৬০০ উইকেট ‘নট আ ম্যাটার অব জোক’

দিনের খেলা তখন শেষ। ড্রেসিং রুম থেকে বেরিয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলছিলেন, “কী আর এমন করেছি ভাই…!” তার মুখে তখন হাসি, বলছিলেন মজা করেই। নিজেও তো জানেন, তার কীর্তি কত বড়। পরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ইতিহাস গড়ার নায়ক বললেন তার তৃপ্তির কথা, গর্বের কথা। ৬০০ উইকেট, চাট্টিখানি কথা নয়!

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Nov 2019, 01:56 PM
Updated : 2 Nov 2019, 04:19 PM

বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে এই মাইলফলকে পা রেখেছেন রাজ্জাক। শনিবার জাতীয় লিগের ম্যাচে মিরপুরে খুলনার হয়ে রংপুরের বিপক্ষে ৭ উইকেট নেওয়ার পথে অসাধারণ এই অর্জন ধরা দিয়েছে ৩৭ বছর বয়সী স্পিনারের গৌরবময় পথচলায়। 

বিশ্ব ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটে অবশ্য ৬০০ এমন কিছু নয়। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৪ হাজারের বেশি উইকেট আছে উইলফ্রেড রোডসের। ২ হাজারের বেশি উইকেট আছে আরও ৩২ জনের। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাস খুব পুরোনো নয়, তাই রেকর্ডও তত সমৃদ্ধ নয়।

কয়েক বছর আগেও জাতীয় দল থেকে ছিটকে গেলে ঘরোয়া ক্রিকেটে লম্বা সময় খেলা হতো না অনেকের। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ক্যারিয়ার দীর্ঘায়িত হতো না খুব বেশি। রাজ্জাক, তুষার ইমরান, এনামুল হক জুনিয়র, মোহাম্মদ শরীফদের মতো কয়েক জনের হাত ধরে বদলেছে সংস্কৃতি। তাই রেকর্ডের পাতায়ও পোক্ত হচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটারেদের জায়গা।

৬০০ ছোঁয়ার দিনে রাজ্জাকের কণ্ঠেও উঠে এলো সেসব বাস্তবতা।

“এই অর্জনে আমি খুবই খুশি। ৬০০ উইকেট, আই মাস্ট সে, ইটস নট অ্যা ম্যাটার অব জোক। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে অনেক উইকেট। হয়তো অন্যান্য দেশে অনেকে অনেক ম্যাচ খেলেছে, অনেক অর্জন আছে। কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এখনও পর্যন্ত কেউ করেনি। পরে করতে হলেও, এখন যারা আছে, তারাও যদি করতে চান, অনেক সময় লাগবে।”

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বাংলাদেশের অনেক প্রথমের জন্ম রাজ্জাকের হাত ধরে। ৫০০ উইকেটেও তিনি ছিলেন প্রথম। সবচেয়ে বেশিবার ইনিংসে ৫ উইকেট (৩৯ বার) ও ম্যাচে ১০ উইকেট (১০ বার) নেওয়ার কীর্তিও তার।

৫০০ বা ৬০০ উইকেট একসময় বাংলাদেশের বোলারদের জন্য ছিল স্বপ্নের সীমানার বাইরে। রাজ্জাক সেসবকেই বাস্তবে রূপ দিচ্ছেন। অনেক প্রতিবন্ধকতা ও সীমাবদ্ধতা থাকলেও হার না মানা মানসিকতায় এগিয়ে চলেছেন। রেকর্ডের পথে পথ প্রদর্শক হওয়াটাই বড় তৃপ্তি দিচ্ছে তাকে।

“আমি অনেক ভাগ্যবান যে রেকর্ডগুলো আমার মাধ্যমে হচ্ছে। কেউ না কেউ তো করতোই। আমি করতে পারছি, এজন্য নিজেকে ভাগ্যবান বলব। এই পর্যায়ে আসতে হলে কিছু স্কিল তো থাকতেই হয়। হয়তো আমার অতো বেশি স্কিল নেই, তবে যতটুকু যা আছে, আমার চেষ্টার ত্রুটি থাকে না। এটিই আমার বড় স্কিল। এখনও মাঠে নামলে, খেলা ছাড়া অন্য কিছু থাকে না মাথায়।”

“৫০০-৬০০ উইকেট, একসময় চিন্তাও করিনি। যেটা বললাম আগে, উইকেট হিসেব করলে অনেক অনেক বড় ব্যাপার বাংলাদেশের জন্য। আমাদের দেশে ২০০-৩০০ উইকেট নেওয়া বোলারই খুব বেশি নেই। অবশ্যই একসময় কেউ আমার চেয়ে বেশি করবে। আমাকে দিয়েই প্রথম হচ্ছে, আমি তাতে অনেক বেশি ভালো অনুভব করছি।”

গত বছরের জানুয়ারিতে রাজ্জাক পূর্ণ করেছিলেন অর্ধসহস্র উইকেট। পরে একশ উইকেটের জন্য লাগল আর কেবল ১৯ ম্যাচ। সবশেষ ৭ মৌসুমেই নিয়েছেন ৪০টির বেশি করে উইকেট। চলতি মৌসুমে কেবল চতুর্থ ম্যাচ চলছে, ২০ উইকেট হয়ে গেছে এর মধ্যেই। ক্যারিয়ার শেষ হতে হতে নিজেকে কোন উচ্চতায় তুলবেন? রাজ্জাক সেই ভাবনা পাশে রেখে কেবলই এগিয়ে যেতে চান।

“আমি বলতে পারব না আসলে কোন পর্যায়ে থাকতে চাই, কিংবা থাকতে পারব। কখন শেষ হবে (ক্যারিয়ার), এটাও আমি জানি না। খেলছি যতক্ষণ ভালো লাগে। আগেই বলেছি যে ফিটনেস যতক্ষণ ঠিক থাকবে আর মন থেকে যতক্ষণ চাইবে, ততদিন চেষ্টা করব খেলার।”