প্রথম দল হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে দুইশ রান স্পর্শ করল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, এরপর দুর্দান্ত বোলিংয়ে প্রথমবারের মতো একশ রানে জয়ের স্বাদ পেল তারা।
Published : 30 Jan 2025, 09:15 AM
প্রথম ম্যাচে তবু একটু লড়াইয়ের ছাপ ছিল ব্যাটিংয়ে। দ্বিতীয় ম্যাচে বিন্দুমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাও হলো না। প্রথম দল হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে দুইশ রানের মাইলফলক ছোঁয়ার পর বল হাতেও দুর্দান্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ব্যাটে-বলে নিগার সুলতানার দলকে পর্যদুস্ত করে এক ম্যাচ বাকি রেখেই সিরিজ জিতে নিল ক্যারিবিয়ানরা।
সেন্ট কিটসে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে ১০৬ রানে হারিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার সকালে শেষ হওয়া ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২০ ওভারে তোলে ২০১ রান। ক্যারিবিয়ানদের ইনিংসে ফিফটি মাত্র একটি। ৩৬ বলে ৬৩ রানের ইনিংস খেলেন ওপেনার কিয়ানা জোসেফ। তবে কার্যকর ইনিংস আছে আরও কয়েকটি। বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে ৫ ছক্কায় ২০ বলে ৪৯ রানের ইনিংস খেলেন ডেন্ড্রা ডটিন।
টি-টোয়েন্টিতে এই প্রথম বাংলাদেশের বিপক্ষে দুইশ রানের ইনিংস হলো। আগের সর্বোচ্চ ১৮৯ ছিল যৌথভাবে অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ডের।
ক্যারিবিয়ানদের রান উৎসবের পর ছিল বাংলাদেশের মন্থর ও বিরক্তির ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী। গোটা ২০ ওভার খেলে ৯৫ রান করতে পারে নিগার সুলতানার দল।
১০৬ রানের এই জয় টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সবচেয়ে বড় ব্যবধানের জয়। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৯ রানের জয় ছিল আগের সেরা। বাংলাদেশের এটি দ্বিতীয় বৃহত্তম হার।
আগের ম্যাচে আগে ব্যাট করে ১৪৪ রান তুলতে পেরেছিল বাংলাদেশ। ওয়ার্নার পার্কের ব্যাটিং স্বর্গে টস জিতে এবার বোলিং নিয়েই বিপাকে পড়ে যান নিগার সুলতানা। ম্যাচের একদম শুরু থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের বোলিং গুঁড়িয়ে দেন ক্যারিবিয়ান ব্যাটাররা।
বাংলাদেশের সেরা দুই বোলার নাহিদা আক্তার ও মারুফা আক্তার আগের ম্যাচের মতো ছিলেন না এই ম্যাচেও। কেবল রাবেয়া খান ছাড়া অন্য বোলারদের কেউ দমিয়ে রাখতে পারেননি ক্যারিবিয়ান ব্যাটারদের।
ম্যাচের প্রথম বলেই ফারিহা তৃষ্ণাকে মিড অফের ওপর দিয়ে চার মেরে শুরু করেন কিয়ানা জোসেফ। বাঁহাতি ওপেনার বাউন্ডারি মারেন পরের বলেও।
এরপর বাউন্ডারির স্রোত বয়ে যেতে থাকে। দ্বিতীয় ওভারে তিনটি, তৃতীয় ওভারে তিনটি, প্রথম পাঁচ ওভারেই বাউন্ডারি আসে ১১টি! দলের রান পেরিয়ে যায় পঞ্চাশ।
ষষ্ঠ ওভারে আক্রমণে এসে জুটি ভাঙেন লেগ স্পিনার রাবেয়া খান। ৬ চারে ১৮ বলে ২৭ করে বোল্ড হন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক হেইলি ম্যাথিউস।
তিনে নামা শিমেইন ক্যাম্পবেল বিদায় নেন ১০ বলে ১১ রান করে। পরের জুটিতেই বড় স্কোরের দিকে এগিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের। জোসেফ আর অভিজ্ঞ ডটিন ২৭ বলে যোগ করেন ৬৩ রান!
