প্রায় ১৬ বছর ধরে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলে নানা পরিবর্তন ও বিকাশের স্বাক্ষী রোহিত শর্মা। এখন তিনি আরেকটি বড় বদলের জোয়ার দেখতে পাচ্ছেন। ২০ ওভারের ক্রিকেটে ব্যাটিংয়ে নেমে ধরে খেলার কোনো সুযোগ দেখেন না ভারত ও মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক। আইপিএলের সফলতম অধিনায়কের মতে, শুরুতে বিপর্যয় বা বিশেষ পরিস্থিতির সৃষ্টি না হলে ‘অ্যাংকর’ ভূমিকার কোনো জায়গা এই সময়ের টি-টোয়েন্টিতে নেই।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির পাশাপাশি একের পর এক ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের এই যুগে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নতুন নতুন ধারণার প্রয়োগ দেখা যাচ্ছে নিত্যই। অনেকগুলো সফলও হচ্ছে। ধরে খেলে ইনিংস গড়ার ধারণাও যেমন এখন বদলে গেছে, জিও সিনেমার সঙ্গে আলাপচারিতায় বললেন রোহিত।
“আমি যা দেখছি, তাতে অ্যাংকরের কোনো ভূমিকা এখন আর নেই। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট এখন এভাবেই খেলা হচ্ছে। যদি না আপনার দলের রান থাকে ৩ উইকেটে বা ৪ উইকেটে ২০… সেটা তো আর সবদিন হয় না। কখনও কখনও অমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়, তখন কারও ইনিংস অ্যাংকর করে ভালো স্কোরে নিয়ে শেষ করতে হয়। কিন্তু এমনিতে এখন অ্যাংকর বলে কিছুর জায়গা নেই। সবাই এখন ভিন্নভাবে খেলছে।”
রোহিতের মতে, সময়ের এই দাবির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে না পারলে পিছিয়ে পড়তে হবে প্রবলভাবে।
“মানসিকতায় বদল না আনতে পারলে আপনাকে স্রেফ উড়ে যেতে হবে। অন্য পক্ষের মানুষগুলো এখন খেলাটাকে নিয়ে ভিন্নভাবে ভাবছে এবং এটিকে তারা অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে।”
“সাত ব্যাটসম্যানের সবাকেই ভূমিকা রাখতে হবে। ভালো একটি স্কোর গড়তে পারলে তো অবশ্যই ভালো। তবে যদি ১০-১৫ বা ২০ বলে ৩০-৪০ রান করা যায়, সেটিও ভালো। কারণ দলে নিজের ভূমিকাটা পালন করা হচ্ছে। খেলাটা এখন বদলে গেছে।”
রোহিত নিজেও এখন এই স্রোতে সামিল হয়েছেন বলে জানালেন। ইনিংসের শুরুতেই শূন্য রানে আউট হয়ে যাওয়া দুটি ম্যাচের উদাহরণ দিলেন তিনি, একটিতে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে গিয়ে আউট হয়েছেন, আরেকটি স্কুপ করতে গিয়ে। এছাড়াও আরেক ম্যাচেও আউট হয়েছেন ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে গিয়ে। এভাবে আগ্রাসনের চেষ্টায় ব্যর্থ হলেও তার আক্ষেপ নেই।
“আমি এখন এভাবেই খেলতে চাই এবং দেখতে চাই, কতটা পারি। এই সংস্করণে আমি অনেক বছর ধরে খেলেছি এবং নির্দিষ্ট একটি ঘরানায় খেলেছি। এখন ভিন্ন কিছু করতে চাই। যেটা করতে গিয়ে আউট হলেও তা আমি পাত্তা দেই না।”
“যদি খেয়াল করে থাকেন, চেন্নাইয়ে এবং মোহালিতে শূন্য রানে আউট হয়েছি (শট খেলে)। বেঙ্গালোরের বিপক্ষে আরেক ম্যাচে প্রথম বলেই ক্রিজ ছেড়ে বের হয়েছি। তিন ম্যাচের সবকটিতেই ব্যর্থ হয়েছি, কিন্তু সমস্যা সেই। আমি এটিই চেষ্টা করে যাব।”
আগ্রাসন ও বড় শটের চেষ্টায় পেশি শক্তিকেই সবকিছু বলে মনে করেন না রোহিত। তার মতে, টাইমিং ঠিকঠাক হলেও ছক্কার পর ছক্কা মারা সম্ভব।
“আমি জানি যে টিম ডেভিড, কাইরন পোলার্ড ও ক্যামেরন গ্রিনের মতো শক্তি আমার নেই। ওরা পাওয়ারফুল হিটার, সহজেই ১০০ মিটার লম্বা শট খেলতে পারে। কিন্তু আমার কথা হলো, ৬৫-৭০ মিটার লম্বা মারলেই তো ছক্কা হচ্ছে। ৮০ মিটার মারলেই যেখানে কাজ হচ্ছে, আমাকে ১০০ মিটার কেন মারতে হবে? ৮ রান পেলে নাহয় ১০০ মিটার মারার চেষ্টা করতাম।”
“আমি ৮০ মিটারই মারতে চাই, কারণ এতেই ৬ রান পাচ্ছি। এটির জন্য আমার প্রয়োজন, টাইমিং ঠিকঠাক করা। অন্যদের মতো পেশির জোর আমার দরকার নেই। এটিই (টাইমিং) আমার শক্তির জায়গা। আমার শক্তির জায়গা হলো মাঝব্যাটে বল লাগানো, যেটিকে আমরা বলি 'সুইট স্পট।' সূর্যর (সূর্যকুমার যাদব) দিকে তাকান, সে তো বিশাল সব শট খেলছ না। সেও ১০০ মিটার লম্বা মারতে পারে। তবে সে ভাবছে আমার মতো করেই।”