আয়ারল্যান্ডের জার্সিতে নিজের প্রথম পঞ্চাশ করলেন পিটার মুর আর ইনিংসজুড়ে অতিরিক্ত রানের ফোয়ারা ছোটালেন জিম্বাবুয়ের বোলাররা।
Published : 27 Jul 2024, 01:31 AM
নতুন পরিচয়ে নিজের সেরাটা যেন ঐতিহাসিক ম্যাচের জন্য জমিয়ে রেখেছিলেন পিটার মুর। সেটিও কিনা নিজের জন্মভূমির বিপক্ষে। আইরিশদের হয়ে মুরের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসের সঙ্গে দুই হাত মেলে অতিরিক্ত দিলেন জিম্বাবুয়ের বোলাররা। অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ড গড়লেন ক্লাইভ মাডান্ডে। প্রায় ছয় বছর পর ঘরের মাঠে খেলতে নেমে লিড পেল আয়ারল্যান্ড।
বেলফাস্টে স্টরমন্টে দ্বিতীয় দিন শেষে ২৮ রানে এগিয়ে স্বাগতিকরা। জিম্বাবুয়ের ২১০ রানের জবাবে মুরের ফিফটিতে ২৫০ রান করে তারা। কোনো উইকেট না হারিয়ে ১২ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করে সফরকারীরা।
বৃষ্টিবিঘ্নিত দিনে খেলা হয়েছে মোটে ৬২.৩ ওভার। আইরিশদের ইনিংসে কয়েক দফা বাগড়া বাধায় বৃষ্টি। শেষ পর্যন্ত তারা অলআউট হয় ৫৮.৩ ওভারে। পরে দিনের শেষভাগের ৪ ওভারে কোনো বিপদ ঘটতে দেননি জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনার জয়লর্ড গুম্বি ও প্রিন্স মাসভাউরে।
আয়ারল্যান্ডের জার্সিতে প্রথম পঞ্চাশছোঁয়া ইনিংসে ৭৯ রান করেন মুর। ১০৫ বলে ১১টি চার মারেন তিনি। আইরিশদের হয়ে আগের ১০ ইনিংসে একবারও ২০ রান করতে পারেননি তিনি। ২০১৮ সাল পর্যন্ত জিম্বাবুয়ের হয়ে খেলা এই ক্রিকেটার ওই পর্বে ৮ ম্যাচে করেছিলেন পাঁচ ফিফটি।
মুরের দারুণ ব্যাটিংয়ের দিন ত্রিশ ছুঁতে পারেননি আয়ারল্যান্ডের আর কোনো ব্যাটসম্যান। তবু তাদের লিড পেতে সমস্যা হয়নি মূলত জিম্বাবুয়ের এলোমেলো বোলিংয়ের সৌজন্যে। আইরিশ স্কোরকার্ডে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর আসে ‘অতিরিক্ত’ থেকে। সবমিলিয়ে ৫৯টি অতিরিক্ত রান দেয় জিম্বাবুয়ে।
এর মধ্যে ৪২ রান আসে ‘বাই’ থেকে। টেস্ট ক্রিকেটে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ‘বাই’ রানের রেকর্ড এটি। নিজের ব্যর্থতার সঙ্গে জিম্বাবুয়ের পেসারদের নিয়ন্ত্রণহীন বোলিংয়ে অভিষেকেই এই বিব্রতকর রেকর্ডে উঠল মাডান্ডের নাম। ব্লেসিং মুজারাবানি, রিচার্ড এনগারাভাদের লেগ স্টাম্পে পিচ করা বেশিরভাগ ডেলিভারিই শেষ মুহূর্তের সুইংয়ে মাডান্ডের নাগালের বাইরে চলে যায়। তাই বেশি কিছু করারও ছিল না তরুণ উইকেটরক্ষকের।
প্রায় ৯০ বছর ধরে রেকর্ডটি ছিল ইংল্যান্ডের ফ্রাঙ্ক উলির। ১৯৩৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কেনিংটন ওভালে উলির গ্লাভসের আশপাশ দিয়ে যায় ৩৭টি ‘বাই’ রান। উলি অবশ্য নিয়মিত উইকেটরক্ষক নন। প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ের সময় লিস অ্যামিস পিঠে চোট পেলে দ্বিতীয় ইনিংসে গ্লাভস হাতে নিতে হয় উলিকে।
স্বীকৃত উইকেটরক্ষকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ‘বাই’ রান দেওয়ার রেকর্ডটি ছিল দিনেশ কার্তিকের। ২০০৭ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে বেঙ্গালুরু টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৩৫টি ‘বাই’ রান দেয় ভারত।
