নিলামে দল পাওয়ার আগে স্বীকৃত ক্রিকেটে যার অভিষেক হয়নি, সেই ব্যাটসম্যান আইপিএলে ছুটছেন দুর্বার গতিতে।
Published : 30 Mar 2025, 08:11 PM
আইপিএলের মেগা নিলামে ৩০ লাখ রুপিতে আনিকেত ভার্মাকে যখন দলে নেয় সানরাইজার্স হায়দরাবাদ, স্বীকৃত ক্রিকেটে তখন অভিষেকই হয়নি তার। ২৩ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান নিজের প্রথম আইপিএলে আরও একবার দেখিয়ে দিলেন, কেন তার ওপর এতটা আস্থা রেখেছিল ফ্র্যাঞ্চাইজিটি।
দিল্লি ক্যাপিটালসের বিপক্ষে রোববার যখন পাঁচ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামেন আনিকেত, তিন ওভারের মধ্যে ২৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ভীষণ চাপে তখন হায়দরাবাদ। সেখান থেকে ৬ ছক্কা ও ৫ চারে ৪১ বলে ৭৪ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন তিনি।
এবারের আইপিএলে এখন পর্যন্ত ৩ ম্যাচে ৫৭ বলে তিনি করেছেন ১১৭ রান। গড় ৩৯ আর স্ট্রাইক রেট ২০৫.২৬! ৫টি চারের সঙ্গে ছক্কা মেরেছেন মোট ১২টি।
মধ্য প্রদেশের ভোপালের ছেলে আনিকেত হায়দরাবাদের স্কাউটদের নজর কাড়েন গত বছর। ২০২৪ সালের জুনে বিশ ওভারের প্রতিযোগিতা মধ্য প্রদেশে প্রিমিয়ার লিগে ভোপাল লিওপার্ডসের হয়ে ৬ ইনিংসে তিনি করেন ২৭৩ রান। ছক্কা মারেন মোট ২৫টি। সেরা ইনিংস ছিল ৪১ বলে ১৩ ছক্কায় ১২৩।
গত নভেম্বরে ২০২৫ আইপিএলের মেগা নিলামের আগে হায়দরাবাদের ট্রায়ালে ডাক পড়ে তার। সুযোগটা তিনি কাজে লাগান। সেখানে ব্যাটিংয়ে বিভিন্ন লক্ষ্য দেওয়া হয় তাকে। সেগুলো পূরণ করেন ভালোভাবে।
নিলামে তাই তাকে উপেক্ষা করতে পারেনি হায়দরাবাদ। ভিত্তি মূল্য ৩০ লাখ রুপিতে কিনে নেওয়া হয় তাকে।
পরের মাসে অনূর্ধ্ব-২৩ একদিনের ম্যাচের টুর্নামেন্টেও আলো ছড়ান আনিকেত। মধ্য প্রদেশের হয়ে কর্ণাটকের বিপক্ষে ৬ চার ও ৮ ছক্কায় ৭৫ বলে করেন অপরাজিত ১০১ রান। ওই টুর্নামেন্টে ৭ ম্যাচে ১৬ ছক্কায় ৪৬ গড় ও ১৫২.০৬ স্ট্রাইক রেটে করেন ১৮৪ রান।
আনিকেতের ক্রিকেটার হয়ে ওঠার পথ মোটেও সহজ ছিল না। ছোটবেলায় হারিয়ে ফেলেন মাকে। পরিবারের আর্থিক অবস্থাও ভালো ছিল না।
চাচা আমিত ভার্মার হাত ধরে ১০ বছর বয়সে ভর্তি হন ভোপালে আঙ্কুর ক্রিকেট একাডেমিতে। প্রতি দিন ১৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তাকে একাডেমিতে নিয়ে যেতেন চাচা। যেদিন চাচাকে পেতেন না, নিজেই সাইকেল চালিয়ে একাডেমিতে যেতে হতো তাকে।
কঠিন সেই পথ পাড়ি দিয়ে আনিকেত উঠে আসেন ভারতীয় ক্রিকেটের মূল স্রোতে। দেশটির ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতা সৈয়দ মুশতাক আলি ট্রফিতে গত ডিসেম্বরে মধ্য প্রদেশের হয়ে হায়দরাবাদের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে স্বীকৃত ক্রিকেটে অভিষেক হয় তার। উপলক্ষটা যদিও রাঙাতে পারেননি। আউট হয়ে যান প্রথম বলে।
শীর্ষ পর্যায়ে দ্বিতীয় ম্যাচটি খেলেন তিনি এবারের আইপিএলে এসে। রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে ওই ম্যাচে ব্যাটিংয়ে নামেন ইনিংসের ১৯তম ওভারে। দ্বিতীয় বলে মারেন ছক্কা। ৭ বলে এক ছক্কায় করেন ১৩ রান।
পরের ম্যাচে লাক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে তার ব্যাটিংয়ে নামার সুযোগ এসে যায় ১৩তম ওভারে। এবার ৫ ছক্কায় ১৩ বলে করেন ৩৬ রান।
নিজেকে ছাড়িয়ে গেলেন এবার দিল্লির বিপক্ষে। এ দিন মুখোমুখি দ্বিতীয় বলে চার মেরে ডানা মেলে দেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনার আকসার প্যাটেলকে মারেন টানা দুই ছক্কা। প্রথম ফিফটি পূর্ণ করেন ৩৪ বলে।
এরপর আরও বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন তিনি। আকসারের টানা তিন বলে মারেন দুই ছক্কা ও একটি চার। আরেক স্পিনার কুলদিপ ইয়াদাভকে ছক্কার পর আরেকটির চেষ্টায় বাউন্ডারিতে জেইক ফ্রেজার-ম্যাকগার্কের দুর্দান্ত ক্যাচে বিদায় নিতে হয় তাকে।
হায়দরাবাদ যদিও ম্যাচটি জিততে পারেনি। তবে আনিকেত আরেকবার দেখালেন সামর্থ্যের ঝলক।
তার ৪১ বলে ৭৪ রানের ইনিংস হায়দরাবাদের হয়ে পাঁচ বা এর নিচে ব্যাটিংয়ে নেমে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। গত বছর মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে পাঁচে নেমে হাইনরিখ ক্লসেনের ৩৪ বলে ৮০ রান এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ।