ভারতের কারণেই সেমি-ফাইনালের আগে দুবাইয়ে গিয়ে আবার পকিস্তানে ফিরে আসার বাড়তি ঝক্কি পোহাতে হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা দলকে, সেই বিরক্তি লুকালেন না অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান।
Published : 06 Mar 2025, 11:34 AM
এই প্রশ্নগুলোতে সবাই সাধারণত একটু রাখঢাক রাখেন বা কূটনীতির আশ্রয় নেন। সেখানে ভারতের নাম জড়িয়ে থাকলেও আরও সর্তক থাকেন সবাই। কিন্তু ডেভিড মিলার এতটাই বিরক্ত যে, সেসবের কোনো ধারই ধারলেন না। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যান অকপটেই বলে দিলেন, “আমি সৎ উত্তরই দেব, আমার ধারণা (ফাইনালে) আমি নিউ জিল্যান্ডকে সমর্থন দেব।”
মিলার যখন কথাটি বলছেন, এর একটু আগেই নিউ জিল্যান্ডের কাছে সেমি-ফাইনালে হেরে ছিটকে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। হতাশা আর তিক্ততার রেশ তখনও থাকার কথা। ভারতের সঙ্গে মিলারের সম্পর্কও বেশ পুরোনো ও ঘনিষ্ঠ। অনেক বছর ধরেই আইপিএলে তিনি নিয়মিত মুখ ও সেখানে বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু এবার সেমি-ফাইনালের আগে ভারতের কারণে বাড়তি ভ্রমণের যে ঝক্কি পোহাতে হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা দলকে, সেই ক্ষোভই তীব্র হয়ে ফুটে উঠেছে মিলারের প্রতিক্রিয়ায়।
হাইব্রিড মডেলের এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অনেক কিছুই এবার ছিল ব্যতিক্রম। ভারত যেহেতু সব ম্যাচ দুবাইয়েই খেলছে, অন্য দলগুলির ওপর বাড়তি ভ্রমণ ও নতুন ভেন্যুতে খেলার ঝামেলা চেপে বসেছে। স্বাগতিক পাকিস্তানকে পর্যন্ত ভারতের ম্যাচ খেলতে যেতে হয়েছে দুবাইয়ে।
সেমি-ফাইনালের আগে এই সমস্যায় অভিনব এক উদ্যোগ নেয় আইসিসি। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ভারত ও নিউ জিল্যান্ড যখন দুবাইয়ে মুখোমুখি হচ্ছে, তখনও নিশ্চিত হয়নি, সেমি-ফাইনালে দুবাইয়ে ভারতের প্রতিপক্ষ হবে কোন দল। অন্য গ্রুপের সেমি-ফাইনালে ওঠা দুই দলকেই তাই দুবাইয়ে নিয়ে গিয়ে অপেক্ষায় রাখে আইসিসি। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা যে দলই দুবাইয়ে সেমি-ফাইনালে খেলুক, তারা যেন সেই ভেন্যুতে প্রস্তুতির বাড়তি একদিন সময় পায়।
শেষ পর্যন্ত গ্রুপের শেষ ম্যাচটি জিতে ভারত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় ও সেমি-ফাইনালে প্রতিপক্ষ হিসেবে পায় অস্ট্রেলিয়াকে। করাচি থেকে দুবাইয়ে উড়ে যাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা আবার সেখান থেকে ফিরে আসে লাহোরে।
দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে বুধবার নিউ জিল্যান্ডের কাছে ৫০ রানে হেরে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ৬৭ বলে সেঞ্চুরি করে অপরাজিত থাকেন মিলার। তবে এতে শুধু পরাজয়ের ব্যবধানই কমেছে। ৩৬৩ রান তাড়ায় প্রোটিয়াদের হার নিশ্চিত হয়ে যায় অনেক আগেই।
ম্যাচের পর মিলার বললেন, ওই ভ্রমণ তাদের জন্য বাড়তি ঝামেলা হয়েই এসেছে।
“যদিও স্রেফ এক ঘণ্টা ৪০ মিনিটের ফ্লাইট, তার পরও তো সেটা আমাদেরকে করতে হয়েছে। একটি ম্যাচ শেষে ভোরে আমাদেরকে রওনা দিতে হয়েছে। বিকেল ৪টায় আমরা দুবাইয়ে গিয়েছি। পরদিন সকাল সাড়ে সাতটায় আবার ফিরে আসতে হয়েছে (পাকিস্তানে)।”
“এসব কখনোই ভালো লাগার মতো কিছু নয়। এমন নয় যে ৫ ঘণ্টার ফ্লাইট ছিল। রিকভারি ও তাজা হয়ে ওঠার যথেষ্ট সময় ছিল। তবে অবশ্যই পরিস্থিতি আদর্শ কিছু ছিল না।”
এটিকে অবশ্য অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাতে চান না মিলার। পরাজয়ের জন্য নিজেদের ব্যাটিং ব্যর্থতাকে দায় দেওয়ার পাশাপাশি অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান বললেন উইকেটের কথাও।
“(রান তাড়ায়) টপ অর্ডার থেকে ভালো কিছু অবদান ছিল। গোটা দুই ফিফটি ছিল টপ অর্ডারে। বেশ শক্ত ভিত পেয়েছিলাম আমরা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, মাঝের ওভারগুলোয় আমরা দুটি উইকেট বেশি হারিয় ফেলি। দিনশেষে, এটা দলীয় প্রচেষ্টা। সবাই নিজের সেরাটাই চেষ্টা করে।”
“উইকেট যতই ভালো হোক, ৩৬০ রান তাড়া করা সহজ নয় কখনোই। রাতে শিশিরও পড়েনি। খেলা যত গড়িয়েছে, উইকেটের অবস্থা বরং একটু খারাপই হয়েছে। আমাদের ব্যাটিংয়ের সময় বল টার্ন করেছে বেশি। আমাদের চেয়ে একটু বেশি সহায়তা ওরা পেয়েছে উইকেট থেকে।”
ফাইনালে সমর্থন নিউ জিল্যান্ডের প্রতি থাকলেও জমজমাট একটি ম্যাচ হবে বলে আশা মিলারের।
“দুটি দলই অবিশ্বাস্যরকমের ভালো। ভারত গোটা দুনিয়াকেই দেখিয়েছে, তারা কতটা ভালো। অনেক বছর ধরেই তারা ভালো ক্রিকেট খেলছে এবং দারুণ কিছু ক্রিকেটার তাদের আছে। দুর্দান্ত এক ম্যাচ হতে যাচ্ছে।”