‘পারফেক্ট’ সিরিজে ‘সব বক্সে টিক দেওয়ার’ সন্তুষ্টি তামিমের

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একাধিক রেকর্ড গড়ে জেতা সিরিজে কোনো ঘাটতির জায়গা দেখেন না বাংলাদেশ অধিনায়ক। 

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 March 2023, 03:36 PM
Updated : 23 March 2023, 03:36 PM

বৃষ্টিতে ভেসে গেছে দ্বিতীয় ম্যাচ। তাই আয়ারল্যান্ডকে দ্বিতীয়বার ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশ করতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে ব্যাটিং-বোলিং বা ফিল্ডিং; তিন বিভাগেই আইরিশদের রীতিমতো উড়িয়ে দিয়েছে স্বাগতিকরা। তিন ম্যাচে একবারের জন্যও চালকের আসনে বসতে পারেনি সফরকারীরা। এমন একটি সিরিজ শেষ করে দলের পারফরম্যান্স নিয়ে সন্তুষ্টি তামিম ইকবালের কণ্ঠে।  

সিলেটের মাঠে হওয়া সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ গড়ে নিজেদের দলীয় সর্বোচ্চ ৩৩৮ রানের রেকর্ড। অভিষেকে দারুণ ইনিংস খেলেন তাওহিদ হৃদয় (৮৫ বলে ৯২), সাকিব আল হাসান রাখেন অভিজ্ঞতার ছাপ (৮৯ বলে ৯৩), ঝড় তোলেন মুশফিকুর রহিম (২৬ বলে ৪৪)।  

পরে ইবাদত হোসেন (৪২ রানে ৪ উইকেট), নাসুম আহমেদের (৪৩ রানে ৩ উইকেট) দারুণ বোলিংয়ে আয়ারল্যান্ডকে স্রেফ ১৫৫ রানে গুটিয়ে দিয়ে বাংলাদেশ পায় নিজেদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ব্যবধানে (১৮৩ রানে) জয়। ম্যাচে গ্লাভস হাতে মুশফিক নেন বাংলাদেশের রেকর্ড, ৫টি ক্যাচ। 

বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও রেকর্ড গড়েন মুশফিক, এবার ব্যাট হাতে। স্রেফ ৬০ বলে তিন অঙ্ক ছুঁয়ে গড়েন বাংলাদেশের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড। সঙ্গে লিটন দাস (৭০), নাজমুল হোসেন শান্ত (৭৩), হৃদয়দের (৪৯) কার্যকরী ইনিংসে দলের সংগ্রহ পৌঁছায় ৩৪৯ রানে। অর্থাৎ এক ম্যাচের ব্যবধানে সর্বোচ্চ সংগ্রহের রেকর্ড নতুন করে লেখে তামিমের দল।  

ওই ম্যাচে বোলিং করতে না পেরে হয়তো উইকেটের ক্ষুধা একটু বেশিই বেড়ে যায় দলের পেসারদের। বৃহস্পতিবার সিরিজের শেষ ম্যাচে তাদের আগুনে পুড়েছে আইরিশরা। তিন পেসার মিলেই নিয়েছেন পুরো ১০ উইকেট, যা কোনো ওয়ানডেতে বাংলাদেশের জন্য প্রথম।  

ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করা হাসান মাহমুদ ৩২ রান খরচায় নেন ৫ উইকেট। তাসকিন আহমেদের শিকার ৩টি। প্রথম ম্যাচে ৪ উইকেট নেওয়া ইবাদত এবার ঝুলিতে জমা করেন ২টি উইকেট।  

পেসারদের উজ্জ্বল পারফরম্যান্সের পর স্রেফ ১০২ রানের লক্ষ্যে কোনো উইকেটই পড়তে দেননি তামিম ও লিটন দাস। যার সৌজন্য বাংলাদেশ পায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেদের প্রথম ১০ উইকেটের জয়।  

ব্যাটিং-বোলিংয়ের দাপটের এই সিরিজে ফিল্ডিংয়েও কোনো বড় ভুল করেনি বাংলাদেশ। আনুষ্ঠানিক হিসেবে তিনটি ক্যাচ মিসের হিসেব উঠলেও, আসলে তিনটিই ‘হাফ চান্স’ ছিল। যা ধরতে পারলে হতো দারুণ ক্যাচ।  

