প্রথম দল হিসেবে বিপিএলে টানা আট জয় পেয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
Published : 07 Feb 2023, 09:50 PM
সপ্তাহের মাঝে কর্মদিবসেও দর্শকের ঢল শের-ই বাংলায়। কাগজে-কলমে বিপিএলের শক্তিশালী দুই দল ফরচুন বরিশাল ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের লড়াই বলেই হয়তো! মাঠে উপস্থিত প্রায় ১৫ হাজার দর্শককে চার-ছক্কায় মাতাতে পারেনি দুই দল। তবে অল্প রানেই জমিয়ে তোলে লড়াই। যেখানে জয়ের আনন্দ কুমিল্লার।
মিরপুরে মঙ্গলবার বরিশালের বিপক্ষে কুমিল্লার জয় ৫ উইকেটের ব্যবধানে। ১২২ রানের লক্ষ্যে ১৮.৩ ওভার খেলতে হয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের।
শেষ পর্যন্ত কুমিল্লার জয় দেখতে সহজ করেছেন আন্দ্রে রাসেল ও খুশদিল শাহ। ওপরের সারির ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার দিনে অবিচ্ছিন্ন ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে স্রেফ ২৬ বলে ৪৮ রান করে ম্যাচ শেষ করেই ড্রেসিংরুমে ফিরেছেন কুমিল্লার দুই বিদেশি ক্রিকেটার।
দুজনের জন্যই বিষয়টি অনেকটা 'এলাম, দেখলাম, জয় করলাম। আগের ম্যাচগুলি খেললেও পিসিবির নির্দেশনা অনুযায়ী দেশে চলে যান খুশদিল। দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটি খেলতে আবার ফিরেছেন তিনি। আর স্বদেশি সুনিল নারাইনকে নিয়ে সোমবার বাংলাদেশে এসেছেন রাসেল।
প্রথম ম্যাচেই নিজের সামর্থ্যের ছাপ রাখলেন ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার। বোলিংয়ে ১ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাট হাতে স্রেফ ১৬ বলে ৩০ রান করে জয় এনে দিলেন কুমিল্লাকে। তাকে সঙ্গ দেওয়া খুশদিল খেলেন ২৩ রানের ইনিংস।
টানা অষ্টম জয়ে বিপিএলে নতুন রেকর্ড গড়েছে কুমিল্লা। এর আগে আর কোনো দল টানা ৮টি ম্যাচ জিততে পারেনি।
এই জয়ে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে বরিশালকে টপকে দুইয়ে উঠে এসেছে কুমিল্লা। সমান পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থাকা সিলেটের চেয়ে নেট রান রেটে পিছিয়ে তারা। তবে রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে পরের ম্যাচ জিতলে নিশ্চিতভাবেই শীর্ষে দুইয়ে থেকে কোয়ালিফায়ার খেলবে তারা।
কুমিল্লার লক্ষ্যটা নাগালের মধ্যেই রাখার কারিগর মুকিদুল ইসলাম। বিপিএল ইতিহাসে বাংলাদেশি পেসারদের মধ্যে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড গড়ে স্রেফ ২৩ রানে ৫ উইকেট নেন এই তরুণ। এটি তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারেরই প্রথম ৫ উইকেট।
মুকিদুলের এমন বোলিংয়ের পরও অবশ্য ব্যাটিংয়ে তালগোল পাকিয়ে জয়কে দূরের বাতিঘরে বানিয়ে ফেলেন কুমিল্লার ব্যাটসম্যানরা। ঝড়ো শুরুর আভাস দিয়ে একটি করে চার-ছয়ে ৬ বলে ১১ রান করে ফিরে যান মোহাম্মদ রিজওয়ান।
তিন নম্বরে নামার সুযোগ পেয়ে কাজে লাগাতে ব্যর্থ জাকের আলি। ১ ছয়ে ১০ রান করতে ১৬ বল খেলেন তিনি। চোট কাটিয়ে ফেরা লিটন দাস এদিন ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। সহজাত স্ট্রোকপ্লের দেখা তো মেলেইনি, স্বাভাবিক ব্যাটিংটাও করতে পারছিলেন না স্টাইলিশ ওপেনার।
উইকেটে তার অস্বস্তিকর সময়ের সমাপ্তি ঘটে ইবাদত হোসেনের বলে চতুরাঙ্গা ডি সিলভার দারুণ ক্যাচে। ৩৯ বল খেলে ৫ চারে ৩৬ রান করেন লিটন।
