সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামের প্রথম ওয়ানডে জয় দিয়ে রাঙাল মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। ৮ উইকেটের জয়ে ২-১ ব্যবধানে জিতে নিল সিরিজ। তামিম-সৌম্যর ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ১৯৯ রানের লক্ষ্য ৭৯ বল বাকি থাকতে পেরিয়ে গেল স্বাগতিকরা।
সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ওয়ানডেতে স্বাগতিকদের বোলিং ছিল দারুণ। বোলাররা লাইন-লেংথ হারিয়েছেন খুব কমই। আঁটসাঁট বোলিং করে যাওয়া স্বাগতিকরা খেলিয়েছে ১৭৯টি ডট বল। হোপের ৯ চার আর এক ছক্কার বাইরে এসেছে মোটে পাঁচটি চার ও একটি ছক্কা।
সফরকারীদের ইনিংসে নেই কোনো পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মারলন স্যামুয়েলসের ১৯। ছোট লক্ষ্য কোনো সমস্যায় ফেলতে পারেনি বাংলাদেশকে। দারুণ কাটানো একটি বছরে নিজেদের সবশেষ ওয়ানডেতে পেল অনায়াস জয়। জিতল টানা তৃতীয় সিরিজ।
আগের দুই ম্যাচে ব্যর্থ ইমরুল কায়েসকে বাদ দিয়ে মিডল অর্ডারে মোহাম্মদ মিঠুনকে ফেরায় বাংলাদেশ। টপ অর্ডারে ফিরেন সৌম্য। নিজের জায়গায় ফিরে বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান যেন ফিরে পান নিজেকে। শুরু থেকে খেলেন আস্থার সঙ্গে। দ্রুত জমে যায় তামিমের সঙ্গে তার জুটি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস-স্পিন কিছুই ভাবাতে পারেনি দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে। পরে নামা সৌম্য ফিফটির আগেই প্রায় ধরে ফেলেছিলেন তামিমকে। তবে দেশসেরা ওপেনারই প্রথমে পৌঁছান ফিফটিতে।
খানিক পর পঞ্চাশ ছোঁয়া সৌম্য ফ্যাবিয়ান অ্যালেনকে বিশাল দুই ছক্কা হাঁকিয়ে তামিমকে ধরে ফেলেন। পরে লেগ স্পিনার বিশুর এক ওভার থেকে ১৪ রান তুলে নিয়ে এগিয়ে যান অনেকটা।
দ্রুত ম্যাচ শেষ করার চেষ্টায় থাকা সৌম্যকে বোল্ড করে থামান পল। ভাঙেন ১৩১ রানের জুটি। এই জুটিতে সৌম্যর অবদান পাঁচটি করে ছক্কা-চারে ৮১ বলে ৮০, তামিমের ৭১ বলে ৪৯।
এর আগে হাবিবুল বাশারকে ছাড়িয়ে দেশকে সবচেয়ে বেশি ৭০ ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দেওয়ার রেকর্ড গড়া মাশরাফি শুক্রবার টস জিতে নেন ফিল্ডিং। শুরুতেই চন্দ্রপল হেমরাজকে ফিরিয়ে অধিনায়কের মুখে হাসি এনে দেন মিরাজ।
এক প্রান্তে হোপ যতটা আলো ছড়িয়েছেন অন্য প্রান্তে ততটাই বিবর্ণ ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং। তরুণ কিপার ব্যাটসম্যান খুব একটা সাহায্য পাননি কারোর কাছ থেকে।
দুই অঙ্ক ছোঁয়ার পর মিরাজের বলে বোল্ড হয়ে ফিরেন ড্যারেন ব্রাভো। হোপ-স্যামুয়েলসের ব্যাটে ২ উইকেটে ৯৬ রানের মোটামুটি ভালো একটি অবস্থানে পৌঁছায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
৩ রানের মধ্যে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে নিয়ন্ত্রণ দৃঢ় করে বাংলাদেশ। বোল্ড করে স্যামুয়েলসকে থামান রুবেল হোসেনের জায়গায় সুযোগ পাওয়া মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন।
১৪৩ রানে ৭ উইকেট হারানো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুইশ রানের কাছাকাছি নিয়ে যান হোপ। তাকে খানিকটা সঙ্গ দেওয়া পলকে বিদায় করেন মাশরাফি। বাংলাদেশ অধিনায়ক পরে তুলে নেন কেমার রোচের উইকেট।
সাকিবকে ছক্কা হাঁকিয়ে ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরিতে পৌঁছানো হোপ শেষ পর্যন্ত ১৩১ বলে অপরাজিত থাকেন ১০৮ রানে। হঠাৎ হঠাৎ নিচু হয় এমন মন্থর উইকেটে কিভাবে ব্যাটিং করা উচিত তার দারুণ এক প্রদর্শনী ছিল যেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানের ইনিংস।
বাংলাদেশের সব বোলারকেই সামলেছেন আস্থার সঙ্গে। একের পর এক সঙ্গী ফিরে গেলেও তেড়েফুড়ে মেরে খেলার প্রবণতা দেখা যায়নি তার মধ্যে। খেলেছেন বল বুঝে। নিজের জোনে পেলে তুলে নিয়েছেন বাউন্ডারি। টানা দুটি অপরাজিত সেঞ্চুরিতে হোপ জেতেন সিরিজ সেরার পুরস্কার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৫০ ওভারে ১৯৮/৯ (হেমরাজ ৯, হোপ ১০৮*, ব্রাভো ১০, স্যামুয়েলস ১৯, হেটমায়ার ০, পাওয়েল ১, চেইস ৮, অ্যালেন ৬, পল ১২, রোচ ৩, বিশু ৬*; মুস্তাফিজ ০/৩৩, মিরাজ ৪/২৯, সাকিব ২/৪০, মাশরাফি ২/৩৪, সাইফ ১/৩৮, মাহমুদউল্লাহ ০/১৪)
বাংলাদেশ: ৩৮.৩ ওভারে ২০২/২ (তামিম ৮১*, লিটন ২৩, সৌম্য ৮০, মুশফিক ১৬*; রোচ ০/১৬, চেইস ০/৩২, পল ২/৩৮, স্যামুয়েলস ০/২৫, বিশু ০/৪৮, অ্যালেন ০/২২, পাওয়েল ০/২১)
ফল: বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মেহেদী হাসান মিরাজ
ম্যান অব দা সিরিজ: শেই হোপ