প্রায় চার বছর পর টেস্ট খেলার এই অভিজ্ঞতা সামনের সিরিজে কাজে লাগাতে আত্মবিশ্বাসী আইরিশ অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বালবার্নি।
Published : 07 Apr 2023, 08:59 PM
“আজ সকালেও কি জয়ের বিশ্বাস ছিল আপনাদের?”, প্রশ্ন শুনে অ্যান্ড্রু বালবার্নির ত্বরিত উত্তর, “অবশ্যই, শতভাগ…!” শেষ পর্যন্ত সেই বিশ্বাসের প্রতিফলন আয়ারল্যান্ডের পারফরম্যান্স পড়েনি। তবে জয় না পেলেও প্রাপ্তির কমতি দেখছেন না আইরিশ অধিনায়ক। সেই প্রাপ্তিগুলিকে সঙ্গী করে পরের সিরিজে শ্রীলঙ্কায় আরও ভালো কিছু করতে আত্মবিশ্বাসী তিনি।
চার চার বছর বিরতির পর টেস্ট খেলতে নেমে দ্বিতীয় দিন শেষে ইনিংস পরাজয়ের শঙ্কায় ছিল আয়ারল্যান্ড। প্রথম ইনিংসে ১৫৫ রানে পিছিয়ে থাকা দল দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট হারায় ১৩ রানেই। তৃতীয় দিনে অভাবনীয় প্রতিরোধ গড়ে তারা। অভিষেকে সেঞ্চুরি করেন লর্কান টাকার, প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও ফিফটি করেন হ্যারি টেক্টর। আটে নেমে ৭২ রানের ইনিংস খেলেন অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন। তৃতীয় দিনটি তারা কাটিয়ে দেয় দারুণ ব্যাটিংয়ে।
চতুর্থ দিন শুরুর সময় ২ উইকেটে হাতে নিয়ে ১৩১ রানে এগিয়ে ছিল আইরিশরা। তাদের লক্ষ্য ছিল আরও ৪০-৫০ রান যোগ করা। কিন্তু শুক্রবার সকালে শেষ ২ উইকেট হারিয়ে তারা যোগ করতে পারে স্রেফ আর ৬ রান। ১৩৮ রান তাড়ায় বাংলাদেশ জিতে যায় ৭ উইকেটে।
ম্যাচ শেষ সংবাদ সম্মেলনে বালবার্নি প্রতিক্রিয়ায় আক্ষেপ যেমন কিছু থাকল, তেমনি ফুটে উঠল সন্তুষ্টিও। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে এখান থেকেই তারা যাবেন শ্রীলঙ্কায়। আইরিশ অধিনায়কের চোখ এখন সেই সিরিজে।
“দ্বিতীয় দিনে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার অবস্থা ছিল আমাদের। অনেকেই ভেবেছিল, গতকাল (বৃহস্পতিবার) আমরা গুটিয়ে যাব। তবে গতকালকের দিনটি ছিল টেস্টে আমাদের সবচেয়ে ভালো দিনগুলির একটি। যে মানসিকতা, নিবেদন, স্কিল আমরা দেখিয়েছি।”
“১৭০-১৮০ রানের লিড নিতে পারলে, কে জানে কী হতো। তবে দ্বিতীয় দিন বিকেলে এত দ্রুত ৪ উইকেট হারানোর পর লিড নেওয়া ও ওদেরকে কিছুটা শঙ্কায় ফেলে দেওয়াটা ছিল দারুণ। আমাদের চেষ্টা থাকবে, এখান থেকে যতটা সম্ভব শিখে শ্রীলঙ্কায় যাওয়া।”
ম্যাচের প্রথম দিনে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে আয়ারল্যান্ড গুটিয়ে যায় স্রেফ ২১৪ রানে। পরে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশও বেশ বিপদে ছিল ৪০ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে। তখনই দারুণ এক সেঞ্চুরি উপহার দেন মুশফিকুর রহিম, ৮৭ রানের ইনিংস আসে সাকিব আল হাসানের ব্যাট থেকে।
মুশফিকদের দেখে এভাবেই ভালো শুরুগুলোকে বড় স্কোরে রূপ দেওয়া শিখতে চান বালবার্নি।
