আঙুলের ৮ সেলাই যেন কেড়ে নিয়েছিল তৌহিদ হৃদয়ের হাতের জাদু। শুরুটা এবার যেভাবে করেছিলেন, ওই ব্যাটিং তো জাদুকরিই ছিল! কিন্তু চোটের পর সেই তাকেই মনে হচ্ছিল অচেনা। টানা তিন ম্যাচে দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ম্যাচ সেরা হওয়া ব্যাটসম্যান চোট থেকে ফেরার পর ব্যর্থ টানা তিন ম্যাচে। অবশেষে তার ব্যাট জ্বলে উঠল আবার। গ্যালারি ভরা দর্শককে মাতিয়ে তিনি উপহার দিলেন দ্যুতিময় আরেকটি ইনিংস।
হৃদয়ের সঙ্গে জাকির হাসানের ফিফটি সিলেট স্ট্রাইকার্সের রান পৌঁছে দিল যে উচ্চতায়, খুলনা টাইগার্স পারল না সেটিকে চ্যালেঞ্জ জানাতেও। ৩১ রানের জয়ে চলতি আসরে সবার আগে প্লে অফ নিশ্চিত করল মাশরাফি বিন মুর্তজার দল।
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে সোমবার ইনিংস শুরু করতে নেমে হৃদয় খেলেন ৪৯ বলে ৭৪ রানের ইনিংস। আসরের প্রথম ফিফটিতে জাকির করেন ৩৮ বলে ৫৩। সিলেট ২০ ওভারে তোলে ১৯২ রান। খুলনা পারেনি ম্যাচ জমিয়ে তুলতে।
একাদশে ফেরার ম্যাচে রুবেল হোসেন নেন ৪ উইকেট। স্পর্শ করেন বিপিএলে শততম উইকেটও।
আগের দুই দিনের চেয়ে সিলেটের গ্যালারিতে এ দিন দর্শক ছিল আরও বেশি। আক্ষরিক অর্থেই যেন তিল ধারনের ঠাঁই ছিল না। তাদের উল্লাস-উচ্ছ্বাসে ম্যাচজুড়ে থাকল উৎসবের আবহ। সেই আনন্দের রেশ নিয়েই নিজেদের দলকে বিদায় জানায় তারা। ঘরের মাঠে এটিই সিলেটের শেষ ম্যাচ।
সিলেটের জয়যাত্রায় একটু দুর্ভাবনার ছাপ মাশরাফির চোটে। ২.১ ওভার বোলিং করে খুঁড়িয়ে মাঠ ছাড়েন সিলেট অধিনায়ক।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা সিলেটের শুরুটা খুব ভালো ছিল না। হৃদয় প্রথম দুই ওভারে দুবার বল বাউন্ডারিতে পাঠালেও ছন্দ পেতে ভুগছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। পঞ্চম ওভারে বৃত্ত ভাঙার চেষ্টায় স্লগ করতে গিয়ে আউট হন তিনি। ক্যারিবিয়ান অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার মার্ক ডেয়াল বিপিএল অভিষেকে স্বাদ পান প্রথম উইকেটের।
৫ ওভারে স্রেফ ২৬ রান তোলার পর ষষ্ঠ ওভারে নাসুম আহমেদকে তিনটি বাউন্ডারি মারেন হৃদয় ও জাকির মিলে।
পাওয়ার প্লে শেষে আবার একটু সময় নেন দুজন। দলের ৫০ আসে ৪৫ বলে। নবম ওভার থেকে সূচনা হয় ঝড়ের। ১৫ বলে ১৩ রান নিয়ে খেলতে থাকা জাকির বিশাল দুটি ছক্কায় উড়িয়ে দেন নাসুমকে। ডেয়ালের বলে বাউন্ডারিতে হৃদয়ের ফিফটি আসে ৩৪ বলে।
রান আসতে থাকে দুই প্রান্ত থেকেই। দুজনের জুটির শতরান আসে স্রেফ ১০ ওভারে। ৬৮ বলে ১১৪ রানের এই জুটি ভাঙে নাহিদ রানার বলে হৃদয়ের বিদায়ে।
