যাচের পর তিনি বললেন, লক্ষ্য বড় ছিল বলেই আগ্রাসী ক্রিকেটের বিকল্প দেখেননি তিনি।
“দ্রুত উইকেট পড়েছিল, তার পরও প্রথম থেকেই আমি চেষ্টা করেছি যে আক্রমণাত্মক খেলব। কারণ ১৭০ রানের বেশি করতে হতো। উইকেট চলে গেছে, ওটা আমার হাতে নেই। আমার যে পরিকল্পনা ছিল, আমি সেসবই বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেছি।”
বিপিএল অভিষিক্ত ব্রুক গেস্টের সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে ৮৪ রান যোগ করেন হৃদয়। ৩৫ বলে ৩৪ রান করে ইংলিশ ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যান চতুর্দশ ওভারে। শেষ ৬ ওভারে কুমিল্লার প্রয়োজন পড়ে ৬৮ রান।
তবে গেস্ট আউট হয়ে গেলেও খোলসে ঢুকে যাননি হৃদয়। পরের ওভারে সাইফ হাসানের অফ স্পিনে তিনটি ছক্কা মারেন তিনি। ওভার থেকে আসে মোট ২০ রান। সমীকরণও হাতের নাগালে আসে ওই ওভারেই।
হৃদয় বললেন, মাথায় সমীকরণ মিলিয়েই সাইফের ওই ওভারকে যতটা সম্ভব কাজে লাগানোর ছক কষেন তিনি।
“একজন অফ স্পিনার যখন এসেছে, আমাদের বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ছিল (আরেক প্রান্ত রেমন রিফার)… আমি তখন বল খুঁজছিলাম আমার জোনে। একটা বড় ওভার দরকার ছিল আমাদের এবং আমার মনে হয়েছে, ওটাই উপযুক্ত একটা সময় ছিল।”
“হয়তো (গেস্টের) উইকেট হারিয়েছি মাত্রই, তবে আমি তো সেট ব্যাটসম্যান ছিলাম, আমার সেই আত্মবিশ্বাস ছিল যে, এখন যদি চেষ্টা করি, তাহলে আমার দল এগিয়ে যাবে, এখান থেকে ম্যাচ ঘুরে দেওয়ার সুযোগ থাকবে। আমি ওই পরিকল্পনা করেই এগোচ্ছিলাম।”
এরপর হৃদয় আরও এগিয়ে যান। ৭৯ রান থেকে শরিফুলের এক ওভারে ১৫ রান নিয়ে এগিয়ে যান শতরানের কাছে। পরে তাসকিনকে চার মেরে ও পরের বলে ২ রান নিয়ে পূরণ করেন সেঞ্চুরি। পরের বলেই ছক্কায় ওড়ান তাসকিনকে।
ম্যাচের পর হৃদয়ের দাবি, ৯০ ছুঁয়েও শতরানের ভাবনা তার মাথায় খেলা করেনি। কেবল দলের লক্ষ্যই ছিল তার চোখে।
“সত্যি কথা বলতে, সেঞ্চুরির জন্য একটুও খেলিনি বা ৯০ করার পরও সেঞ্চুরি করব, ওরকম চিন্তা মাথায় ছিল না। আমি চেষ্টা করেছি যে খেলাটা যেন শেষ করতে পারি। চেষ্টা ছিল, আমার রান যখন যেমনই থাকুক না কেন, বল যেগুলো মারার পাব বা বাজে জায়গায় পাব, সেগুলোতে চেষ্টা করব বাউন্ডারি বের করার।”
সেই লক্ষ্য পূরণ করেই মাঠ ছেড়েছেন হৃদয়। কুমিল্লার জয়সূচক রানও এসেছে তার ব্যাটেই।