৮ ছক্কার তাণ্ডবে শামীমের ৪৩ বলে ৮৬, রিশাদের ৫ উইকেট

জাতীয় দলে জায়গা হারানো শামীম খেলেছেন দুইশ স্ট্রাইক রেটের বিধ্বংসী ইনিংস, অন্য ম্যাচে বিফলে গেলে রিশাদ হোসেনের ৫ উইকেট।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2024, 01:18 PM
Updated : 28 March 2024, 01:18 PM

জাতীয় দলে হারানো জায়গা ফিরে পেতে হলে প্রয়োজন ঘরোয়া ক্রিকেটে বিশেষ কিছু। তেমন একটি ইনিংসই উপহার দিলেন শামীম হোসেন। ছক্কার মালা সাজিয়ে দুইশ স্ট্রাইক রেটের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে তিনি জেতালেন লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জকে।


ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে শামীমের টর্নেডো ব্যাটিংয়ের দিনে বল হাতে ৫ উইকেট নিয়েছেন রিশাদ হোসেন। তবে জিততে পারেনি তার দল শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব। অন্য ম্যাচে আরিদুল ইসলামের ৪ উইকেটে আসরে প্রথম জয় পেয়েছে গাজী টায়ার্স ক্রিকেট একাডেমি।

ঝড়ের নাম শামীম

ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলি স্টেডিয়ামে পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাবকে ৭ উইকেটে হারায় লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ। ১৯২ রানের লক্ষ্য স্রেফ ২৫.৩ ওভারেই ছুঁয়ে ফেলেছে তারা।

রূপগঞ্জের ছোট লক্ষ্য আরও অনায়াস হয়ে ওঠে শামীমের ব্যাটে। চার নম্বরে নেমে পারটেক্সের বোলারদের রীতিমতো কচুকাটা করে ছাড়েন তিনি। ৬ চারের সঙ্গে ৮ ছক্কায় স্রেফ ৪৩ বলে খেলেন ৮৬ রানের অপরাজিত ইনিংস। তার হাতেই ওঠে ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

ওপেনার তৌফিক খানের ব্যাট থেকে আসে ৬৬ বলে ৮৩ রানের ইনিংস। ৮ চার ও ৪ ছক্কা মারেন তিনি।

রান তাড়ায় শুরুতে ইমরানউজ্জামানের উইকেট হারায় রূপগঞ্জ। পরে টিকতে পারেননি চৌধুরি মোহাম্মদ রিজওয়ানও।

তৃতীয় উইকেট জুটিতে শামীম ও তৌফিক স্রেফ ৬৮ বলে যোগ করেন ১১৬ রান।  

৪৩ বলে চলতি লিগে তৃতীয় পঞ্চাশ করেন তৌফিক। লিস্ট 'এ' ক্যারিয়ারের অষ্টম ফিফটি ছুঁতে শামীম খেলেন স্রেফ ৩২ বল।

জয় থেকে স্রেফ ১৩ রান দূরে ভাঙে এই জুটি। আমিনুল ইসলামকে নিয়ে ম্যাচ শেষ করেন শামীম। তবে ম্যাচ জিতে যায় তারা প্রায় ২৫ ওভার বাকি রেখেই।

এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে পঞ্চাশের আগে ৩ উইকেট হারায় পারটেক্স। চাপ সামাল দিয়ে চতুর্থ উইকেটে ১০৩ রানের জুটি গড়েন মিজানুর রহমান ও তানবির হায়দার।

দল দেড়শ ছোঁয়ার আগে ৮৮ রান করা মিজানুর রান আউট হলে ভাঙে জুটি। ৯১ বলের ইনিংসে ১২ চারের সঙ্গে ২ ছক্কা মারেন ব্রাদার্স অধিনায়ক।

৩৬ রান করা তানবীরও কাটা পড়েন রান আউটে। পরে আর কেউ তেমন কিছু করতে পারেননি।

ছয় ম্যাচে রুপগঞ্জের পঞ্চম জয় এটি। সমানসংখ্যক ম্যাচে পারটেক্সের জয় স্রেফ একটি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাব:
৪৭.২ ওভারে ১৯১ (আজমির ৭, অভিষেক ২, মিজানুর ৮৮, সুশান্ত ৫, তানবির ৩৬, জাহিদুজ্জামান ২৩, মুক্তার ৫, তুফায়েল ১, মোহর ০, মহিউল ৭, রাকিবুল ৩*; আল আমিন ৭-১-২৬-১, হালিম ৭-১-৪১-১, শহিদুল ১০-০-২৯-৩, নিহাদউজ্জামান ৫-০-৩৬-০, মাশরাফি ৯-১-৩০-০, শুভাগত ৯.২-০-২৪-৩)

লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ: ২৫.৩ ওভারে ১৯৫/৩ (ইমরানউজ্জামান ১২, তৌফিক ৮৩, রিজওয়ান ৫, শামিম ৮৬, আমিনুল ২*; মোহর ৩-১-১৮-০, মুক্তার ৫-০-৩৫-০, মহিউল ৫.৩-০-২৮-০, রাকিবুল ৬-১-৪০-২, তুফায়েল ২-০-১৮-১, তানবির ২-০-২৯-০, আজমির ১-০-১২-০, অভিষেক ১-০-১৪-০)

ফল: লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ৭ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: শামীম হোসেন।

গাজী টায়ার্সের প্রথম জয় 

প্রথম পাঁচ র সবকটিতে হেরেছিল গাজী টায়ার্স ক্রিকেট একাডেমি ও সিটি ক্লাব। মুখোমুখি লড়াইয়ে অবশেষে জয়খরা কাটাল গাজী টায়ার্স। বিকেএসপির ৪ নম্বর মাঠে ৩৮ রানে জিতল তারা।  

২১৫ রানের লক্ষ্যে ছুটে ১৭৬ রানে গুটিয়ে গেছে সিটি ক্লাব। 

দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ৮৫ রানের ইনিংস খেলেন গাজী টায়ার্সের অধিনায়ক গাজী তাহজিবুল ইসলাম। ২১ বছর বয়সী বাঁহাতি স্পিনার আরিদুল ইসলাম ৩৩ রানে নেন ৪ উইকেট।  

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে গাজী টায়ার্স পঞ্চাশের আগে হারিয়ে ফেলে ৪ উইকেট। পরে একপ্রান্ত আগলে রেখে খেলতে থাকেন আশিকুর রহমান। তবে একশর আগে ড্রেসিং রুমে ফেরেন তিনিও। ৭১ বলে তিনি করেন ৪৫ রান।  

এরপর দলকে এগিয়ে নেন তাহজিবুল। ১০০ বলে পঞ্চাশ করেন তিনি। পরের ১৯ বলে করেন আরও ৩৫ রান। শেষ ওভারে সমাপ্তি ঘটে তার ১২০ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কার ইনিংসের।  

রান তাড়ায় একদমই সুবিধা করতে পারেনি সিটি ক্লাব। একশ রান করতে তাদের খেলতে হয় ৩২তম ওভার পর্যন্ত। উইকেট নেই ততক্ষণে ৫টি। 

তিন নম্বরে নামা শাহরিয়ার কোমল ৭০ বলে করেন ৪০ রান। তৃতীয় উইকেটে রাফসান আল মাহমুদের সঙ্গে তিনি গড়েন ইনিংসের সর্বোচ্চ ৬৩ রানের জুটি। 

অধিনায়ক সাজ্জাদুল হক খেলেন দলের সর্বোচ্চ ৫০ রানের ইনিংস। বাকিরা কেউই তেমন কিছু করতে না পারায় জয়ের সম্ভাবনা জাগাতে পারেনি তারা। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

গাজী টায়ার্স ক্রিকেট একাডেমি:
৪৯.৪ ওভারে ২১৪ (আশিকুর ৪৫, ইফতেখার ১৪, হাফিজুর ০, আশরাফুল ১৩, জুবারুল ২, তাহজিবুল ৮৫, শামিম ২৫, আরিফুল ৯, লিওন ৬, ইকবাল ১, মারুফ ০*; ইফরান ১০-১-৫১-২, মেহেদি ৯.৪-১-৫৫-৩, মইনুল ৮-০-৩৭-৩, নাইমুর ৮-০-২৫-১, রাফসান ১০-১-২১-০, রায়ান ৪-০-২৩-০)

সিটি ক্লাব: ৪৯ ওভারে ১৭৬ (সাদিকুর ৪, জয়রাজ ৪, শাহরিয়ার ৪০, রাফসান ২১, সাজ্জাদুল ৫০, আশিকুল ৮, মইনুল ২০, রায়ান ৮, ইফরান ৯*, নাইমুর ১, মেহেদি ১; লিওন ১০-৩-২৪-১, আরিদুল ১০-০-৩৩-৪, ইকবাল ৯-০-৩৭-১, মারুফ ৯-০-৩৩-২, শামিম ১০-১-৩৫-১, ইফতেখার ১-০-৮-০)

