টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
রোহিত শার্মার বিধ্বংসী ইনিংসের পর বোলারদের নৈপুণ্যে জিতে সেমি-ফাইনালে উঠল ভারত।
Published : 25 Jun 2024, 12:25 AM
ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে ঝড় তুলতেন রোহিত শার্মা। তার বিধ্বংসী ইনিংসের সঙ্গে অন্যদের অবদানে বড় পুঁজি গড়ল ভারত। রান তাড়ায় অস্ট্রেলিয়াকে অনেকটা একাই টানলেন ট্রাভিস হেড। তবে শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যের ধারেকাছেও যেতে পারল না তারা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে উঠল ভারত।
সেন্ট লুসিয়ায় সোমবার সুপার এইটের ম্যাচে ভারতের জয় ২৪ রানে। ২০৫ রানের পুঁজি গড়ে অস্ট্রেলিয়াকে ১৮১ রানে আটকে দেয় তারা।
এই হারে অস্ট্রেলিয়ার সেমি-ফাইনালের ভাগ্য আর তাদের হাতে রইল না। এই গ্রুপের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার সকালে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।
ম্যাচটি পরিত্যক্ত হলে কিংবা আফগানিস্তান জিতলে তারা সেমি-ফাইনালে উঠে যাবে। বাংলাদেশ যদি ১৬০ রান করে ৬২ রানে জিততে পারে, তাহলে তারা সেমি-ফাইনালে যাবে। এর চেয়ে কম রানে (আগে ব্যাটিং ধরে) বাংলাদেশ জিতলে অস্ট্রেলিয়া উঠবে সেমি-ফাইনালে।
৬ পয়েন্ট নিয়ে এক নম্বর গ্রুপের শীর্ষে আছে ভারত। সমান ২ পয়েন্ট নিয়ে অস্ট্রেলিয়া দুইয়ে, নেটরান রেটে পিছিয়ে আফগানিস্তান তিনে আছে। বাংলাদেশ এখনও পয়েন্ট পায়নি।
ভারতের জয়ের নায়ক অধিনায়ক রোহিত। ৮ ছক্কা ও ৭ চারে ৪১ বলে ৯২ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচের সেরা তিনিই।
অস্ট্রেলিয়ার সামনে সমীকরণ ছিল, ১৫.৩ ওভারে জিততে পারলে সেমি-ফাইনালে উঠবে তারা। কিন্তু লক্ষ্য তাড়ায় প্রথম ওভারেই ডেভিড ওয়ার্নারকে হারায় দলটি।
দ্বিতীয় উইকেটে ৩৮ বলে ৮৭ রানের বিস্ফোরক জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন হেড ও মিচেল মার্শ। বাউন্ডারিতে আকসার প্যাটেলের দুর্দান্ত এক ক্যাচে মার্শের (২৮ বলে ৩৭) বিদায়ে ভাঙে এই জুটি।
গ্লেন মাক্সওয়েল ঝড়ের ইঙ্গিত দিয়েও থেমে যান ১২ বলে ২০ রান করে। টিকতে পারেননি মার্কাস স্টয়নিস। ২৪ বলে ফিফটি করে এগিয়ে যাওয়া হেড বাঁচিয়ে রাখেন আশা। তবে সপ্তদশ ওভারে জাসপ্রিত বুমরাহর বলে হেডের বিদায়ের পর আর পেরে ওঠেনি অস্ট্রেলিয়া।
৪৩ বলে ৯ চার ও ৪ ছক্কায় ৭৬ রানের ইনিংস খেলেন হেড।
