দক্ষিণ আফ্রিকা-পাকিস্তান সিরিজ
সেঞ্চুরি করে অপরাজিত আছেন মাসুদ, দুই বছরের সেঞ্চুরি-খরা কাটানোর সম্ভাবনা জাগিয়েও পারেননি বাবর।
Published : 05 Jan 2025, 10:34 PM
কেপ টাউনের ব্যাটিং স্বর্গে বাজে ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনীতে দুইশর আগে গুটিয়ে ফলো অনে পড়ল পাকিস্তান। একই দল পরের ইনিংসে দুইশ পেরিয়ে গেল কোনো উইকেট না হারিয়েই! প্রথম ইনিংসের হতাশা পেছনে ফেলে শান মাসুদ ও বাবর আজম গড়লেন দারুণ উদ্বোধনী জুটি। মাসুদ পেলেন সেঞ্চুরি।
ম্যাচের লাগাম যদিও এখনও দক্ষিণ আফ্রিকার হাতেই। তবে লড়াইয়ের বিশ্বাস পেয়ে গেছে পাকিস্তান।
সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তানের রান ১ উইকেটে ২১৩। প্রথম ইনিংসে ১৯৪ রানের গুটিয়ে ফলো অনে পড়া দল এখন ৯ উইকেট হাতে নিয়ে পিছিয়ে আছে ২০৮ রানে।
ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরিতে ১৬৬ বলে ১৪ চারে ১০২ রানে খেলছেন মাসুদ। দুই বছরের সেঞ্চুরি-খরা কাটানোর সম্ভাবনা জাগিয়ে ৮১ রানে আউট হয়েছেন বাবর। ম্যাচে দ্বিতীয় এবং সিরিজে তার টানা তৃতীয় পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস এটি।
দুজনের উদ্বোধনী জুটি ২০৫ রানের। ফলো অনে পড়ে যেকোনো দলের সর্বোচ্চ উদ্বোধনী জুটি এটিই। এক্ষেত্রে ২০০৮ সালে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রায়েম স্মিথ ও নিল ম্যাকেঞ্জির ২০৪ রানের উদ্বোধনী জুটি ছিল আগের সেরা।
আর ফলো অনে পড়ে যেকোনো উইকেটে পাকিস্তানের প্রথম দুইশ রানের জুটি এটি। ১৯৫৮ সালে বারবাডোজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তৃতীয় উইকেটে হানিফ মোহাম্মদ ও সাইদ আহমেদের ১৫৪ রানের জুটি ছিল আগের সর্বোচ্চ।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যেকোনো উইকেটে বাবর ও মাসুদের চেয়ে বড় জুটি পাকিস্তানের আছে আর কেবল একটি। এই কেপ টাউনেই ২০১৩ সালে পঞ্চম উইকেটে ২১৯ রানের জুটি গড়েছিলেন আসাদ শাফিক ও ইউনিস খান।
অথচ পাকিস্তানের নিয়মিত ওপেনিং জুটি নয় এটি। ম্যাচের প্রথম দিন অ্যাঙ্কেলে মারাত্মক চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়া ওপেনার সাইম আইয়ুবের জায়গায় টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ওপেন করতে নামেন বাবর। প্রথম ইনিংসে প্রথম ওভারে শুরুর জুটি ভাঙলেও, পরের ইনিংসে তা পৌঁছে গেল রেকর্ড উচ্চতায়।
নিউল্যান্ডসে প্রথম ইনিংসে ৩ উইকেটে ৬৪ রান নিয়ে রোববার তৃতীয় দিন শুরু করে পাকিস্তান। আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান বাবর ও মোহাম্মদ রিজওয়ান নির্বিঘ্নে কাটিয়ে দেন প্রথম ঘণ্টা। ৩১ রান নিয়ে ব্যাটিং শুরু করা বাবর ১১২ বলে পূর্ণ করেন ফিফটি।
পানি-পানের বিরতির পর প্রথম ওভারেই বাবরকে ফিরিয়ে প্রথম টেস্ট উইকেটের দেখা পান ১৮ বছর বয়সী অভিষিক্ত পেসার কিউনা মাফাকা।
১২৭ বলে ৭ চারে ৫৮ রান করেন বাবর। রিজওয়ানকে বোল্ড করে দেন ভিয়ান মুল্ডার। ৮২ বলে ৪৬ রান করেন পাকিস্তানের কিপার-ব্যাটসম্যান।
এরপর ২০ পর্যন্তও যেতে পারেননি আর কেউ। ৭৬ রানে শেষ ৬ উইকেট হারায় পাকিস্তান।
৫৫ রানে ৩ উইকেট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার সফলতম বোলার পেসার কাগিসো রাবাদা।
৪২১ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে নেমে দারুণ ব্যাটিংয়ে দলকে এগিয়ে নেন মাসুদ ও বাবর। জুটিতে শতরান পূর্ণ হয় ১৩২ বলে।
২০২২ সালে রাওয়ালপিন্ডিতে আবদুল্লাহ শাফিক ও ইমাম-উল-হাকের ২২৫ রানের জুটির পর টেস্টে পাকিস্তানের প্রথম শতরানের উদ্বোধনী জুটি এটি।
৯৮ থেকে মার্কো ইয়ানসেনকে চার মেরে মাসুদ দক্ষিণ আফ্রিকায় নিজের প্রথম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ১৫৯ বলে। পাকিস্তানের টেস্ট অধিনায়কদের মধ্যে ওপেনার হিসেবে সেঞ্চুরি এতদিন ছিল কেবল সাইদ আনোয়ার ও আমির সোহেলের। আরেকজন সঙ্গী পেলেন তারা।
ইয়ানসেনের পরের ওভারে গালিতে ক্যাচ দিয়ে বাবর বিদায় নিলে ভাঙে ২৮৮ বল স্থায়ী জুটি। ‘নাইটওয়াচম্যান’ খুররাম শাহজাদকে নিয়ে বাকি সময়টুকু কাটিয়ে দেন মাসুদ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ৬১৫
পাকিস্তান ১ম ইনিংস: (আগের দিন ৬৪/৩) ৫৪.২ ওভারে ১৯৪ (বাবর ৫৮, রিজওয়ান ৪৬, সালমান ১০, জামাল ১৫, শাহজাদ ১৪, হামজা ১৩, আব্বাস ০*; রাবাদা ১৫-৩-৫৫-৩, ইয়ানসেন ১২-৪-৩৬-১, মাফাকা ৮.২-১-৪৩-২, মুল্ডার ১১-০-৪৪-১, মহারাজ ৮-২-১৪-২)
পাকিস্তান ২য় ইনিংস: (ফলো অনের পর): ৪৯ ওভারে ২১৩/১ (মাসুদ ১০২*, বাবর ৮১, শাহজাদ ৮*; রাবাদা ১২-০-৫৬-০, ইয়ানসেন ১০-০-৫৬-১, মুল্ডার ৫-০-১৬-০, মাফাকা ৬-০-৩১-০, মহারাজ ১৫-৩-৩৬-০, মার্করাম ১-০-৬-০)