চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে দুবাইয়ে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচ ব্যাটিং-বোলিং কিছুই ভালো হলো না বাংলাদেশের।
Published : 17 Feb 2025, 06:36 PM
লক্ষ্য আকাশ ছোঁয়ার। দেশ ছাড়ার আগে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বলে গেছেন, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হতে চায় বাংলাদেশ। তবে প্রস্তুতি ম্যাচের পারফরম্যান্স যেন বাস্তবতার জমিনে নামিয়ে আনল বাংলাদেশ দলকে। ব্যাটে-বলে ব্যর্থতায় পাকিস্তান 'এ' দলের সামনেই যে দাঁড়াতে পারলেন না শান্তরা!
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে দুবাইয়ে পাকিস্তান শাহিনসের (‘এ’ দল) কাছে ৭ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ।
গা গরমের ম্যাচে এমনিতে জয়-পরাজয় মুখ্য নয় কখনোই। কিন্তু ব্যাটে-বলে নিজেদের ঝালিয়ে নেওয়ার কাজটিই যে ঠিকঠাক করতে পারলেন না কেউ!
ফিফটি স্পর্শ করতে পারেননি দলের একজন ব্যাটসম্যানও। সর্বোচ্চ ৪৪ রান এসেছে মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাট থেকে। এই অলরাউন্ডার ব্যাট করেছেন চার নম্বরে। মূল টুর্নামেন্টে তার ব্যাটিং অর্ডারের সম্ভাব্য ধারণাও মিলছে এটি থেকে।
পরে শেষের দিকের ব্যাটসম্যানদের সৌজন্যে টেনেটুনে ২০০ ছুঁতে পারে দল। তার পরও মাত্র ৩৮.২ ওভারেই বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২০২ রানে।
এরপর বোলিংয়েও কেউ পারেননি দারুণ কিছু করতে। পাকিস্তানিরা ম্যাচ শেষ করে দেয় ১৫ ওভারের বেশি বাকি রেখে।
প্রস্তুতি ম্যাচে ব্যাটিং-বোলিং করার সুযোগ আছে সবারই। তবে ব্যাট করেননি পারভেজ হোসেন ইমন ও মাহমুদউল্লাহ। বোলিংয়ে অবশ্য হাত ঘোরান স্কোয়াডে থাকা সবাই।
দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে সোমবার দিন-রাতের ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। প্রথম ধাক্কা আসে ম্যাচের প্রথম ওভারেই। প্রথম দুই বলে ছয় রান করা ওপেনার তানজিদ হাসান বিদায় নেন তৃতীয় বলেই।
সৌম্য সরকার ও নাজমুল হোসেন শান্ত শুরুর ধাক্কা সামাল দিতে পেরেছেন বলেই মনে হচ্ছিল। এই দুজনের জুটিতে অষ্টম ওভারে পঞ্চাশে পৌঁছে যায় দল। কিন্তু কেউই টিকতে পারেননি লম্বা সময়।
অধিনায়ক শান্ত ফেরেন ২১ বলে ১২ রান করে। একটু পরই সৌম্য রান আউট হন ৩৮ বলে ৩৫ রান করে।
৬৩ রানে ৩ উইকেট হারানো দলকে এরপর এগিয়ে নেন মিরাজ ও তাওহিদ হৃদয়। ইনিংসের একমাত্র অর্ধশত রানের জুটি গড়েন দুজন। তবে মিডল অর্ডারে ছোবল দিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড ভেঙে দেন উসামা মির।
হৃদয় আউট হন ৩৩ বলে ২০ রান করে। মিরাজের সঙ্গে তার জুটি থামে ৫৬ রানে।