“এই ধরনের উইকেটে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে বড় স্কোর গড়তে হয়। আমরা যথেষ্ট নিবেদন দেখাতে পারিনি। তবে আমরা তো প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটই খুব একটা খেলি না, টেস্ট ক্রিকেট তো বহুদূর। এসব তাই দ্রুত শিখতে হবে আমাদের। পরের সপ্তাহে (শ্রীলঙ্কা সফরে) নিশ্চিত করতে হবে যেন, ২০-৩০-৪০ পর্যন্ত যেতে পারলে আমরা বড় সেঞ্চুরি করতে পারি, ওদের প্রথম ইনিংসে মুশি যেমনটি করেছে।”
আয়ারল্যান্ডের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল দীর্ঘদিন পর লাল বলের ক্রিকেটে ফেরা। প্রায় চার বছর পর টেস্ট খেলাই শুধু নয়, লম্বা সময় ধরে লাল বলের ক্রিকেটের সঙ্গেই সম্পর্ক ছিল না তাদের। এই দলের বেশ কজন ক্রিকেটার সবশেষ লাল বলের ক্রিকেট খেলেছিলেন ২০২১ সালে, আরও কজন খেলেছিলেন ২০১৯ সালে।
মিরপুর টেস্টের ঘাটতিগুলোর পেছনে সেই অনভ্যস্ততাকেই দায় দিলেন বালবার্নি। তার বিশ্বাস, লাল বলের ক্রিকেট নিয়মিত খেলতে থাকলে তারা ভালো টেস্ট দল হয়ে উঠবেন।
“প্রথম ইনিংসে বোলিংয়েও আমরা খুব একটা ভালো করতে পারিনি। ১০ উইকেট নিতে পেরেছি বটে, তবে ওরা বেশ দ্রুত রান তুলেছে। তবে বোলারদের দায় দেওয়াও কঠিন। অনেক দিন ধরে বোলাররা লম্বা সময় বল করে না। দিনে ১৫-২০ ওভার করা বা তৃতীয় স্পেলে ফিরে বোলিং করা, এসবের অভ্যাস নেই।”
“আমাদের খুবই কঠিন ছিল। তবে এটা তো টেস্ট ক্রিকেট। এজন্যই এটাকে টেস্ট ক্রিকেট বলা হয়। এই চার দিনের প্রতিটি মিনিট আমি উপভোগ করেছি। আমাদের সবাই করেছে। এই চারদিনে আমরা দেখাতে পেরেছি যে আমাদের খুব ভালো কিছু ক্রিকেটার আছে, যাদেরকে লাল বলের ক্রিকেটে ও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আরও সুযোগ দেওয়া হলে আমরা খুব ভালো টেস্ট দল হতে পারি।”
চার বছরের বিরতি শেষে টেস্টে ফেরার পর এবার আরেকটু বড় পরীক্ষা আয়ারল্যান্ডের সামনে। প্রথমবারের মতো তারা খেলবে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গলে প্রথম টেস্ট শুরুর ১৬ এপ্রিল, পরেরটি ২৪ এপ্রিল। চ্যালেঞ্জ সেখানে অনেক কঠিন, জানেন বালবার্নিও। তবে মিরপুর টেস্ট থেকে আত্মবিশ্বাসের রসদ পাচ্ছেন তিনি।
“উপমহাদেশে একটি টেস্ট ম্যাচ খেলে আমরা সেখানে যাচ্ছি। যতটা প্রস্তুতি সম্ভব ছিল, ততটা নিয়েই তাই যাচ্ছি। লাল বলের ক্রিকেটে বা টেস্ট ক্রিকেটে একদমই কিছু না খেলে শ্রীলঙ্কায় দুটি টেস্ট খেলতে যাওয়া ভীষণ চ্যালেঞ্জিং হতো।”
“চ্যালেঞ্জ এখনও কঠিনই হবে, শ্রীলঙ্কা দেশের মাঠে খুবই শক্ত প্রতিপক্ষ। তবে ছেলেরা আত্মবিশ্বাসী থাকবে। এখানে নতুন ছেলেদের অনেকেই ভালো পারফর্ম করেছে। আমরা জানি যে আর দু-একটি ব্যাপার ঠিকঠাক করলে আমরা দারুণ কিছু করতে পারতাম। আমরা টেস্ট জিততে চাই বা জয়ের চেষ্টা করতে চাই। প্রথম জয়ের দেখা পেতে আমরা মরিয়া। তবে এটাও জানি, আমাদের দ্রুত শিখতে হবে।”