ভারতের সাবেক অলরাউন্ডার ও সেরা ফিল্ডারদের একজন সৈয়দ আবিদ আলি ৮৩ বছর বয়সে মারা গেছেন।
Published : 12 Mar 2025, 08:55 PM
দলের প্রয়োজনে কখনও ব্যাটিং করতেন ওপেনিংয়ে, কখনও মিডল অর্ডারে, আবার কখনও লোয়ার অর্ডারে। কখনও হাতে তুলে নিতেন নতুন বল, আবার কখনও পুরোনো বল। ফিল্ডার হিসেবেও দুর্দান্ত। সত্যিকারের অলরাউন্ডার যাকে বলে, এককথায় তাই। ভারতের সাবেক সেই অলরাউন্ডার ও সেরা ফিল্ডারদের একজন সৈয়দ আবিদ আলি আর নেই। ৮৩ বছর বয়সে বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় মারা গেছেন তিনি।
ভারতের সুদীর্ঘ টেস্ট ইতিহাসে এখন পর্যন্ত ম্যাচের প্রথম বলে উইকেট নিতে পেরেছেন স্রেফ দুজন ক্রিকেটার। যার শুরুটা হয়েছিল এই আবিদের হাত ধরে। পরে দুবার এই কীর্তি গড়েন কাপিল দেব।
গত শতাব্দীর ষাটের দশকে ও সত্তরের দশকের শুরুর দিকে ভারতের তারকা ক্রিকেটারদের একজন ছিলেন আবিদ। হায়দরাবাদে জন্ম নেওয়া আবিদের টেস্ট অভিষেক ১৯৬৭ সালের ডিসেম্বরে অ্যাডিলেইডে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। অভিষেক ইনিংসেই ৬ উইকেট নেন ৫৫ রান দিয়ে। সেটিই হয়ে আছে তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। অভিষেকে ব্যাট হাতে ছয় ও সাতে নেমে দুই ইনিংসেই করেন ৩৩ রান।
ওই সফরেই সিডনি টেস্টে ওপেনিংয়ে নেমে খেলেন ৭৮ ও ৮১ রানের চমৎকার ইনিংস। অমন পারফরম্যান্সের পর অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটার থেকে সাংবাদিক হয়ে ওঠা জ্যাক ফিঙ্গেলটনের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন তিনি।
সব মিলিয়ে ২৯ টেস্টে ৬ ফিফটিতে ২০.৩৬ গড়ে আবিদ করেন এক হাজার ১৮ রান। মিডিয়াম পেস বোলিংয়ে উইকেট নেন ৪৭টি। অভিষেকের পর পাঁচ উইকেটের স্বাদ আর পাননি তিনি।
২৯ টেস্টের মধ্যে সাতটিতে ভারতের ব্যাটিং ও বোলিং, দুটিই শুরু করেন তিনি। ১৯৭১ সালে পোর্ট অব স্পেনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্টের প্রথম বলে তিনি বোল্ড করে দেন রয় ফ্রেডেরিকসকে।
ভারতের হয়ে টেস্টে ৪, ১০ ও ১১ নম্বর ছাড়া প্রতিটি পজিশনে ব্যাটিং করেছেন তিনি। তবে বেশিরভাগ ইনিংসে ব্যাটিং করেছেন আট নম্বরে- মোট ৫৩ ইনিংসের মধ্যে ২০টিতে।
বলা হয়, আবিদের পা ছিল স্প্রিন্টারের মতো, ম্যারাথন দৌড়বিদদের মতো শক্তি আর ডেক্যাথলিটের মতো ছিল তার প্রাণশক্তি।
আবিদের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন ভারতের ব্যাটিং গ্রেট সুনিল গাভাস্কার।
“খুবই বেদনাদায়ক খবর, তিনি ছিলেন সিংহহৃদয়ের ক্রিকেটার, যিনি দলের যা প্রয়োজন, তাই করতেন। একজন অলরাউন্ডার হওয়ার পরও তিনি মিডল অর্ডারে ব্যাট করতেন, প্রয়োজনে ওপেনিংয়ে ব্যাটিং করতেন। লেগ সাইডে কিছু অবিশ্বাস্য ক্যাচ নিয়েছিলেন তিনি, যা আমাদের দুর্দান্ত স্পিন চতুষ্টয়কে আরও ধারাল করে তুলেছিল।”
জনপ্রিয় ভারতীয় ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, "ক্রিকেটে আমার প্রথম নায়ক। ছোটবেলায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তার দুর্দান্ত অভিষেকে আনন্দ পেয়েছিলাম, ১৯৭১ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়সূচক রান করার সময় হয়েছিলাম উচ্ছ্বসিত। একজন বড় মনের মানুষ।"
আবিদ ওয়ানডে খেলতে পারেন কেবল পাঁচটি, যার তিনটি ছিল ইতিহাসের প্রথম বিশ্বকাপে। যেখানে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৮ বলে ৭০ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। সেটিই হয়ে আছে তার শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ২১২ ম্যাচে ১৩ সেঞ্চুরিতে তিনি করেন প্রায় ৯ হাজার রান। উইকেট নেন ৩৯৭টি।
আবিদের সাবেক জাতীয় দল সতীর্থ ফারুখ ইঞ্জিনিয়ার একবার ভুল করে তার মৃত্যুর খবর সম্প্রচার করেছিলেন। পত্রিকায় অবিচুয়ারিও ছাপা হয়েছিল, যা পড়ে মজাই পেয়েছিলেন আবিদ।
এবার সত্যি সত্যি ওপারে পাড়ি জমালেন তিনি।