তিন বিভাগে এমন নিখুঁত প্রদর্শনীর পর সিরিজ জিতে সংবাদ সম্মেলনে এসে তামিমও শোনালেন নিজের সন্তুষ্টির কথা।  

“হ্যাঁ অবশ্যই! এটিকে পারফেক্ট সিরিজই বলতে পারি। যদি খামতি জোর করে বের করতে হয়, তাহলে বলব দ্বিতীয় ম্যাচটা পরিত্যক্ত না হলে ভালো হতো। এর বাইরে আমাদের নিয়ন্ত্রণে যা যা ছিল, আমরা সবই করেছি।”  

“আপনারা আজকেও (বৃহস্পতিবার) উইকেটটা দেখেছেন, প্রথমে ব্যাট করা আসলেই সহজ নয়। বিশেষ করে প্রথম ১৫-২০ ওভার খুব কঠিন। কিন্তু আমরা প্রথম দুই ম্যাচে সেই চ্যালেঞ্জটা নিয়েছি, বড় রান করেছি। দিন শেষে অধিনায়ক হিসেবে আমি খুবই সন্তুষ্ট যে, আমরা প্রায় সব বক্সেই টিক দিয়েছি।” 

প্রথম ম্যাচে নিজেদের রেকর্ড ৩৩৮ রান করার পর দ্বিতীয় ম্যাচে সেটিকেও ছাড়িয়ে যাওয়া। শেষ ম্যাচেও ছোট লক্ষ্য পেয়ে ধীরেসুস্থে না খেলে ১৩.১ ওভারেই ম্যাচ জিতে যাওয়ার। বোলিং বিভাগে ফাস্ট বোলারদের আগ্রাসন তো নজর কেড়েছে সবার। সব মিলিয়ে সামনের দিনগুলতেও এই ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলবে বাংলাদেশ? 

সরাসরি কোনো উত্তর দেননি অধিনায়ক তামিম। আরও একবার নিজেদের প্রক্রিয়া ঠিক রাখার কথা বলেছেন তিনি।  

“দলের প্রতি আমার বার্তাটা খুবই সাধারণ থাকে। আপনি যদি খেয়াল করেন, দুইবার টসে আমাকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছে, আপনার কত রান করার কথা ভাবছেন? আমি এমন একজন যে লক্ষ্য ঠিক করে দেই না। আমি কোনো দিন আমার দলকে যেয়ে বলি না যে, আমাদের ৩৫০-৩৬০ করতে হবে। আমি যা বলি, তা হলো আমাদের প্রক্রিয়াটা অনুসরণ করতে হবে। তা করে আমরা ২৬০-২৭০ রান করি, তাও ঠিক আছে। ওটা অনুসরণ করে যদি ৩৫০ করি, তাহলেও খুশি।”  

“আমার কাছে মনে হয় না, কেউ এসে বলে দিলো আমরা ৩৫০ করব এবং সেটি হয়ে যাবে। প্রক্রিয়াটা অনুসরণ করতে হবে। শেষ (দ্বিতীয়) ম্যাচের কথাই বলি, আমরা ৩৫০ রান করেছি। কিন্তু এখন কাউকে বললে বুঝবে না যে, শুরুর দশ ওভারে ব্যাট করাটা কত কঠিন ছিল। কারণ আমরা শেষ পর্যন্ত ৩৫০ রান করেছি। শুরুর দশ ওভারে কোনো উইকেট হারাইনি, এটা ৩৫০ করার বড় একটা অংশ ছিল। তো প্রক্রিয়াটা অনুসরণ করতে হবে। সব বক্স টিক দিতে পারলে আমরা শেষ পর্যন্ত বড় রান করতে পারব। এমন না যে, আগে থেকে বলে দেওয়া হয়, ‘যা হওয়ার হোক, আমাদের ৩৫০ রান করতে হবে।’ আমাদের প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। এরপর যা হবে, তা-ই নেব আমরা।”