উদ্ভাসিত জয়ে বাংলাদেশের শুরু

পেছনে আইরিশদের ‘এ’ দলের কাছে হারের স্মৃতি। সঙ্গী আইরিশ কন্ডিশনের ছোবল। সামনে উড়ন্ত জয়ে শুরু করা ক্যারিবিয়ানদের দাপট। চ্যালেঞ্জ ছিল অনেক। ম্যাচের আগে মাশরাফি বিন মুর্তজা বললেন, মনের জোর আছে না! যেমন কথা, তেমন কাজ। ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া স্পেলে অধিনায়কই দেখালেন পথ। অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সাকিব আল হাসান সহজ করে দিলেন পথচলা। তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকারের রেকর্ড জুটি দলকে এগিয়ে নিল জয়ের সীমানায়। সব বাঁধা গুঁড়িয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে দিল বাংলাদেশ।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিডাবলিন থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 May 2019, 01:49 PM
Updated : 7 May 2019, 10:59 PM

দুর্দান্ত জয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজ শুরু করল বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে আইরিশদের বড় ব্যবধানে হারানো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে মাশরাফির দল হারিয়েছে ৮ উইকেটে।

ডাবলিনের ক্লনটার্ফ ক্রিকেট মাঠে মঙ্গলবার ক্যারিবিয়ানদের ২৬১ রানে আটকে রেখে বাংলাদেশ জিতেছে ৫ ওভার বাকি রেখেই।

শুধু জয় বা জয়ের ব্যবধানই নয়, এই ম্যাচের প্রাপ্তি ব্যাটে-বলের পারফরম্যান্স ও শরীরী ভাষার দাপটও। আয়ারল্যান্ড সফর দিয়ে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ অভিযানের পথে হলো আত্মবিশ্বাসী শুরু।

ম্যাচের শুরুটা যদিও ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। এক সময় তারা ছিল বড় স্কোরের পথে। কিন্তু শেষ স্পেলে দুই ওভারে মাশরাফির তিন উইকেট বদলে দিল ইনিংসের চিত্র। নাগালের মধ্যে থাকা রান তাড়াটা অনায়াস করে তুলল তামিম ও সৌম্যর উদ্বোধনী জুটি। দারুণ বোলিং, দুর্দান্ত ব্যাটিং আর অসাধারণ ক্যাচিং মিলিয়ে সাকিব বুঝিয়ে দিলেন, কেন তিনি মহামূল্য।

অথচ শুরুতে হোপের ব্যাট আশা দেখাচ্ছিল ক্যারিবিয়ানদের। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ওপেনার উপহার দেন টানা দ্বিতীয় ও বাংলাদেশের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক সেঞ্চুরি। কিন্তু তাকে আড়াল করেই বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে দাপুটে জয়ের পথে।

আগের ম্যাচে জুটির বিশ্বরেকর্ডে শুরু করা ক্যারিবিয়ানদের সূচনা এ দিনও হয় দারুণ। তবে এবার হোপের সঙ্গী ছিলেন সুনিল আমব্রিস। আগের ম্যাচে ১৭৯ রান করা জন ক্যাম্পবেল খেলতে পারেননি পিঠের সমস্যায়।

বাংলাদেশ উইকেট পেতে পারত ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই। মাশরাফির ওভারে দুইবার জোরালো আবেদন থেকে বেঁচে যান আমব্রিস। মাশরাফির বলেই আবার বেঁচে যান তিনি ৫ রানে ক্যাচ মতো উঠিয়ে। তবে থিতু হওয়ার পর কিছুটা ফিরে পান আত্মবিশ্বাস।

হোপ শুরু থেকেই ছিলেন স্বচ্ছন্দ। গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সফরে শেষ দুই ওয়ানডেতে করেছিলেন অপরাজিত ১৪৬ ও অপরাজিত ১০৮। এই টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে আইরিশদের বিপক্ষে করেছেন ১৭০। এই ম্যাচে শুরু করেন যেন সেখান থেকেই।

৮৯ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এই অফ স্পিনারের প্রথম ওভারে মাহমুদউল্লাহর দারুণ ক্যাচে ফেরেন ৩৮ রান করা আমব্রিস। পরের ওভারে ড্যারেন ব্রাভোকে ফেরান সাকিব।

মিরাজ ও সাকিবের দারুণ বোলিং অনেকটাই দমিয়ে রাখে ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানদের। ২০ রানে রোস্টন চেইসকে ফেরানোর সুযোগও এসেছিল। কিন্তু সাকিবের বলে ক্যাচ ছাড়েন মুশফিক। ৫৩ রানে মিরাজের বলে আউট হতে হতে বেঁচে যান হোপও। সময়ের সঙ্গে মানিয়ে দুজনই এগিয়ে নেন দলকে। গড়ে ওঠে শতরানের জুটি।

