Published : 30 Apr 2025, 09:15 PM
দ্রুত ছয় উইকেট হারিয়ে তখন বিপদে জিম্বাবুয়ে। ইনিংস ব্যবধানে জয় পেতে বাংলাদেশের প্রয়োজন আর চার উইকেট। স্টাম্প মাইকে শোনা গেল নাজমুল হোসেন শান্তর কণ্ঠ, ‘আরও ১৩ ওভার আছে… আজকেই (সব উইকেট) নিয়ে নে ভাই।’ অধিনায়কের কথা রাখতে সময় নেননি মেহেদী হাসান মিরাজ। পরপর দুই ওভারে সহ-অধিনায়ক নিয়ে নেন দুই উইকেট।
চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিন মিরাজের কাছে শান্ত আরও বেশি কিছু চাইলেও হয়তো নিরাশ হতেন না। দিনটিই যে ছিল মিরাজের! যা চেয়েছেন তা-ই যেন করতে পেরেছেন এই স্পিন অলরাউন্ডার। দিনের শুরুতে তিন অঙ্ক ছোঁয়ার আনন্দে ভাসার পর শেষ দিকে বল হাতে তিনি নিয়েছেন ৫ উইকেট।
অলরাউন্ড নৈপুণ্যে বুধবার নানা কীর্তি গড়ে বাংলাদেশের ইনিংস ও ১০৬ রানের জয়ে বড় অবদান রেখে মিরাজই চট্টগ্রাম টেস্টের সেরা। আগের টেস্টেও দুই ইনিংসেই ৫ উইকেট পাওয়া অফ স্পিনারের হাতে ওঠে সিরিজ সেরার পুরস্কারও। মাঠ ও মাঠের বাইরে সাফল্যের সাজানো দিনটিই তাই মিরাজের ক্যারিয়ারের সেরা।
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লা. লে. মতিউর রহমান ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় দিনের শেষ বিকেলে দ্রুত চার উইকেট হারানোয় প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের বড় আশা ছিল না। কোনোমতে একশ রানের লিড নিয়ে জিম্বাবুয়েকে চ্যালেঞ্জ দেওয়ার লক্ষ্যের কথাই বলেছিলেন চমৎকার সেঞ্চুরি করা সাদমান ইসলাম।
একশ রানের লিডের লক্ষ্য পূরণ করতে তেমন সময় লাগেনি মিরাজের। তানজিম হাসানের সঙ্গে জুটি বেধে দলের চাওয়ার চেয়ে অনেক বেশি করেন ২৭ বছর বয়সী অলরাউন্ডার। চমৎকার ব্যাটিংয়ে প্রথম টেস্ট ক্যারিয়ারের দুই হাজার রান পূর্ণ করেন তিনি।
যার সৌজন্যে টেস্টে দুই হাজার ও দুইশ উইকেটের চমৎকার ‘ডাবল’ ধরা দেয় মিরাজের ঝুলিতে। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে এই ‘ডাবল’ আছে শুধু সাকিব আল হাসানের। দেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটারের এই কীর্তি ছুঁতে লেগেছিল ৫৪ ম্যাচ। একই বন্ধনীতে মিরাজ পৌঁছালেন ৫৩ ম্যাচে।
পরে ৭০ বলে তিনি স্পর্শ করেন ক্যারিয়ারের দশম ফিফটি। একই ছন্দে এগিয়ে সেটিকে তিন অঙ্কে রূপ দেন মিরাজ। ১১ চার ও ১ ছক্কায় ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি ছুঁতে লাগে ১৪৩ বল। এই মাঠেই ২০২১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম শতকের স্বাদ পেয়েছিলেন তিনি।
মিরাজের ১০৪ রানের ইনিংসে বাংলাদেশ পায় ২১৭ রানের লিড। নিজেদের আশার দ্বিগুণ রান পেয়ে হাসিমুখে বোলিংয়ে নামে স্বাগতিকরা। তখনই যেন নিজের সিনেমার দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে হাজির হন মিরাজ। এবার তার দ্বিতীয় সত্তা, বোলার পরিচয়ে।
জিম্বাবুয়ের শুরুতে অবশ্য আটকা পড়ে তাইজুল ইসলাম ও নাঈম হাসানের ঘূর্ণিতে। মাত্র ২২ রানে তারা হারিয়ে ফেলে ৩ উইকেট। চতুর্থ উইকেটে প্রতিরোধের চেষ্টা করেন বেন কারান ও ক্রেইগ আরভাইন। দুজন মিলে যোগ করেন ৪৭ রান।
আরভাইনকে বোল্ড করে মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠা ওই জুটি ভাঙেন মিরাজ। একই ওভারে ওয়েসলি মাধেভেরেকে এলবিডব্লিউ করেন তিনি। নিজের পরের ওভারে টাফাডজোয়া সিগাকে আউট করেন মিরাজ।
তখনই বুধবারের মধ্যে ম্যাচ শেষ করার তাগিদ দিতে থাকেন শান্ত। অষ্টম উইকেটে ২০ রানের জুটিতে সেই আশায় বাধ দেওয়ার চেষ্টা করেন কারান ও ওয়েলিংটন মাসাকাদজা। পরপর দুই ওভারে দুজনকে ফিরিয়ে দেন মিরাজ।
কারানকে কট বিহাইন্ড করে ক্যারিয়ারের ত্রয়োদশ পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন মিরাজ। যা তাকে পৌঁছে দেয় আরেকটি উচ্চতায়। একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নেওয়া বাংলাদেশের তৃতীয় ক্রিকেটার তিনি। তার আগে এই কীর্তি ছিল সাকিব আল হাসান (দুই বার) ও সোহাগ গাজীর।
দিনের প্রথম ভাগে ব্যাট হাতে আলো ছড়ানোর পর বোলিংয়ে মাত্র ৩২ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কারে সবার চেয়ে এগিয়েই ছিলেন মিরাজ। এর সঙ্গে প্রথম টেস্টে পাওয়া ১০ উইকেট মিলিয়ে তাকেই দেওয়া হয় সিরিজ সেরার পুরস্কার।
টেস্ট ক্যারিয়ারে মিরাজের এটি তৃতীয় সিরিজ সেরার স্বীকৃতি। বাংলাদেশের হয়ে এর চেয়ে বেশি সিরিজ সেরা হতে পেরেছেন শুধু সাকিব (৫)। ম্যাচ সেরার পুরস্কারও তৃতীয়বারই পেয়েছেন মিরাজ। এই তালিকায় দেশের চতুর্থ এই অলরাউন্ডার।
স্বপ্নময় এক দিন কাটিয়ে একাধিক পুরস্কার নিজের করে হাসিমুখে সংবাদ সম্মেলনে এসে মিরাজ বলেন, এটিই তার ক্যারিয়ারের সেরা দিন।
“হ্যাঁ… অবশ্যই (সেরা দিন)। খুব ভালো লাগছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একশ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। তবে অল্পের জন্য ৫টা পাইনি। যদি ৫ উইকেট হতো, ভালো লাগত। ওই ম্যাচ আমরা হেরেছিলাম, এই মাঠেই। (আজ) ওই কথাটা মনে পড়ে গিয়েছে। তাই খুবই ভালো লাগছে। একইসঙ্গে আমরা ম্যাচ জিতেছি। আর অর্জন সবসময়ই ভালো লাগার বিষয়।”