সম্মিলিত চেষ্টায় অস্ট্রেলিয়াকে দুইশর আগে গুটিয়ে ভিতটা গড়ে দেন বোলাররা। কিন্তু মিচেল স্টার্ক, মার্কাস স্টয়নিসের ছোবলে অল্প এই রানও যেন পাহাড়সম হয়ে দাঁড়ায় ভারতের সামনে। হারের শঙ্কায় পড়া দলকে কক্ষপথে ফেরান লোকেশ রাহুল ও রবীন্দ্র জাদেজা। তাদের দুজনের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে দারুণ জয় তুলে নেয় স্বাগতিকরা।
মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে শুক্রবার প্রথম ওয়ানডে ৫ উইকেটে জিতে সিরিজে এগিয়ে গেছে ভারত। অস্ট্রেলিয়ার ১৮৮ রান তারা পেরিয়ে গেছে ৬১ বল বাকি থাকতে।
ফলাফল দেখে বোঝার উপায় নেই অল্প এই রান তাড়া করতেও কতটা বেগ পেতে হয়েছে ভারতকে। ৮৩ রানে ৫ উইকেট হারানো স্বাগতিকদের কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় পৌঁছে দেন রাহুল ও জাদেজা। ষষ্ঠ উইকেটে দুইজনে গড়েন অবিচ্ছিন্ন ১০৮ রানের জুটি।
চমৎকার ব্যাটিংয়ে দলকে জিতিয়ে ফেরা রাহুল করেন ১ ছক্কা ও ৭ চারে ৭৫ রান। ৫ চারে ৪৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন জাদেজা। সঙ্গে ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা তিনি।
মিচেল মার্শ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে ত্রিশ ছুঁতে পারেননি আর কেউ। ওপেনিংয়ে নেমে ৫ ছক্কা ও ১০ চারে ৮১ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেন মার্শ। পরে বল হাতে ৩ উইকেট নিয়ে সফরকারীদের জয়ের স্বপ্ন দেখান স্টার্ক। স্টয়নিসের শিকার দুটি।
প্রতিপক্ষকে অল্পতে আটকে রাখতে বড় ভূমিকা রাখা মোহাম্মদ শামি স্রেফ ১৭ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। মোহাম্মদ সিরাজেরও প্রাপ্তি তিনটি।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা অস্ট্রেলিয়া শিবিরে দ্বিতীয় ওভারে আঘাত হানেন সিরাজ। তার বল স্টাম্পে টেনে আনেন ট্রাভিস হেড। শুরুর ধাক্কা মার্শ ও স্টিভেন স্মিথের ব্যাটে দারুণভাবে সামাল দেয় দলটি।
দ্রুত রান বাড়াতে থাকেন মার্শ। তাকে সঙ্গ দিয়ে যান স্মিথ। অস্ট্রেলিয়ার ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক স্মিথকে কটবিহাইন্ড করে ৬৩ বলে ৭২ রানের জুটি ভাঙেন ভারতের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া। আগের ওভারে এলবিডব্লিউর রিভিউ নিয়ে বেঁচে যাওয়া স্মিথ করতে পারেন ৪টি চারে কেবল ২২ রান।
আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে রান বাড়ানো মার্শ ৫১ বলে স্পর্শ করেন ফিফটি। অতি আগ্রাসনই কাল হয় তার। জাদেজাকে ছক্কার চেষ্টায় ব্যাটের কানায় লেগে শর্ট থার্ডম্যানে ধরা পড়েন তিনি।
এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে অস্ট্রেলিয়া। তিন ওভারে তিন উইকেট নিয়ে প্রতিপক্ষ শিবিরে বড় ছোবলটা দেন শামি। জশ ইংলিসের পর অসাধারণ এক ডেলিভারিতে ক্যামেরন গ্রিনকে বোল্ড করে দেন এই পেসার। পরের বলেই স্লিপে স্টয়নিসের ক্যাচ ছাড়েন শুবমান গিল। শামির পরের ওভারে গিলের হাতেই স্লিপে ধরা পড়েন স্টয়নিস।
ফের আক্রমণে এসে এবার জাদেজার শিকার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। শন অ্যাবট ও অ্যাডাম জ্যাম্পাকে ফিরিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস গুটিয়ে দেন সিরাজ।
এক পর্যায়ে ২ উইকেটে ১২৯ রানে থাকা সফরকারীরা দুইশই করতে পারেনি। ৫৯ রানে শেষ ৮ উইকেট হারায় তারা। ১৯ রানে পড়ে শেষ ৬ উইকেট।
অল্প পুঁজি নিয়ে লড়াই জমিয়ে তোলেন অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা। দ্বিতীয় ওভারে ইশান কিষানকে এলবিডব্লিউ করে দেন স্টয়নিস। পরের ওভারে স্টার্কের বলে ফিরতে পারতেন গিল। কিন্তু ২ রানে থাকা ব্যাটসম্যানের ক্যাচ গ্লাভসে জমাতে পারেননি ইংলিস।
স্টার্ক নিজের পরের ওভারে টানা দুই বলে ফিরিয়ে দেন বিরাট কোহলি ও সূর্যকুমার যাদবকে। দুইজনই হন এলবিডব্লিউ। তিন ব্যাটসম্যানের কেউই যেতে পারেননি দুই অঙ্কে।
৩ চারে ২০ রান করা গিল স্টার্কেরই শিকার। ৩৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে কাঁপতে থাকা ভারতকে কিছুক্ষণ টানেন পান্ডিয়া। তাকে বিদায় করে ৪৪ রানের জুটি ভেঙে আবারও অস্ট্রেলিয়ার জয়ের আশা জাগান স্টয়নিস।
দলটির সেই আশা ভেঙে দেন রাহুল ও জাদেজা। তাদের জুটি শেষ পর্যন্ত আর ভাঙতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। দেখেশুনে খেলে ৭৩ বলে ক্যারিয়ারের ত্রয়োদশ ওয়ানডে ফিফটি করেন রাহুল। স্টার্ককে তিন বলে দুই চার মেরে ম্যাচের ইতি টানেন জাদেজা।
আগামী রোববার সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মুখোমুখি হবে দুই দল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া: ৩৫.৪ ওভারে ১৮৮ (হেড ৫, মার্শ ৮১, স্মিথ ২২, লাবুশেন ১৫, ইংলিস ২৬, গ্রিন ১২, ম্যাক্সওয়েল ৮, স্টয়নিস ৫, অ্যাবট ০, স্টার্ক ৪*, জ্যাম্পা ০; শামি ৬-২-১৭-৩, সিরাজ ৫.৪-১-২৯-৩, পান্ডিয়া ৫-০-২৯-১, শার্দুল ২-০-১২-০, জাদেজা ৯-০-৪৬-২, কুলদিপ ৮-১-৪৮-১)
ভারত: ৩৯.৫ ওভারে ১৯১/৫ (কিষান ৩, গিল ২০, কোহলি ৪, সূর্যকুমার ০, রাহুল ৭৫*, পান্ডিয়া ২৫, জাদেজা ৪৫*; স্টার্ক ৯.৫-০-৪৯-৩, স্টয়নিস ৭-১-২৭-২, অ্যাবট ৯-০-৩১-০, গ্রিন ৬-০-৩৫-০, জ্যাম্পা ৬-০-৩৭-০, ম্যাক্সওয়েল ২-০-৭-০)
ফল: ভারত ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: রবীন্দ্র জাদেজা
সিরিজ: তিন ম্যাচে সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে ভারত