এক বল পরই নাহিদ রানাকে দুর্দান্ত পুল শটে ছক্কায় জাকির পঞ্চাশে পা রাখেন ৩৬ বলে। তার ইনিংস থামে নাহিদুল ইসলামের অফ স্পিনে স্লগ করতে গিয়ে।
এরপর মুশফিকুর রহিম নেমে প্রথম বলে বাউন্ডারি পেলেও পরে আউট হয়ে যান ৭ বলে ৭ করে। তবে রায়ান বার্ল ও থিসারা পেরেরার সৌজন্যে শেষটা দারুণ করে সিলেট। শেষ দুই ওভারে ৩০ রান নেন দুজন।
আগের ম্যাচে ১৬ বলে ৪১ রানের ইনিংস খেলা রায়ার্ন বার্ল এবার দুটি বিশাল ছক্কায় ১১ বলে করেন অপরাজিত ২১। পেরেরা অপরাজিত থাকেন ৭ বলে ১৭ করে।
শেষ ৬ ওভারে সিলেট তোলে ৭০ রান।
বড় রান তাড়ায় প্রয়োজন বড় জুটি, বিশেষ করে শুরুর দিকে। কিন্তু খুলনার শুরুটা হয় উল্টো। ইনিংসের তৃতীয় আর নিজের প্রথম ওভারেই রুবেল হোসেন ধরেন জোড়া শিকার।
লেগ স্টাম্পে থাকা বলে লং লেগে জাকির হাসানের দুর্দান্ত ক্যাচে ফেরেন অ্যান্ড্রু বালবানি। ওই ওভারেই টানা দুটি বাউন্ডারির পর শেষ বলে পুল করতে গিয়ে আউট হন তামিম ইকবাল।
এরপর শেই হোপ, আজম খানরা বিপজ্জনক হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিলেও কেউ পারেননি বড় ইনিংস খেলতে। দুটি করে চার-ছক্কায় ২২ বলে ৩৩ করে বিদায় নেন হোপ। আজম দারুণ কয়েকটি শটে ১৭ বলে ৩৩ করে বোল্ড হন ইমাদ ওয়াসিমকে জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে। এই দুই উইকেটে মাঝে মাহমুদুল হাসান জয় ধুঁকতে ধুঁকতে করেন ২১ বলে ২০।
দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে মার্ক ডেয়ালকে ফিরিয়ে রুবেল পূর্ণ করেন বিপিএলে ১০০ উইকেট। তার আগে এই স্বাদ পেয়েছেন কেবল সাকিব আল হাসান।
শেষ দিকে আলগা কিছু রান পেয়ে কিছুটা ভদ্রস্থ হয় পরাজয়ের ব্যবধান।
১০ ম্যাচে ৮ জয়ে প্লে অফে পা রাখল সিলেট। খুলনা হারল ৮ ম্যাচের ৬টিতেই।
ম্যাচ শেষে সীমানার কাছ ঘেঁষে গোটা মাঠ প্রদক্ষিণ করে স্থানীয় দর্শকদের অভিনন্দন ও ভালোবাসার জবাব দেয় গোটা সিলেট দল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
সিলেট স্ট্রাইকার্স: ২০ ওভারে ১৯২/৪ (হৃদয় ৭৪, শান্ত ৬, জাকির ৫৩, বার্ল ২১*, মুশফিক ৭, থিসারা ১৭*; নাহিদুল ৪-০-২৫-১, ডেয়াল ৪-০-৪০-২, নাসুম ৪-০-৩৯-০, নাহিদ রানা ৩-০-৩৯-০, সাইফ উদ্দিন ৪-০-৩৩-০, ইয়াসির ১-০-১৫-০)
খুলনা টাইগার্স: ২০ ওভারে ১৬১/৯ (তামিম ১২, বালবার্নি ৭, হোপ ৩৩, জয় ২০, আজম ৩৩, ইয়াসির ৪, ডেয়াল ৩, সাইফ উদ্দিন ১৩, নাহিদুল ৯, নাসুম ১৩*, নাহিদ রানা ২*, জয় ; মাশরাফি ২.১-০-১২-০, ইমাদ ৪-০-২৪-১, রুবেল ৪-০-৩৭-৪, আমির ৪-০-২৮-২, রাজা ৪-০-২৯-২, পেরেরা ১.৫-০-২২-০)
ফল: সিলেট স্ট্রাইকার্স ৩১ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: তৌহিদ হৃদয়