তার আগেই অবশ্য ড্রেসিংরুমের পথ ধরে ইমরুল কায়েস (১০ বলে ৫) ও মোসাদ্দেক হোসেন (৫ বলে ১)। পরে লিটনও আউট হয়ে গেলে শেষ ৫ উইকেটে ৩৫ বলে ৪৮ রানের সমীকরণের সামনে পড়ে কুমিল্লা।
তবে এটিকে বড় হতে দেননি রাসেল ও খুশদিল। মোহাম্মদ ওয়াসিমের করা ১৬তম ওভারে তিন চারে ১৩ রান নেন দুজন। পরের ওভারে খালেদ আহমেদ একটি করে চার-ছয়ে দেন ১১ রান।
তিন ওভারে ২৩ রানের সমীকরণে নিজের কোটার শেষ করে বল হাতে নেন সাকিব আল হাসান। প্রথম দুই বল দারুণ করলেও পরের দুই বলে ছক্কা মেরে ম্যাচ হাতের মুঠোয় নিয়ে নেন রাসেল। নিজের প্রথম তিন ওভারে স্রেফ ৪ রান দেওয়া বরিশাল অধিনায়ক শেষ ওভারে দেন ১৭ রান।
পরে ওয়াসিমের ওভারে লং অফ দিয়ে ছক্কা মেরে ম্যাচ শেষ করেন ক্যারিবিয়ান তারকা।
ম্যাচে বরিশালের শুরুটাও ছিল হতাশাময়। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকে নিয়মিত উইকেট হারায় তারা। দ্বিতীয় ওভারে তানভির ইসলামের বলে কট বিহাইন্ড হন এনামুল হক (৬ বলে ৩)। এক ওভার পর সুনিল নারাইনের দারুণ ফিল্ডিংয়ে রান আউট আরেক ওপেনার ফজলে মাহমুদ (৮ বলে)।
আগের ম্যাচগুলোতে নিচের দিকে ব্যাটিং করা মাহমুদউল্লাহকে এই ম্যাচে দেখা যায় তিন নম্বরে। শুরুতে আড়ষ্ট থাকলেও পরে দারুণ কিছু শটে পুষিয়ে নেওয়ার আভাস দেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। তবে অপরপ্রান্তে সমর্থন পাননি তেমন।
সপ্তম ওভারে প্রথমবার আক্রমণে এসেই ফর্মে থাকা সাকিবকে ফেরান মুকিদুল। ১২ বলে স্রেফ ৬ রান করেন বরিশাল অধিনায়ক।
পাকিস্তানে চলে গিয়েও এই ম্যাচ খেলতে ফিরে আসা ইফতিখার আহমেদও পারেননি বড় কিছু করতে। রাসেলের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ড্রেসিংরুমের পথ ধরেন ৮ বলে ৪ রান করা মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান।
দায়িত্ব গিয়ে পড়ে মাহমুদউল্লাহর কাঁধে। তবে সেটি পুরোপুরি পালন করতে পারেননি তিনি। দশম ওভারে মুকিদুলের বলে ব্যাটের ভেতরের কানায় লেগে বোল্ড হয়ে ধরেন ড্রেসিংরুমের পথ। ৩ চার ও ১ ছয়ে ২৬ বলে করেন ৩৬ রান।
ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে চাপ সামাল দেন করিম জানাত ও মেহেদী হাসান মিরাজ। দুজন মিলে যোগ করেন ৪৭ রান। মিরাজ ১টি করে চার-ছয়ে করেন ১৮ বলে ১৭ রান। জানাত ৪ চার ও ১ ছয়ে ২৬ বলে খেলেন ৩২ রানের ইনিংস।
শেষ দিকে বরিশাল ইনিংসে ফের ছোবল দেন মুকিদুল। তার দারুণ বোলিংয়ে স্রেফ ১০ রানে শেষের ৫ উইকেট হারিয়ে ৫ বল আগেই অলআউট হয় বরিশাল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ফরচুন বরিশাল: ১৯.১ ওভারে ১২১ (এনামুল ৩, ফজলে ৮, মাহমুদউল্লাহ ৩৬, সাকিব ৬, ইফতিখার ৪, মিরাজ ১৭, জানাত ৩২, চতুরাঙ্গা ২, ওয়াসিম ০, খালেদ ১, ইবাদত ১*; রাসেল ৪-০-৩০-১, তানভির ৪-০-২৯-১, নারাইন ৪-০-১৯-০, মুস্তাফিজ ৪-০-১৯-১, মুকিদুল ৩.১-০-২৩-৫)
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ১৮.৩ ওভারে ১২২/৫ (রিজওয়ান ১১, লিটন ৩৬, জাকের ১০, ইমরুল ৫, মোসাদ্দেক ১, খুশদিল ২৩* রাসেল ৩০*; ইবাদত ৪-০-১৮-২, ওয়াসিম ৩.৩-০-৩৭-১, সাকিব ৪-১-২১-১, চতুরাঙ্গা ২-০-১৪-০, মিরাজ ১-০-৮-০, খালেদ ৪-০-২৩-১)
ফল: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মুকিদুল ইসলাম