৯ চার ও ২ ছক্কায় ৬৩ রান করে রাবেয়ার বলে স্টাম্পড হন জোসেফ। টি-টোয়েন্টিতে তার আগের সর্বোচ্চ ছিল ৫২।
লেগ স্পিনার ফাহিমা খাতুনকে চারটি ছক্কা মারেন ডটিন। এর মধ্যে তিনটি ছিল এক ওভারেই। পরে স্বর্ণা আক্তারকেও ছক্কা মেরে তিনি বিদায় নেন ফিফটি থেকে এক রান দূরে।
শেষ দিকে শাবিকা গাজনাবি ১২ বলে অপরাজিত ২৪ করে দুইশ পার করান দলকে।
টি-টোয়েন্টিতে এর চেয়ে বড় ইনিংস ওয়েস্ট ইন্ডিজের আর একটিই আছে। ২০২৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার ২১২ রান টপকে জয় পেয়েছিল তারা ম্যাথিউসের ৬৪ বলে ১৩২ রানের অসাধারণ ইনিংসে।
বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সামর্থ্য ছিল না এত বড় লক্ষ্য তাড়া করার। কিন্তু যতটুকু সামর্থ্য ছিল, এর ধারেকাছেও খেলতে পারলেন না কেউ।
চেরি-অ্যান ফ্রেজারকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সোবহানা মোস্তারির শূন্য রানে বিদায় দিয়ে শুরু। পরের ওভারেই জাইদা জেমসের বাঁহাতি স্পিনে স্টাম্পড হন তিনে নামা তাজ নেহার। ফ্রেজারের পরের ওভারে এলোমেলো শটে আউট হন দিলারা আক্তার।
রান যা করার, একটু করেন কেবল শারমনি আক্তার। তবে ফর্মে থাকা এই ব্যাটারও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি (২৫ বলে ২২)।
রানের প্রয়োজন যখন কেবর বাড়ছেই, অধিনায়ক নিগার তখন ১০ রান করতে খেলেন ১৯ বল। স্বর্ণা ফেরেন ১৬ রানে।
শেষ দিকে দুই রানের মধ্যে তিন উইকেট হারিয়ে একশ রানও করতে পারেনি বাংলাদেশ। ওয়ানডে সিরিজের পর তাই টি-টোয়েন্টিতেও সঙ্গী হলো সিরিজ হার।
সিরিজের শেষ ম্যাচ শনিবার বাংলাদেশ সময় ভোর চারটায়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ২০১/৬ (জোসেফ ৬৩, ম্যাথিউস ২৭, ক্যাম্পবেল ১১, ডটিন ৪৯, গ্লাসগো ১৪, শাবিকা ২৪*, ক্রাফটন ০, জাইদা ৮*; তৃষ্ণা ৩-০-৪৩-০, সুলতানা ৪-০-৪০-০, লতা ৩-০-২৬-০, রাবেয়া ৪-০-২৬-২, ফাহিমা ৪-০-৩৮-৩, স্বর্ণা ২-০-২৬-১)।
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ৯৫/৯ (দিলারা ৮, সোবহানা ০, তাজ ৫, শারমিন ২২, নিগার ১০, স্বর্ণা ১৬, ফাহিা ০, লতা ১৩, রাবেয়া ০, সুলতানা ০, তৃষ্ণা ১*; জাইদা ৪-০-১৭-১, ফ্রেজার ৩-০-১৫-২, ফ্লেচার ৪-০-২১-২, মুনিসার ৪-০-২০-১, ম্যাথিউস ২-০-৬-২, গ্লাসগো ২-০-৪-০, ক্রাফটন ১-০-২-০)।
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১০৬ রানে জয়ী।
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২-০তে এগিয়ে।
প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: কিয়ানা জোসেফ।