আয়ারল্যান্ডের মোট সংগ্রহের ২৩.৬ শতাংশ রান এসেছে অতিরিক্ত থেকে। টেস্টে অন্তত দুইশ রানের দলীয় ইনিংসে এটিই সবচেয়ে বেশি অতিরিক্ত রানের হার। পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৯৭৭ সালের ব্রিজটাউন টেস্টে ২৯১ রানের মধ্যে ৬৮ রানই অতিরিক্ত দিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ২৩.৩ শতাংশ।
এক ইনিংসে জিম্বাবুয়ের এর চেয়ে বেশি অতিরিক্ত রান দেওয়ার নজির আছে আর একটি। ২০০৩ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লর্ডস টেস্টে ৪৭২ রানের মধ্যে তারা অতিরিক্ত দেয় ৬১ রান। আর সবচেয়ে বেশি অতিরিক্ত রান দেওয়ার রেকর্ডটি ভারতের। ২০০৭ সালের বেঙ্গালুরু টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে তারা দেয় ৭৬টি অতিরিক্ত রান।
দিনের শুরুতে প্রথম ৪ ওভার দেখেশুনে খেলেন মুর ও অ্যান্ডি বালবার্নি। পঞ্চম ওভারে এনগারাভার বলে প্রথম চার মারেন মুর। এরপর নিয়মিতই আসতে থাকে বাউন্ডারি। ওভারপ্রতি সাড়ে চারের বেশি করে রান নিতে থাকে আয়ারল্যান্ড।
১৩তম ওভারে মুজারাবানির বলে বালবার্নির ক্যাচ ছেড়ে দেন মাডান্ডে। জীবন পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি আইরিশ অধিনায়ক। ১৬তম ওভারে আক্রমণে এসে তাকে ফেরত পাঠান তানাকা চিভাঙ্গা। ভাঙে ৭১ রানের উদ্বোধনী জুটি।
এক ওভার পর ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ও আয়ারল্যান্ডের হয়ে প্রথম ফিফটি পূর্ণ করেন মুর, মাত্র ৫৩ বলে।
মধ্যাহ্ন বিরতির আগে কার্টিস ক্যাম্ফারের উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। তবে ২৫ ওভারে ১১৫ রান করে বেশ ভালো অবস্থানেই থাকে তারা।
এরপর নামা বৃষ্টিতে বিরতি শেষে প্রায় এক ঘণ্টা বন্ধ থাকে খেলা। পুনরায় খেলা শুরু হলে দ্বিতীয় বলে হ্যারি টেক্টরকে বিদায় করেন চিভাঙ্গা। এক বল ফিরতে পারতেন পল স্টার্লিংও। কিন্তু চিভাঙ্গা ‘নো’ বল করায় বেঁচে যান আইরিশদের সাদা বলের অধিনায়ক।
জীবন পেয়ে মুরকে সঙ্গে নিয়ে এগোতে থাকেন স্টার্লিং। তৃতীয় উইকেট জুটিতে আসে ৫০ রান। ৩৭তম ওভারে পরপর দুই বলে মুর ও লরকান টাকারকে ফেরান মুজারাবানি। শর্ট বলে কট বিহাইন্ড হন মুর। ফুল লেংথ ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ টাকার।
চা বিরতির আগে আরও ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় আয়ারল্যান্ড। ২২ রান করা স্টার্লিংকে ফেরান শন উইলিয়ামস।
শেষ সেশনের শুরুতেই ফেরেন ক্রেইগ ইয়াং। আবার নামে বৃষ্টি। পরে খেলা শুরু হলে পাল্টা আক্রমণের পথে হাঁটেন অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন ও ম্যাথু হামফ্রিজ। শেষ উইকেটে দুজন মিলে মাত্র ৪৪ বলে যোগ করেন ৪৭ রান।
২৮ রান করে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন সাত নম্বরে নামা ম্যাকব্রাইন। ২৭ রানে অপরাজিত থাকেন হামফ্রিজ।
জিম্বাবুয়ের পক্ষে ৩টি করে উইকেট নেন চিভাঙ্গা ও মুজারাবানি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস: ২১০
আয়ারল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৫৮.৩ ওভারে ২৫০ (মুর ৭৯, বালবার্নি ১৯, ক্যাম্ফার ৮, টেক্টর ৪, স্টার্লিং ২২, টাকার ০, ম্যাকব্রাইন ২৮, অ্যাডায়ার ০, ম্যাককার্থি ১, ইয়ং ৩, হামফ্রিজ ২৭*; এনগারাভা ১১-০-৫৩-০, চাতারা ১৫.৩-৩-৪৭-২, মুজারাবানি ১৭-৪-৫৩-৩, চিভাঙ্গা ১০-২-৩৯-৩, উইলিয়ামস ৫-১-১১-২)
জিম্বাবুয়ে ২য় ইনিংস: ৪ ওভারে ১২/০ (গুম্বি ৭*, মাসভাউরে ৪*; অ্যাডায়ার ২-০-৬-০, ম্যাককার্থি ২-০-৫-০)