ফল: গাজী টায়ার্স ক্রিকেট একাডেমি ৩৮ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: গাজী তাহজিবুল ইসলাম

মজিদের ৫ রানের আক্ষেপ, রিশাদের ৫ উইকেট বিফলে 

বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবকে ২৬ রানে হারায় ব্রাদার্স ইউনিয়ন। ২২৩ রানের লক্ষ্যে ১৯৬ রানে অলআউট হয় শাইনপুকুর।  

ছয় ম্যাচে ব্রাদার্সের দ্বিতীয় জয় এটি। সমান ম্যাচে তিনটি করে জয়-পরাজয় শাইনপুকুরের। 

অল্পের জন্য সেঞ্চুরি করতে পারেননি আব্দুল মজিদ। ৬ চার ও ৪ ছক্কায় ১৩৫ বলে ৯৫ রানের ইনিংস খেলেন অভিজ্ঞ ওপেনার। 

লিস্ট 'এ' ক্যারিয়ারে প্রথমবার ৫ উইকেট পেলেও পরাজিত দলে থাকতে হয় রিশাদ হোসেনকে।  

রান তাড়ায় শাইনপুকুরকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন তানজিদ হাসান। ৩টি করে চার-ছক্কায় স্রেফ ২৪ বলে ৪১ রান করেন তরুণ ওপেনার। তার বিদায়ের পর আর কেউ সেভাবে দলকে এগিয়ে নিতে পারেননি। 

তিন নম্বরে নামার সুযোগ পেয়ে কাজে লাগাতে পারেননি রিশাদ। ৯ রান করতে তিনি খেলেন ৩১ বল। এসএম মেহেরব হাসান ৭৭ বলে করেন ৩৬ রান।  

খালিদ হাসান, মার্শাল আইয়ুব, আকবর আলিরা ব্যর্থ হলে অনেকটাই পিছিয়ে পড়ে শাইনপুকুর। পরে ইরফান শুক্কুর, জাওয়াদ রোয়েন, রবিউল হকরা চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত দলকে জেতাতে পারেননি।   

মনির হোসেন ও রহমতউল্লাহ আলি নেন ৩টি করে উইকেট।  

এর আগে মজিদের ব্যাটে দুইশ ছাড়ানো স্কোর পায় ব্রাদার্স। তৃতীয় উইকেটে আরেক অভিজ্ঞ মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে তিনি গড়েন ৯৯ রানের জুটি। মাহমুদুলের ব্যাট থেকে আসে ৩৬ রান।  

ছয় নম্বরে নেমে ২১ বলে ৩২ রানের ক্যামিও খেলেন রাহাতুল ফেরদৌস।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ব্রাদার্স ইউনিয়ন: ৫০ ওভারে ২২২/৯ (রহমতুল্লাহ ২০, মজিদ ৯৫, জাকিরুল ১, শাকিল ৮, মাহমুদুল ৩৬, রাহাতুল ৩২*, মারাজ ১০, আসিফ ৩, মনির ০, আবু জায়েদ ০, সালাউদ্দিন ২*; রবিউল ১০-৩-৪১-১, মুরাদ ১০-০-৪২-০, আরাফাত ১০-০-২৬-২, রিশাদ ১০-১-৪৯-৫, জাওয়াদ ৮-০-৪৭-০, মেহেরব ২-০-১১-০)

শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব: ৪৯ ওভারে ১৯৬ (তানজিদ ৪১, খালিদ ১১, রিশাদ ৯, মেহেরব ৩৬, মার্শাল ১, আকবর ৯, ইরফান ২৩, জাওয়াদ ২৯, রবিউল ১৮, আরাফাত ৬, মুরাদ ১*; আবু জায়েদ ৭-০-২৮-২, রহমতউল্লাহ ১০-১-৩০-৩, মাহমুদুল ৫-০-৪২-০, আসিফ ১-০-৬-১, সালাউদ্দিন ৮-৩-১৮-০, রাহাতুল ৯-১-৩০-০, মনির ৯-১-৪০-৩) 

ফল: ব্রাদার্স ইউনিয়ন ২৬ রানে জয়ী 

ম্যান অব দা ম্যাচ: আব্দুল মজিদ