ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের আগে বাংলাদেশের একাদশ গড়ার ভাবনায় অনেক কিছুই বিবেচনায় থাকছে টিম ম্যানেজমেন্টের।
Published : 01 Nov 2022, 05:56 PM
অবশেষে সেই দুটি ম্যাচ এসেই গেল, যে দুই ম্যাচের জন্য বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা পেয়েছেন নাসুম আহমেদ!
মাস দেড়েক আগে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দল ঘোষণায় আলোচিত একটি প্রসঙ্গ ছিল শেখ মেহেদি হাসান কেন বাদ, নাসুম কেন দলে। টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট শ্রীধরন শ্রীরামের ব্যাখ্যা ছিল, “আমরা নাসুমকে নিয়েছি কারণ, ভারত ও পাকিস্তানের টপ অর্ডারের সঙ্গে ওর ম্যাচ-আপ দারুণ। তাই বাঁহাতি স্পিনারই এগিয়ে ছিল। আমাদের মিরাজ আছে, যে অফ স্পিন করতে পারে, মোসাদ্দেক আছে, সেও অফ স্পিন করতে পারে।”
বার্তাটা পরিস্কার, ভারত-পাকিস্তানের ব্যাটিং অর্ডারে যেহেতু ডানহাতি ব্যাটসম্যানের আধিক্য, বাড়তি অফ স্পিনার খেলানোর কোনো ভাবনাই নেই দলের। অস্ত্রে শান দেওয়ার পালা এবার নাসুমের।
পরিসংখ্যান বলছে, রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুল, বিরাট কোহলি, সূর্যকুমার যাদব, সবার ক্যারিয়ার স্ট্রাইক রেটের চেয়ে বাঁহাতি স্পিনের বিপক্ষে স্ট্রাইক রেট বেশ কম। শুধু ক্যারিয়ারজুড়েই নয়, গত দুই বছরেও বাঁহাতি স্পিনের বিপক্ষে তাদের অস্বস্তি দেখা গেছে কিছুটা। এই মূহূর্তে ভারতীয় তথা বিশ্বক্রিকেটেই টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংয়ের সেনসেশন যিনি, সেই সুর্যকুমারের ক্যারিয়ার স্ট্রাইক রেট ১৭৭। কিন্তু বাঁহাতি স্পিনের বিপক্ষে তার স্ট্রাইক রেট স্রেফ ১২৮।
ক্রিকেটবিশ্বে শ্রীরাম পরিচিত পরিসংখ্যান ও তথ্য নির্ভর কোচ হিসেবে। বাঁহাতি স্পিনের বিপক্ষে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের এই ঘাটতির জায়গা ‘টার্গেট’ করেই তিনি নাসুমকে দলে নিয়েছিলেন। এই ম্যাচের একাদশে তাই চোখ বন্ধ করেই জায়গা পাওয়ার কথা নাসুমের।
কিন্তু ব্যাপারটি কি এতটাই জলবৎ তরলং? বাংলাদেশের পরিকল্পনায় জল ঢেলে দেওয়ার আয়োজন সাজিয়ে রেখেছে অ্যাডিলেইডের প্রকৃতি।
ম্যাচের আগের দিন তো অ্যাডিলেইডে রোদ-মেঘ-বৃষ্টির খেলা চলল পালাক্রমে। তবে বৃষ্টির ভাগই ছিল বেশি। আকাশে মেঘের আনাগোনা দেখা গেছে বেশির ভাগ সময়। বুধবার ম্যাচের দিন আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বিকেল পর্যন্ত রোদ ঝলমলেই থাকার কথা। তবে সন্ধ্যা থেকেই আকাশ মেঘলা হয়ে উঠতে পারে। বৃষ্টির শঙ্কা আছে শতকরা ৬০ ভাগ।
আকাশ যদি সত্যিই মেঘলা থাকে, তাহলে একজন বাড়তি পেসানোর কথা তো ভাবতেই পারে দল। সেক্ষেত্রে ইবাদত হোসেন চৌধুরি কিংবা শরিফুল ইসলাম আসতে পারেন বিবেচনায়। ভারতের বিপক্ষে আগেও নানা সময়ে চার পেসার খেলানোর কৌশল বেছে নিয়েছে দল।
যদি টসের আগেই বৃষ্টি হয়, ম্যাচের ওভার কমে আসে, একাদশ গঠনেও তা প্রভাব রাখবে অবশ্যই।