১২৬ বলে ষষ্ঠ ওয়ানডে সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন হোপ। ইনিংসের পথে দ্রুততম ক্যারিবিয়ান হিসেবে স্পর্শ করেন ২ হাজার ওয়ানডে রান (৪৭ ইনিংস)। চেইস পান প্রথম ওয়ানডে ফিফটি। তিনশ রান তখন মনে হচ্ছিল খুবই সম্ভব। তা হতে দেননি মাশরাফি।

৫১ রানে চেইসকে ফিরিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক ভাঙেন ১১৫ রানের জুটি। নিজের শেষ ওভারে ফিরিয়ে দেন সেঞ্চুরিয়ান হোপ ও বিপজ্জনক জেসন হোল্ডারকেও। পথ হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস।

মাশরাফির স্পেল শেষে পুরোনো বলে দারুণ বোলিং করেছেন সাইফ উদ্দিনও। তবে একদমই নিষ্প্রভ ছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। শেষ দিকে দুটি উইকেট যদিও পেয়েছেন,যার একটি সীমানায় সাকিবের অসাধারণ ক্যাচে। তবে বাঁহাতি পেসার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রান বিলিয়েছেন অকাতরে। চোট কাটিয়ে এক মাস পর ম্যাচ খেলেছেন; হতে পারে সে কারণেই ছিলেন ছন্দহীন।

তবে মুস্তাফিজের কারণে খুব বেশি ভুগতে হয়নি দলকে। বাকি বোলাররা নিশ্চিত করেছেন লক্ষ্য থাকছে নাগালেই।

রান তাড়ার শুরুতে তামিম যদিও ছিলেন খানিকটা অস্বস্তিতে। টাইমিং হচ্ছিল না ঠিকমতো। পাচ্ছিলেন না গ্যাপ। এক পর্যায়ে তার রান ছিল ৩০ বলে ৬!

তবে উইকেট ছুঁড়ে আসেননি। পড়ে থেকে লড়াই করেছেন। দারুণ সব শটে রান তুলে তামিমের কাজ সহজ করে দিয়েছেন সৌম্য।

জমে যাওয়ার পর তামিমও খেলেছেন শট। দুজনের জুটিতেই অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের রান তাড়া। ১৪৪ রানের জুটি গড়েন দুজন, দেশের বাইরে উদ্বোধনী জুটিতে বাংলাদেশের রেকর্ড।

আয়ারল্যান্ডে আসার আগে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ডাবল সেঞ্চুরি ও সেঞ্চুরি করে এসেছেন সৌম্য। সেই আত্মবিশ্বাসই প্রতিফলিত হচ্ছিল তার ব্যাটে। কোনো বোলারকে খেলতেই সমস্যা হয়নি তার। ৬৮ বলে ৭৩ করে আউট হলেন বাজে বলে। রোস্টন চেইসের যে শর্ট বলে সীমানায় ধরা পড়লেন, সেটি পাঠানোর কথা সীমানা ছাড়িয়ে বহু দূর।

সেঞ্চুরি হাতছাড়া করেছেন তামিমও। ১১৬ বলে ৮০ করে তিনিও আউট হয়েছেন নিবির্ষ বলে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলাদের প্রাপ্তি শেষ ওখানেই।

৬১ বলে ৬১ রানের অপরাজিত ইনিংসে সাকিব ফিরেছেন দলের জয় সঙ্গে নিয়ে। ব্যাটিং অনুশীলনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে মুশফিক অপরাজিত ২৫ বলে ৩২ করে।

জয়ের পর উচ্ছ্বাস-উল্লাসের লেশ মাত্র দেখা গেল না সাকিব-মুশফিক বা দলের উদযাপনে। সবই বলে দিচ্ছে, লক্ষ্য বড় কিছুর!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৫০ ওভারে ২৬১/৯ (হোপ ১০৯, আমব্রিস ৩৮, ব্রাভো ১, চেইস ৫১, কার্টার ১১, হোল্ডার ৪, ডাওরিচ ৬, নার্স ১৯, রোচ ১, কটরেল ৪*, গ্যাব্রিয়েল ০*; সাইফ ১০-১-৪৭-২, মাশরাফি ১০-০-৪৯-৩, মুস্তাফিজ ১০-০-৮৪-২, সাকিব ১০-০-৩৩-১, মিরাজ ১০-০-৩৮-১)।

বাংলাদেশ: ৪৫ ওভারে ২৬৪/২ (তামিম ৮০, সৌম্য ৭৩, সাকিব ৬১*, মুশফিক ৩২*; কটরেল ৭-০-৪৭-০, রোচ ৭-০-৩০-০, গ্যাব্রিয়েল ১০-০-৫৮-১, হোল্ডার ৪-০-২৭-০, নার্স ৭-০-৪৬-০, চেইস ১০-০-৫১-১)।

ফল: বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: শেই হোপ