ভারতের হয়ে দারুণ বোলিং করেন কুলদিপ ইয়াদাভ। ৪ ওভারে ২৪ রানে ২ উইকেট নেন বাঁহাতি এই রিস্ট স্পিনার।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ভারতের ইনিংসের শুরুতে ছিল না ঝড়ের ইঙ্গিত। প্রথম ২ ওভারে মাত্র ৬ রান তুলতে ভিরাট কোহলিকে হারায় তারা। জশ হেইজেলউডের শর্ট বল উড়িয়ে মারার চেষ্টায় বল আকাশে তুলে শূন্য রানে ফেরেন সাবেক ভারত অধিনায়ক। ২০২৪ সালে এই সংস্করণে আট ইনিংসে তিনবার এই স্বাদ পেলেন তিনি।
এরপর ঝড় তোলেন বর্তমান অধিনায়ক। তৃতীয় ওভারে মিচেল স্টার্ককে ৪টি ছক্কার সঙ্গে একটি চার মারেন রোহিত। ওভারে আসে ২৯ রান। এই সংস্করণে এক ওভারে যা স্টার্কের সর্বোচ্চ খরচ। ২০২১ বিশ্বকাপের ফাইনালে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ওভারে ২২ রান ছিল তার আগের সর্বোচ্চ।
পঞ্চম ওভারে প্যাট কামিন্সের প্রথম বল স্টেডিয়ামের ছাদের ওপরে আছড়ে ফেলে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে দুইশ ছক্কার মাইলফলক স্পর্শ করেন রোহিত।
এরপর বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ থাকে কিছুক্ষণ। পরে খেলা শুরু হলে কামিন্সের ওই ওভারেই দুটি চারে রোহিত ফিফটি পূর্ণ করেন স্রেফ ১৯ বলে।
প্রথম ৫ ওভারে ভারতের রান ছিল ৫২, যার ৫০ রানই রোহিতের!
অন্য প্রান্তে ‘ধীরে চলো’ নীতিতে ব্যাটিং করা রিশাভ পান্ত বিদায় নেন ১৪ বলে ১৫ রান করে। রোহিতের ঝড় চলতেই থাকে। জাগান সেঞ্চুরির সম্ভাবনা। তবে মাইলফলক থেকে ৮ রান দূরে থাকতে একাদশ ওভারে স্টার্কের ইয়র্কারে বোল্ড হয়ে থামেন তিনি।
তার বিদায়ের পর সুরিয়াকুমার ইয়াদাভ (১৬ বলে ৩১), শিভাম দুবে (২২ বলে ২৮) ও হার্দিক পান্ডিয়ার (১৭ বলে ২৭*) ব্যাটে দুইশ ছাড়ায় ভারত।
অন্য সতীর্থরা ভীষণ খরুচে হলেও দারুণ বোলিং করেন হেইজেলইড। ৪ ওভারে স্রেফ ১৪ রান দিয়ে একটি উইকেট নেন এই পেসার। শেষ পর্যন্ত অবশ্য হারের হতাশা নিয়েই মাঠ ছাড়লে হলো তাকে ও তার দলকে।
সেমি-ফাইনালে দুই নম্বর গ্রুপে দ্বিতীয় হওয়া ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে ভারত।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ২০ ওভারে ২০৫/৫ (রোহিত ৯২, কোহলি ০, পান্ত ১৫, সুরিয়াকুমার ৩১, দুবে ২৮, পান্ডিয়া ২৭*, জাদেজা ৯*; স্টার্ক ৪-০-৪৫-২, হেইজেলউড ৪-০-১৪-১, কামিন্স ৪-০-৪৮-০, জ্যাম্পা ৪-০-৪১-০, স্টয়নিস ৪-০-৫৬-২)
অস্ট্রেলিয়া: ২০ ওভারে ১৮১/৭ (ওয়ার্নার ৬, হেড ৭৬, মার্শ ৩৭, ম্যাক্সওয়েল ২০, স্টয়নিস ২, ডেভিড ১৫, ওয়েড ১, কামিন্স ১১*, স্টার্ক ৪*; আর্শদিপ ৪-০-৩৭-৩, বুমরাহ ৪-০-২৯-১, আকসার ৩-০-২১-১, পান্ডিয়া ৪-০-৪৭-০, কুলদিপ ৪-০-২৪-২, জাদেজা ১-০-১৭-০)
ফল: ভারত ২৪ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: রোহিত শার্মা