তবে আবহাওয়া, বৃষ্টি কিংবা প্রতিপক্ষ ভারত, সব সমীকরণের বাইরে স্রেফ নিজেদের কম্বিনেশনের কথা ভাবলেও একাদশে পরিবর্তনের দাবি উঠতেই পারে। বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত তিন ম্যাচের দুটিতেই কিপার নুরুল হাসান সোহান ও অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক হোসেনসহ ৮ ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলেছে বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসানকে নিয়েই বিশেষজ্ঞ বোলার ছিলেন কেবল ৪ জন। পঞ্চম বোলারের কাজটি এক ম্যাচে করেছেন মোসাদ্দেক ও সৌম্য সরকার মিলে, আরেকটিতে শুধু মোসাদ্দেক। তাতে দলকে কড়া খেসারত দিতে হচ্ছিল প্রায়। শেষ পর্যন্ত উতরে গেলেও ঘাটতিটা তো স্পষ্টই ফুটে উঠেছে।
আরেকজন বিশেষজ্ঞ বোলার একাদশে আনার প্রসঙ্গে ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে সাকিব আল হাসান তুলে ধরলেন যথেষ্ট উপযুক্ত ক্রিকেটারের সীমাবদ্ধতা।
“কম্বিনেশন তো চাইলে অনেকভাবে করা যায়। এমন না যে শুধু একটা কম্বিনেশনই আছে বা থাকবে। কম্বিনেশন অনেকই বাড়ানো সম্ভব। আপনি শুধু আমার কথা বললেন (অলরাউন্ডার হিসেবে), অন্যান্য দলে ২-৩-৪ জন পর্যন্ত অলরাউন্ডার আছে। ওদের স্বাভাবিকভাবেই সুবিধাটা বেশি থাকে। আমাদের সেই বিলাসিতা নেই। আমাদের যে সম্পদ আছে, সেটির সর্বোচ্চ ব্যবহার কীভাবে করতে পারি, তা চিন্তা করতে হবে।”
এমনিতে গত ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে যে একাদশ নিয়ে খেলেছে দল, সেখানে বোলারের ঘাটতি দেখছেন না সাকিব। মোসাদ্দেক হোসেনকে তিনি বিশেষজ্ঞ বোলারের চেয়ে কম কিছু মনে করেন না।
“(বোলারের) ঘাটতি থাকলে তো আসলে আমরা ২০ ওভার করতে পারতাম না। এই বছরের রেকর্ড যেটা বলে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একটা ম্যাচে মোসাদ্দেক ৫ উইকেটও পেয়েছে। টি-টোয়েন্টিতে ৫ উইকেট পাওয়া খুবই বিরল। সেখানে আপনি যদি ওকে অকেশনাল বোলার হিসেবে বিবেচনা করেন, তাহলে সেটা ভুল।”
“হ্যাঁ ও হয়তো আরও ভালো বোলিং করতে পারে। তবে আপনি যদি ঘরোয়া ক্রিকেট দেখে, টি-টোয়েন্টি ম্যাচে নিয়মিতই ৪ ওভার করে থাকে।”
৪ বোলার নিয়ে খেলাটা যদিও আদর্শ নয়, তবে যে দুই ম্যাচে এই কম্বিনেশনে খেলেছে দল, সেই দুটিই জিতেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৫ বোলার নিয়ে হেরেছে বাজেভাবে। জয়ী কম্বিনেশনে পরিবর্তন আনার ব্যাপারে দলের রক্ষণশীলতার ইঙ্গিতও মিলল অধিনায়কের কথায়।
“এখন পর্যন্ত ওভাবে কিছু চিন্তা করিনি (একাদশ নিয়ে)। কোচের সঙ্গে কিছু কথা হয়েছে। আরও কয়েকজন কিছু কথা বলেছে। তবে আমি এখনও সেভাবে ভাবিনি। আমার মনে হয় একটু অপেক্ষা করে চিন্তা করাটাই ভালো। আসলে অনেক কিছুই মাথায় রাখতে হবে দল গঠনের সময়। আগেও যেটা বললাম, দল যেটাই ঠিক করা হোক, আমি আশাবাদী ভালো খেলবে।”
“একটা জিনিস হচ্ছে যে, এমন একটা দল এখন খেলেছে, যেটা দুইটা ম্যাচ জিতেছে। (এর বাইরে) একটা কম্বিনেশন আমরা করেছি, সেটা কাজে আসেনি। আবারও সেরকম কোনো কম্বিনেশন করব কিনা, সেটা চিন্তার বিষয়। অনেক যদি-কিন্তু, অনেক প্রশ্ন আছে। তো সবকিছু চিন্তা করেই একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জরুরি নয় যে, যে চিন্তা করা হবে বা যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, সেটা ঠিক হবে। তবে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, দলের সবাই সেটায় ভরসা রাখবে এবং মাঠের শতভাগ দেয়ার চেষ্টা করবে।”