একটু পর মুশফিকুর রহিম স্টাম্পড হন ১৪ বলে ৭ রান করে। মিরাজ বিদায় নেন ৫৩ বলে ৪৪ করে। জাকের আলি খেলতে পারেন কেবল ৫ বল (৪ রান)।
১৮ রানের মধ্যে চার উইকেট হারিয়ে শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের বড় স্কোরের আশা। চারটি উইকেটই নেন উসামা।
পরের দিকের ব্যাটসম্যানরা লড়াই করে দলকে কোনোরকমে দুইশ পার করান। ৯ নম্বরে নেমে ২৭ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলেন তানজিম হাসান। কিছু অবদান রাখেন রিশাদ হোসেন (১৪) ও নাসুম আহমেদও (১৫)।
বাংলাদেশ ভুগেছে পাকিস্তানের স্পিনে। লেগ স্পিনার উসামা মির নিয়েছেন চার উইকেট, বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার সুফিয়ান মুকিম ও অফ স্পিনার মুবাসির খান নিয়েছেন একটি করে। উসামা পাকিস্তানের হয়ে ওয়ানডে খেলেছেন ১২টি। মুকিম কিছুদিন আগে অভিষেক ওয়ানডেতে চার উইকেট নিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে।
এই পুঁজি নিয়ে বোলিংয়ের শুরুটা খারাপ ছিল না বাংলাদেশের। ৩৭ রানের মধ্যে বিদায় নেন পাকিস্তানের ওপেনার সাহিবজাদা ফারহান ও তিনে নামা ওমাইর বিন ইউসুফ। ২৮ বলে ২৩ রান করে সাহিবজাদা আউট হন নাহিদ রানার বলে। ওমারইকে (১) শুরুতেই থামান মিরাজ।
তৃতীয় উইকেটে আজান আওয়াইস ও মোহাম্মদ হারিস কিছুটা সামাল দেন পরিস্থিতি। এই জুটি ৩২ রানে ভাঙেন তানজিম হাসান। তরুণ আজান ফেরেন ২০ রানে।
পরের জুটিতেই ম্যাচ প্রায় শেষ করে দেয় পাকিস্তান। হারিস ও মুবাসির খানকে আউট করতে পারেননি বাংলাদেশের কোনো বোলার।
কিছুদিন আগে বিপিএলে দুর্বার রাজশাহীর হয়ে ম্যাচের পর ম্যাচে ব্যর্থ হওয়া হারিস এ দিন খেলেন ম্যাচ জেতানো ইনিংস। ৭ চার ও ৩ ছক্কায় ৭২ বলে ৭৫ রান করে তিনি ক্রিজ ছেড়ে যান জয়ের খুব কাছে গিয়ে। ৬ চার ও ৩ ছক্কায় ৫৪ বলে ৬৩ করে অপরাজিত থাকেন মুবাসির।
নাহিদ রানাকে দুই ওভারের বেশি বোলিং করাননি অধিনায়ক শান্ত। তাসকিন-মুস্তাফিজরা বোলিং করেন ৫ ওভার করে। নাসুম আহমেদ ছিলেন বেশ খরুচে।
প্রস্তুতি ম্যাচ শেষে এখন মূল লড়াইয়ের অপেক্ষা। বৃহস্পতিবার ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করবে বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৩৮.২ ওভারে ২০২ (তানজিদ ৬, সৌম্য ৩৫, শান্ত ১২, মিরাজ ৪৪, হৃদয় ২০, মুশফিক ৭, জাকের ৪, রিশাদ ১৪, তানজিম ৩০, নাসুম ১৫, তাসকিন ৪*; আলি রাজা ৫-০-৪০-১, ওয়াসিম জুনিয়র ৭-০-২৭-০, মুসা খান ৪-০-১৬-১, মুবাসির খান ৭-১-৪২-২, সুফিয়ান মুকিম ৫.২-০-৩২-১, উসামা মির ১০-০-৪৩-৪)।
পাকিস্তান শাহিনস: ৩৪.৫ ওভারে ২০৬/৩ (সাহিবজাদা ২৩, আজান ৩১, ওমাইর ১, হারিস (আহত অবসর) ৭৬, মুবাসির ৬৩*, সামাদ ১*; তাসকিন ৫-১-২৭-০, মুস্তাফিজ ৫-০-২০-০, মিরাজ ৬-০-৩৯-১, নাহিদ ২-০-১১-১, তানজিম ৪-০-১৫-১, রিশাদ ৫-১-১৫-০, নাসুম ৫.৫-০-৫৬-০, সৌম্য ২-০-১৭-০)।